ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল বড়ুয়া রাহুল

সোনার বাংলার স্বপ্নসারথী

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 সোনার বাংলার স্বপ্নসারথী

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নসারথী শেখ হাসিনার জন্ম। বাইগার নদীর তীরে গ্রামবাংলার স্নিগ্ধ শ্যামল প্রকৃতির স্নেহধন্যে সাধারণ মানুষের মাঝেই কাটে তার শৈশব। ১৯৫৪ সালে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। প্রথমে পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেন, তার পর মিন্টো রোড এবং সব শেষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ঐতিহাসিক বাড়িতে বসবাস করেছেন পরিবারের সঙ্গে। টুঙ্গিপাড়ায় শুরু করলেও ঢাকায় টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়, আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়, বকশীবাজারে তৎকালীন ইন্টারমিডিয়েট গবর্নমেন্ট গার্লস কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নেন। শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনের সক্রিয় নেত্রী। একাত্তরে গৃহবন্দী, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাত্রিতে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাতবরণ করলেও পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরবর্তী ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লীতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বাংলার মাটিতে। ১৯৭৫ সালের জুন মাস বিদেশ সফরে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনার সব ছিল। ফিরেছিলেন সব হারানোর বেদনা, বুকের ভেতর একরাশ হাহাকার নিয়ে। বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে আসা ১৫ লাখের অধিক মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বুঝেছিলেন, সামনের দিনগুলোতে এই নিঃস্বার্থ লাখো মানুষই হবে তাঁর পথচলার অনুপ্রেরণা। গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও বার বার গৃহবন্দী, ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ, ২০০১ সালের পর ফের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম, কারামুক্তি শেষে ‘দিন বদলের সনদ’ দিয়ে দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন পান ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ২০০৯ সালের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। সেই দায়িত্ব তিনি এখনও পালন করে চলেছেন। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্রে উত্তরণের পর ১৯৯৬ সালে ১ম বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ধারা প্রবর্তন করে জাতিকে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাংলার মানুষের শান্তি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির বীজ বপন করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করছিলেন। পূর্বসূরির গৌরবময় সাফল্য গাথার মতো, ১ম মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার বেশ কয়েকটি স্মরণীয় সাফল্য এনে দিয়েছিলেন দেশকে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাহাড়ী জনপদে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন। ২০১৯ সালে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার অর্থনীতি, অবকাঠামো, কূটনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের মধ্যদিয়ে সাফল্যের সঙ্গে টানা তৃতীয় মেয়াদ অতিক্রম করতে চলেছেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন দেশকে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও বহু আগে তিনি তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়িয়েছেন এ দেশের দুর্যোগে দুঃসময়ে কাতর সাধারণ মানুষকে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই বাবার মতো ছুটে গিয়েছেন দুঃখী মানুষের পাশে। একইসঙ্গে সুযোগ পেলেই লিখেছেন তাদের দুঃখের কথা। ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘ওরা টোকাই কেন ’, ‘যেতে হবে অনেক দূর’, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কিছু চিন্তা-ভাবনা’, ‘জনগণ এবং গণতন্ত্র’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম’, ‘গণমানুষের উন্নয়ন’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সাদাকালো’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ এমন অনেক বইয়ের লেখক তিনি। মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দরদের প্রতিফলন আরও স্পষ্ট করে দেখা গেল ২০১৭ সালে যখন প্রায় এগারো লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়ে। আজ অব্দি তিনি তাদের মায়ের স্নেহে বাঁচিয়ে রেখেছেন। একাত্তরে ইন্দিরা গান্ধী যেমন আমাদের দেশের শরণার্থীদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার মানবিকতার পরশ দিয়ে এসব দুঃখী মানুষের দুঃখমোচন করে চলেছেন। তাই জাতিসংঘ ও বিশ্বের নানা সংগঠন থেকে তিনি বহু পুরস্কারে সিক্ত। অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানীয় ডি-লিট উপাধি। ইতোমধ্যেই বিশ্ব মিডিয়ার ভাষ্যে ‘দ্য ভিশনারি লিডার শেখ হাসিনা’ ‘একজন নেতা যিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, স্বপ্নপূরণ করেন’। জাতীয় তথ্য বাতায়নের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একটানা প্রায় ১১ বছরে বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, বিদ্যুত উৎপাদন, পুষ্টি, মা এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আর্থ-সামাজিক সূচকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে। এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে। গত বছর জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিপত্র দিয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সব হারানোর বেদনা বয়ে বেড়ানো স্বপ্নচারী এক নারীর বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস আজকের বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মিশনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। দেশে আমিষজাতীয় খাবারের উৎপাদন বৃদ্ধি, মাছ, শাক-সবজি উৎপাদনে বিশ্বে ৩য় ও ৪র্থ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের তালিকায় পোশাক শিল্পের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে জাহাজ, ওষুুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, কক্সবাজার এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, পায়রাবন্দর, পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়ন, রাজধানীতে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, রামপাল বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইন প্রকল্প, এয়ারপোর্ট রোডের সৌন্দর্যবর্ধন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কওমি মাদ্রাসার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে কারিকুলাম পাল্টে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা, গ্রামে শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, দেশের সম্ভাবনাময় আইটি খাতের উন্নয়নে সারাদেশে অসংখ্য হাইটেক পার্ক সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা নারী, স্পীকার নারী, ডেপুটি নেতা নারী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী। আর্মি, পুলিশ, সিভিল প্রশাসনের শীর্ষে নারী, শিক্ষায় তো মেয়েরা ছেলেদের যোজন যোজন পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার পর নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রথম নারীদের বিচারকের আসনে বসার সুযোগ করে দেন। ১৯৮১ সালের সেই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার দেশে ফেরার তাৎপর্য এখন কাউকে দেখিয়ে দিতে হয় না। এই চার মেয়াদে শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের অর্জন পূর্ববর্তী সরকারগুলোর অর্জনকে যে ছাড়িয়ে গেছে তা এখন বিশ্ববাসী স্বীকার করে। উন্নত দেশের জি-৭ ক্লাব শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শুনেছেন তাঁর দেশের উন্নয়নের গোপন রহস্যের কথা। শেখ হাসিনার মহানুভবতায় মুগ্ধ বিশ্ব গণমাধ্যম। নেদারল্যান্ডসের প্রথিতযশা পত্রিকা ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘শেখ হাসিনা : দ্য মাদার অব হিউম্যানিটি’ শিরোনামে কভার স্টোরি প্রকাশ করেছে। বিশ্বের অসংখ্য প্রভাবশালী গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অফ হিউমিনিটি’ এবং ‘নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট’ অভিধায় ভূষিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পর তার কন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির দিকে। আমরা মনে করি, এশিয়া মহাদেশের সাফল্যের এক অসাধারণ গল্পের নাম হবে বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা যেতে পারবেন আরও অনেকদূর। কারণ, তিনি সোনার বাংলার স্বপ্ন সারথী। লেখক : ছাত্র নেতা, চট্টগ্রাম মহানগর [email protected]
×