ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ দুধ

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 নিরাপদ দুধ

দুধ শিশুর প্রধান খাদ্য, প্রবীণের শক্তির উৎস এবং রোগীর পথ্য। দুধ পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর। খাদ্য হিসেবে দুধের বিকল্প নেই। অতি প্রয়োজনীয় এই খাদ্যের ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ কম নয়। দুধে ভেজাল, তাতে নানা উপকরণের মিশ্রণ এবং দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি নিয়েই আমাদের এই উদ্বেগ। খোলা তরল দুধ হোক, প্যাকেটজাত তরল দুধ হোক কিংবা প্যাকেট ও টিনের গুঁড়ো দুধ হোক- কোন দুধেরই মান সম্পর্কে আমরা যেন নিশ্চিত হতে পারি না। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণায় দুধের মান সম্পর্কে যে সব তথ্য উঠে এসেছে তাতে উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ফুড ল্যাবরেটরি (এনএসএফএল) কিছুকাল আগে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যের মান নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল। ওই গবেষণায় দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যের মধ্যে অণুজীব, রাসায়নিক ও সিসা ইত্যাদির অস্তিত্ব পাওয়ার কথা জানা যায়। খোলা তরল দুধে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক সিসা ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেইসঙ্গে তাতে পাওয়া গেছে আফলাটক্সিন ও বিভিন্ন অণুজীব। প্যাকেটজাত তরল দুধেও অনুরূপ উপাদান লক্ষ্য করা গেছে। দইয়ের মধ্যেও পাওয়া গেছে সিসা ও অণুজীব। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেহে মাত্রাতিরিক্ত সিসা, আফলাটক্সিন ও কীটনাশক প্রবেশ করলে বিভিন্ন অঙ্গ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। দুধ নিয়ে নাগরিকদের এমন শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মাঝে সুখবর পাওয়া গেল। জাতীয়ভাবে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিরাপদ খাদ্য হিসেবে দুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড’ করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৯’ এর খসড়া তৈরি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। খসড়া আইন অনুযায়ী, ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যের মান নির্ধারণ করে দেবে। নমুনা পরীক্ষা করে মানহীন পণ্য পেলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেবে বোর্ড। মানহীন দুধ বা দুগ্ধজাতীয় পণ্য প্রস্তুত, মজুত ও বিপণনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যাবলী হবে- ব্যক্তিপর্যায়ে ও বাণিজ্যিকভাবে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে দুধ উৎপাদনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন। ডেইরিবিষয়ক বৈজ্ঞানিক, কারিগরি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার সুপারিশ। ডেইরি হেলথ, দুধ উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণে প্রণোদনা দেয়া ও প্রচার। এছাড়া দুগ্ধ খামার বা দুগ্ধ শিল্পাঞ্চল সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণ এবং দুধ উৎপাদন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ব্যক্তি বা সমবায়পর্যায়ে দুধ উৎপাদনে বোর্ড নির্ধারিত হারে সেবা ফি গ্রহণের মাধ্যমে ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এ বিষয়ে সমবায় ভিত্তিক উদ্যোগে সহায়তা, দুগ্ধ বাজার সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনা; দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যের মান যাচাইয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা এবং মানের ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা বোর্ডের কাজ। নিরাপদ দুধ প্রাপ্তির লক্ষ্যে ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড দেশে দুধ নিয়ে বিরাজমান সঙ্কট ও সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি। সফলতার জন্য সততা, দায়িত্বশীলতা ও অঙ্গীকারবোধের যে কোন বিকল্প নেই সেকথা বলাই বাহুল্য।
×