ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নদীর জন্য পদযাত্রা

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 নদীর জন্য পদযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার দেশের নদনদী রক্ষায় ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ করবে সামাজিক সংগঠনগুলো। আগামীকাল বিশ্ব নদী দিবসকে সামনে রেখে আজ শনিবার ৭০টির অধিক সামাজিক সংগঠন নদী পাড়ে এই কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে তারা দেশে নাগরিক সমাজকে সারাদেশের নদী পাড়ে এমন কর্মসূচী পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশ থেকে এসব সংগঠনের নেতারা পদযাত্রা শুরু করবেন। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে এই পদযাত্রা শেষ হবে। পদযাত্রা অনুষ্ঠানে বর্ণিল ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমবেত হবেন তারা। আয়োজকরা জানান ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ অনুষ্ঠানটি হবে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বেলুন, ফুল প্রভৃতি দিয়ে বর্ণিল ও উৎসবমূখর। সঙ্গে থাকবে দুটি তারুণ্য নির্ভর গান ও বাদ্যযন্ত্রী দল। বিশ্ব নদী দিবস পালনের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে তারা এই পদযাত্রা অনুষ্ঠান কর্মসূচী পালন করবেন। পরিবেশ সংগঠন বাপার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল মতিন বলেন, এবারের নদীরক্ষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বাংলাদেশের নদীকর্মী ও নাগরিক সমাজের নির্ধারিত প্রতিপাদ্য স্লোগানটি হচ্ছেÑ ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা, এর আইনী অধিকার নিশ্চিত করুন’। তিনি জানান, নদী রক্ষায় কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী ঢাকায় এই কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। তবে এককভাবে বা এলাকাভিত্তিক কোন বিশেষ নদী নিয়েও স্থানীয়ভাবে নাগরিক সমাজ ভিন্ন কোন কর্মসূচী পালন করতে পারবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নদীসমূহ সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সব নদীগুলোতে পাশের বড় বড় শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। বছরের পর বছর এসব কলকারখানা থেকে নদীতে ফেলা হচ্ছে দূষিত তরল বর্জ্য। এছাড়া গৃহস্থালি ও পয়োবর্জ্যরে শেষ ঠিকানা এই নদীগুলো। ফলে নদীগুলো এখন পরিণত হয়েছে আবর্জনা ফেলার খাল হিসেবে। অথচ এসব নদীকে কেন্দ্র করেই দেশে বড় শহর ও গঞ্জ গড়ে উঠেছে। এখন মানুষের ব্যক্তিগত উন্নয়নের স্বার্থে নদীগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে। দেখার কেউ যেন নেই। অথচ তারা বলছেন, নদী বাঁচাতে না পারলে পরিবেশে ভযানক বিপর্যয় হবে। একদা বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করেই ঢাকা শহরের গোড়া পত্তন হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা উন্নয়নের বিপরীতে সেই বুড়িগঙ্গা আজ অস্থিত্বহীন হয়ে পড়ছে। দেশে শহর অঞ্চলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ায় ২৮ নদী একইভাবে আজ দূষিত হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় নদীকে বাঁচাতে না পারলে মানুষের অস্থিত্বও হুমকির মুখে পড়বে। তারা বলেন, এখন সময় এসেছে নদীগুলো রক্ষা করতে সচেতন নাগরিক সমাজের এগিয়ে আসা। ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ সমগ্র অনুষ্ঠানটি হবে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বেলুন, ফুল প্রভৃতি দিয়ে বর্ণিল ও উৎসবমূখর। সঙ্গে থাকবে দুটি তারুণ্য নির্ভর গান ও বাদ্যযন্ত্রী দল। এতে আয়োজক বা আমন্ত্রিত সংগঠনসমূহের সদস্য-সমর্থক ও শুভান্যুধায়ীগণ, নদী ও পরিবেশ কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক কর্মী, ছাত্র-যুবা, পেশাজীবী, বেসরকারী সংগঠনের সদস্য-প্রতিনিধিগণ, নদী বিপর্যয়ের শিকার মাঝি, মৎস্যজীবী, সাধারণ মানুষ যোগদান করবেন। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক হিসেবে সারা দেশের বিভিন্ন নদী ও পরিবেশ সংগঠন (প্রায় ৭০টি) ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছেন। সবাইকে যুথবদ্ধ করে সমন্বিত ও সফল আয়োজন নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে দুই বছর আগেই একটি ‘বিশ্বনদী দিবস পালন পরিষদ, বাংলাদেশ’ গঠন করা হয়েছিল। এবারো তার সমন্বিত প্রস্তুতিতে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সারাদেশের সব নদীর পাড়ের নদী ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী এবং নাগরিকদের প্রতি আবেদন বাড়ির পাশের বা কাছের বা পছন্দের নদী রক্ষায় নদীর পাড়ে বা যেকোন স্থানে ছোট-বড় যেকোন আকারের জমায়েত করুন। নদীর সঙ্কট নিরসনে সঠিক করণীয় বা দাবিটি উত্থাপন করুন। যে কোন সংখ্যক মানুষই একটি নদী রক্ষার দাবি নিয়ে জমায়েত করতে পারেন। একটি পোস্টার নিয়ে যে কোন স্থানে দাঁড়ান। সেটিই হবে নদী রক্ষায় একটি ভাল পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের নদীগুলোর দ্রুত মারা যাচ্ছে। নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। কারণ নদী ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সকল প্রকার ব্যবসা-বাণিজ্য-উন্নয়ন-চলাচল-পরিবহন-অর্থনীতি-রাজনীতি-শিল্প-সাহিত্য-গান-সংস্কৃতির মূল চালিকা শক্তি। নদী যদি বিনষ্ট হয় তা হলে আমরা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হব। বিশে^র সব দেশই নদীর অভাবে বিপদাপন্ন হবে, তবে আমরা অনেক বেশি ও দ্রুত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সর্বোচ্চ সঙ্কটের দেশও বাংলাদেশ। অতএব নদী রক্ষা করতে চাই এটি বাংলাদেশের জন্য কোন মামুলি বিষয় নয় বা কথার কথা নয়। নদী রক্ষা আমাদের বেঁচে থাকার ও ভাল থাকার প্রধান চাবিকাঠি। অতএব নদী রক্ষার কাজ সাময়িক কোন কাজ নয়, প্রতিদিনের কাজ ও অবশ্যকরণীয় কাজ। নদী রক্ষার পাশাপাশি বিশ^ব্যাপী এটির স্বীকৃতি লাভও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। তারা বলেন, হাইকোর্টের ২০০৯ ও ২০১৯ এর নদী রক্ষায় দুটি যুগান্তকারী রায় ঘোষিত হয়েছে। এবার নদীর চরম গুরুত্ব নিশ্চিত করতে এবার হাইকোর্ট নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’, ‘আইনী সত্তা’ ও ‘আইনী ব্যক্তি’ হিসেবে ভূষিত করেছেন। সরকারী সকল দফতরকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার পরও গত ১০ বছরেও একটি নদীও পুরোপুরি উদ্ধার হয়নি। সরকার ইচ্ছে করলে নদী রক্ষা করতে পারেন। সারা দেশের নদীর পাড় দখলমুক্ত করণে সরকারী কিছু পদক্ষেপও দেখা গেছে। কিন্তু নদীর সীমানা পিলার সঠিক স্থানে না বসিয়ে নদীর ভেতরে মধ্যে স্থাপন, বার বার বলার পরও একটি ভুল পিলারও সরানো হয়নি। ফলে সরকারী এসব ‘একশন’ বাস্তবে ও শেষ বিচারে অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। তার ফলে, সরকার না চাইলেও নদী দখল কাজ হালাল হয়ে যাচ্ছে।
×