ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দেড় শ’ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে তিন স্থানে

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 দেড় শ’ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে তিন স্থানে

রশিদ মামুন ॥ দেশের পৃথক তিন স্থানে ১৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো হবে গ্রিড সংযুক্ত। দেশে নবায়নযোগ্য উৎসের সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রচেষ্টা পুরনো হলেও বায়ু বিদ্যুতে এটিই সব থেকে বড় উদ্যোগ। এর আগে বায়ু বিদ্যুতে দেশের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হতো। যদিও গতবছর থেকে এই ধারণার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। কেন্দ্র তিনটি হবে আইপিপি ভিত্তিক। চাঁদপুরের কচুয়া, কক্সবাজারের ইনানি এবং বাগেরহাটের মংলায় কেন্দ্র তিনটি স্থাপন করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রর ক্ষমতা হবে সমান ৫০ মেগাওয়াট। কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিডিবি বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি করবে। কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানই কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে। এখন দেশে বায়ু বিদ্যুত থেকে মাত্র দুই মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া ফেনীর সোনাগাজীতে একটি ভারতীয় কোম্পানি ৩০ মেগাওয়াটের উইনন্ডমিল বসাতে চাইছে। অন্যদিকে বিসিপিসিএল রিনিউবেল পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রর মধ্যে একটি ৫০ মেগাওয়াটের বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন শতভাগ নবায়নযোগ্য উৎসের জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। জীবাশ্ম জ্বালানি সঙ্কটের পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। এজন্য দেশগুলো সৌর বিদ্যুতের সমান হারে বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। যখন আকাশে সূর্য থাকে না বাতাসের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন বন্ধ হলে গ্রিড যাতে ঝুঁকিতে না পাড়ে সেজন্য বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ফলে এককভাবে সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদন করলে ভবিষ্যতে গ্রিড ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পিডিবি সূত্র জানায়, আমেরিকার ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) গত বছর বায়ু প্রবাহের রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে দেশের কিছু এলাকাকে বিদ্যুত উৎপাদনের উপযুক্ত বলে জানিয়েছে। এরপরই সরকার বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জোর দিয়েছে। বলা হচ্ছে সাধারণত ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার/ সেকেন্ড হলেই বায়ু বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। কিন্তু ৫ থেকে ৬ মিটার/ সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ হলে বিদ্যুত উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব। এখন আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে একটি টারবাইন দিয়ে ৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে এখন থেকে উদ্যোগ নেয়া জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। এনআরইএল গত বছর যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের বায়ুর প্রবাহ বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য উপযোগী। স্বাভাবিকভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। তবে এর পরিমাণ উপকূলে বাড়িয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট করা যেতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারতও তাদের দেশে ৩২ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এক হাজার ২০০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা রয়েছে সেখানে বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশের কুতুবদিয়া ও ফেনীতে বায়ু বিদ্যুতের দুটি পাইলট প্রকল্প চালু আছে। কুতুবদিয়ায় এক মেগাওয়াট করে দুটি এবং ফেনীতে এক মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কেন্দ্র রয়েছে। তবে এই পাইলট প্রকল্প দুটিই অনেক আগের পুরনো প্রযুক্তির। এখন উপকূলে সাগরের ২০ কিলোমিটার মধ্যেও অনেক দেশ বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুত গ্রিডে যোগ করছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনে অনেক দেশই আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদিও এখনও সরকার এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।
×