ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে নেই ট্রাক টার্মিনাল ॥ যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

টাঙ্গাইলে নেই ট্রাক টার্মিনাল ॥ যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলে ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ট্রাক পরিবহনের মালিক শ্রমিক ও পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিরা। ট্রাকের মালিক ও শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে টার্মিনাল নির্মানের জন্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের কাছে দাবি করে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাজনৈতিক মহলের সদিচ্ছা ও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে টাঙ্গাইলের মতো বিশাল একটি জেলায় নির্মিত হয়নি ট্রাক টার্মিনাল। ফলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় শহরে যানজট বাড়ছে। আবার গাড়ি অবৈধভাবে পার্কিংয়ের কারণে পুলিশী হয়রানীরও শিকার হতে হচ্ছে এসব চালকদের। টাঙ্গাইল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সুত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে ড্রাম ট্রাক, মিনি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ছোট-বড় মালবাহী ট্রাক মিলিয়ে প্রায় চার হাজার ট্রাক রয়েছে। এসব ট্রাক রাখার নির্ধারিত কোন স্থান নেই। স্টেডিয়াম এলাকা, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের সামনে, গোডাউন ব্রিজ, রাবনা বাইপাস, নগড়জলফই, ছয়আনি পুকুড়পাড়, বেবীস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন রাস্তার উপড়ে মাল বোঝাই ট্রাক রাখা হয়। পণ্য বোঝাই ও খালাস করতে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজটের। শহরের মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ট্রাক রাখায় ছোট ছোট কমলমতি শিশুদের স্কুলে যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দুর্ঘটনায় পড়ার আশংকাও রয়েছে তাদের। এছাড়াও টাঙ্গাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবৈধভাবে মিনি ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়। চালক ও সহকারিরা জটলা বেঁধে গেটের সামনে বসে থাকে। ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে চরম সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসব ট্রাক সড়িয়ে নেয়ার জন্য তাদের জানালেও কোন লাভ হয়নি। ট্রাক চালক সুলতান মাহমুদ বলেন, টার্মিনাল না থাকাতে রাস্তাঘাটে গাড়ি রাখতে হয়। আমাদের বিশ্রামের কোন জায়গা নেই। পয়নিস্কাশন, গোসল ও নামাজের কোন স্থান নেই। রাস্তায় গাড়ি রাখলে পুলিশ এসেই মামলা দেয়। পুলিশ বিভাগে চাকুরী করতেন এসএম নজরুল ইসলাম। অবসর শেষে একটি ট্রাক কিনে ব্যবসা শুরু করেছেন। ট্রাকটির চালক তিনি নিজেই। ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, টার্মিনাল না থাকায় বিভিন্নস্থানে গাড়ি রাখতে হয়। গাড়ির ব্যাটারী, যন্ত্রপাতি ও তৈল প্রায়ই গাড়ি থেকে চুরি হয়ে যায়। শ্রমিকদের বসার কোন জায়গা নেই। চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ট্রাক চালকদের। তার প্রশ্ন, এসব দেখার কি কেউ নেই। ট্রাক মালিক জহুরুল ইসলাম বলেন, টার্মিনাল না থাকায় জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে টাকা দিয়ে গাড়ি স্টেডিয়ামের পাশে গাড়ি রাখতে হয়। এখানে গাড়ি রাখা নিরাপদ নয়। টার্মিনাল না থাকায় বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে গাড়ি রাখতে হচ্ছে। টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বালা মিয়া বলেন, টার্মিনালের দাবি নিয়ে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছি। জেলার আইনশৃংখলা ও যানজট নিরসনকল্পে আরডিসির সভায় ট্রাক টার্মিনালের জন্য একাধিকার দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক নুরুল আমীন মিঞা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে টার্মিনালের জন্য স্থান নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রতিবেদনটি আর আলোর মুখ দেখেনি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছার অভাবেই টার্মিনালের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি আকবর আলী দেওয়ান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টার্মিনালের দাবি করে আসছি। টার্মিনাল না থাকায় আমাদের শ্রমিকরা খুবই অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। মাঝে মধ্যেই গাড়ি চুরি অথবা ছিনতাই হচ্ছে। বিভিন্নস্থানে গাড়ি পার্কিং করায় প্রতিদিন প্রায় একশ থেকে দেড়শ গাড়িতে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে শ্রমিকদের। টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, শ্রমিক ও মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি ট্রাক টার্মিনালের। রাস্তার উপরে গাড়ি পার্কিং করে রাখায় যানজট এড়াতে ওই গাড়ি সরিয়ে দিতে হয়। দেখা যায় রাস্তার উপর পণ্য খালাস করছে। ফলে মামলা দিতেই হয়। হয়রানীর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি জামিলুর রহমান মিরন বলেন, টাঙ্গাইলের ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা ঠিকানাবিহীন। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে টার্মিনালের দাবি করে আসলেও তাদের সদিচ্ছার অভাবে তা হচ্ছে না। সাবেক জেলা প্রশাসক কাওছার জহুরা ট্রাক ও বাস টার্মিনালের জন্য শহর বাইপাস রাবনায় ১৭ একর জায়গা গণপুর্তের কাছ থেকে এক নং খাস খতিয়ানে এনেছিলেন। তিনি বদলী হয়ে যাওয়ায় প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। বিগত দিনে যেসব জেলা প্রশাসক এসেছেন প্রায় সবার কাছেই মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে টার্মিনালের জন্য সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়েছে। কিন্ত আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে বর্তমানে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, ট্রাক টার্মিনালের জন্য বাইপাস এলাকায় সম্ভবত পাঁচ একর জায়গা বন্দোবস্ত করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×