ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরে কনে যাত্রী হয়ে বর এনেছে,সোশাল মিডিয়া সরগরম

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মেহেরপুরে কনে যাত্রী হয়ে বর এনেছে,সোশাল মিডিয়া সরগরম

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামে কনে বরযাত্রী সহকারে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে বিয়ে করে বর নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ঘটনায় আবাক হয়েছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে বেশ সরগরম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। দীর্ঘ দিনের ধারাবাহিকতা ভেঙ্গে বরের বাড়ি বিয়ে করতে কনের এ যাত্রার বিষয়ে নানা মন্তব্য করছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কেউ আবার অতি আগ্রহ নিয়ে বিষয়টিকে সাধুবাদও জানিয়েছেন। ব্যাতিক্রমি এ ঘটনা জন্ম দিচ্ছে নানা ধরনের মুখরোচক গল্পেরও। গতকাল চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের কলেজে স্নাতকের অধ্যয়নরত মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি তার পরিবারসহ কনে যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে আসেন মেহেরপুরে। গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে বিয়ে করেন কনে খুশি। বিষয়টি দেখতে বরের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমতে থাকে। দুপুরে কনে যথারীতি বরের বাড়িতে সাতটি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল সহকারে ৬০ জন কনে যাত্রী সহকারে হাজির হন বরের বাড়িতে। বিয়ের নিয়মে কোন ঘাটতি ছিলনা। প্রথা অনুয়ায়ী প্যান্ডেল, গেটসহ ভূরি ভোজের সকল আয়োজন করেছেন বর পক্ষের লোকজন। গেটে ফিতা কিটে বিয়ের আনুষ্ঠানিকাত শুরু করেন কনে। সেই সময় বরের মত করে কনেকে মিষ্টি মুখও করানো হয়। বরযাত্রীর স্থলে সাজানো প্যান্ডেলে ভুরিভোজ করেছেন কনে যাত্রীরা। শেষে বর-কনে বিয়ে সম্পন্ন হলে বরকে নিয়ে তাঁর বাড়ি ফেরেন বিয়ের কনে। এ ঘটনায় প্রথাগত বিয়ের সকল আয়োজন থাকলেও ব্যাতিক্রম শুধু কনে বরের বাড়িতে বিয়ে করতে যাওয়া। এ বিষয়ে পৌর কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘বর মনে হয় ঘরজামাই থাকতে ইচ্ছুক। তা নাহলে কনে কেন বিয়ে করতে আসবে। প্রথা ভেঙ্গে কোন কাজ করতে হলে বিষয়টি সকলের নিকট পরিস্কার করা উচিৎ। তা না হলে সোশাল মিডিয়ার যুগ। ফেসবুকে নানা মন্তব্য করছে মানুষ যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। ওই ঘটনায় ভালোর পরিবর্তে সমালোচনাই হচ্ছে বেশি। গাংনীর স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘বর-কনে পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটা নারী স্বাধীনতার প্রকাশ। তাহলে ওই বিয়ের দিন কনে কী বরকে দেন মোহর দিয়েছেন? সন্তান হলে উভয়েই কী গর্ভে ধারণ করবেন? সংসারের নিয়ন্ত্রণ কে করবে? এমন নানা প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।’ এ বিষয়ে কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, ‘নারী-পুরুষের সমান অধিকার বিষয়টি মানলে সকলে আর সমালোচনা করবে না। ঘটনাটি প্রথম বিধায় নানা সমালোচনা হচ্ছে। তবে আমাদের উভয়ের পরিবারের সম্মতিতে এ বিয়ে হয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িতে বিয়ের অনান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে আমার বরের বাড়িতেই ফিরে যাব। ঘর জামাই থাকতে আসেনি আমার বর।’ বর তরিকুল ইসলাম জয় বলেন, ‘বিয়েতে সবাই কনের বাড়িতে যায় আমার বিয়েতে কনে এসেছে বিয়ে করতে। আমিতো বেশ ভালই উপভোগ করেছি। কনেকে দেন মোহর আমিই দিয়েছি। আমি ঘর জামাই থাকতে নয় কনেকে আমার বাড়ি নিয়েই ঘর সংসার করব। আমার বাবা ও কনে পক্ষের লোকজন মিলে আমাদের বিয়ের ব্যাতিক্রমি কিছু করার লক্ষে এ আয়োজন। অন্যায় তো কিছু করিনি। এ বিয়েতে উভয় পক্ষের লোকজন খুবই খুশি হয়েছে। কারন বিয়ে উপলক্ষে বরের বাড়ি বৌভাত ও কনের বাড়ি বরযাত্রী ভাত অনুষ্টিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের সকল অনুষ্ঠানই হচ্ছে। তাতে সমস্য কী?’ বরের পিতা কমরেড আব্দুল মাবুদ বলেন, ‘নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। মুখে আমরা বললেও তা বাস্তবায়ন করছি কতটুকু? তাই আমি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি সামনে আনতে চেয়েছি। এটা সবে শাত্র শুরু। আস্তে আস্তে দেখবেন এমন আয়োজন অনেকেই করছে। তখন আর মানুষে কিছু বলবে না।’ নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী নার্গিস পারভীন বলেন, ‘প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে কনে বরের বাড়ি বিয়ে করতে যাওয়ার ঘটনা আমাদের খুবই আনন্দ দিয়েছে। এখানে অধিকার-অনধিকারের কোন বিষয় নয়। অন্যায় তো কিছু হয়নি। এ বিয়ের ঘটনায় উভয় পরিবারসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা খুশিই হয়েছে। আমরা এখন দোয়া করব তারা যেন সুখি হয়।’
×