ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফির পর সাকিবের পালা

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 মাশরাফির পর সাকিবের পালা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণ বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশেষ করে টি২০ ক্রিকেটে যেন ভীতিটা আরও সাঁড়াশির মতো চেপে বসে। তাই টানা ৪ ম্যাচ হারতে হয়েছিল আফগানদের বিপক্ষে। অবশেষে সাড়ে পাঁচ বছর পর তাদের বিপক্ষে জয় এসেছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে। আফগানদের বিপক্ষে নামলেই যে মনস্তাত্ত্বিক বাধায় হেরে যেত বাংলাদেশ। সেই ‘জুজু’ কেটে গেছে শনিবার সাকিবের ৪৫ বলে ৮ চার, ১ ছক্কায় করা ৭০ রানের সুবাদে, অবশেষে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে ফিরতি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। এদিন দলীয় সাফল্য এনে দেয়ার পাশাপাশি নতুন দুই অর্জন যোগ হয়েছে সাকিবের ক্যারিয়ারে। বাংলাদেশের জার্সিতে তিনি এখন সর্বাধিক আন্তর্জাতিক টি২০ রানের মালিক। আর বোলিং করার সময় ১ উইকেট নিয়ে টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ বোলার হিসেবে ৩৫০ উইকেটের মালিক হয়েছেন সাকিব। এবার মাশরাফি বিন মর্তুজার পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে আরেকটি বহুজাতিক সিরিজের শিরোপা উপহার দেয়ার সুযোগ তার সামনে। তবে মাশরাফি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন বাংলাদেশকে দেশের বাইরে। এবার সাকিবের সেটি দেশের মাটিতে টি২০ সিরিজে করে দেখানোর পালা। আফগান স্পিনারদের মোকাবেলা করাটাই যেন সবচেয়ে দুরূহ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য। এমনকি একটি টেস্ট খেলতে নেমে আফগান স্পিনারদের কাছেই নতি স্বীকার করেছে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। সেই ম্যাচে লেগ স্পিনার রশিদ খান একাই নাস্তানাবুদ করেছেন বাংলাদেশকে। তবে শনিবারের ম্যাচটিতে রশিদের বিপক্ষেও অন্যদের ভীতি কাটিয়ে দিয়েছেন সাকিব নিজেই। তার এক ওভারে ১৮ রান তুলে নিয়েছেন। অথচ ১৪তম ওভারে রশিদ বোলিং করতে এসেই আগের দুই ম্যাচে বড় ইনিংস খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে শিকার করেন। পরের ওভারেই উদীয়মান আলোচিত তারকা আফিফ হোসেন ধ্রুবকেও তুলে নেন তিনি। অথচ ম্যাচে বোলিং করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় রশিদ এত পরে বোলিং করতে এসেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ দলকে বিপাকে ফেলেন। কারণ বাকি ৪ উইকেটে ২৪ বলে ৩৪ রানের প্রয়োজন তখনও। তারপরই ইনিংসের ১৮তম ওভারে সাকিব আক্রমণ করে তা-ব চালান রশিদের ওপর। এতেই জয় আসে। সাড়ে ৫ বছর পর আবার আফগানদের টি২০ ম্যাচে হারানোর স্বাদ পায় বাংলাদেশ দল। এর মাঝে টানা ৪ ম্যাচ তাদের কাছে হারের লজ্জাবরণ করতে হয়েছে। এই ম্যাচটির আগে দলের টানা ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হচ্ছিল সাকিবকেই। কারণ ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক বিশ্বকাপ কাটানোর পর খরা শুরু হয়েছিল। তারচেয়ে বড় কথা তার নেতৃত্বে আফগানদের কাছে টেস্ট হারের তিক্ততা লাভ করা বাংলাদেশ দল ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচেও হেরে যায়। অনেকেই তখন বলাবলি করছিলেন সাকিবের নেতৃত্ব দিয়ে চলবে না। কিন্তু সেই সাকিবই হয়ে গেলেন জয়ের নায়ক। একাই জেতালেন দলকে। বল হাতে দারুণ মিতব্যয়িতা দেখিয়েছেন, ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। তার ১২টি বলেই কোন রান নিতে পারেনি আফগান ব্যাটসম্যানরা। শনিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে মোহাম্মদ নবীকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। এতে করে সবধরনের স্বীকৃত টি২০ ম্যাচ থেকে ৩৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এ গৌরব অর্জন করেন তিনি বিশ্বের চতুর্থ বোলার হিসেবে। স্বীকৃত টি২০ ক্রিকেটে উইকেট শিকারের দিক থেকে সবার ওপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো। তিনি ৪৫০ ম্যাচে ৪৯০ উইকেট নিয়েছেন। এরপর আছেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা ২৮৬ ম্যাচে ৩৮৫ উইকেট নিয়ে। তৃতীয় অবস্থানে ক্যারিবীয় স্পিনার সুনীল নারাইন ৩৩৩ ম্যাচে ৩৭৬ উইকেট নিয়ে। এরপরই এখন সাকিবের অবস্থান ৩০২ ম্যাচে ৩৫০ উইকেট নিয়ে। তবে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে ৯২ উইকেট নিয়ে তিনি এখন মালিঙ্গা (১০৪) ও পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির (৯৮) পরেই তার অবস্থান। পরে ব্যাটিংয়ে নেমেও দুর্দান্ত ইনিংসটি খেলে আরেকটি অর্জনের মালিক হয়ে যান সাকিব। ছাড়িয়ে যান বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে সর্বাধিক রানের মালিক তামিম ইকবালকে। ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে ৭২ ম্যাচে সাকিবের রান ছিল ২৩.৩৪ গড়ে ১৪৭১। আর তামিমের রান ছিল ৭৫ টি২০ ম্যাচে ২৩.০৪ গড়ে ১৬১৩ রান। তবে তামিম ৪টি ম্যাচ বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলেছেন এবং ৫৭ রান করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমের রান ৭১ ম্যাচে ১৫৫৬। সেদিক থেকে তামিমকে ছাড়িয়ে যেতে সাকিবের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮৬ রানের। ক্যারিয়ারের নবম আন্তর্জাতিক টি২০ অর্ধশতক হাঁকিয়ে সতীর্থের অনুপস্থিতিতে তাকে ছাড়িয়ে যান সাকিব। এখন সাকিবের রান ৭৬ আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে ২৩.৭৪ গড়ে ১৫৬৭। আর এই ইনিংসটি খেলার পর সাকিব বলেছেন, ‘রান পাচ্ছিলাম না কয়েকটা ম্যাচে। তবে কখনও অনুভব করিনি যে ফর্মে নেই আমি। জানতাম এটা শুধু সময়ের ব্যাপার, যতক্ষণ উইকেটে থাকতে পারব রান আসবে। তাই শুরুতে আমি সেট হওয়ার চেষ্টা করেছি। ১৫/২০ বল পর নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি।’ এখন সার্বিকভাবেও তামিমকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পালা সাকিবের। সে জন্য প্রয়োজন আর মাত্র ৪৭ রানের। ফাইনালে আরেকটি মাইলফলক হাতছানি দিচ্ছে তাকে। বাংলাদেশ দলকে প্রথম বহুজাতিক সিরিজের শিরোপা জিতিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। তবে সেটি ছিল ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে হওয়া সেই সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ দল। এবার বহুজাতিক টি২০ সিরিজে প্রথম শিরোপা জয়ের সুযোগ। মাশরাফির পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে সেই ট্রফি ছুঁতে হলে আরেকবার আফগানিস্তানকে হারাতে হবে সাকিবের দলকে। গত বছর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ায় সাকিব প্রথম বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে কোন শিরোপা জেতার গৌরব এনে দিতে পারেননি। আর দেশের মাটিতে তো কোন শিরোপাই আসেনি। দেশের মাটিতে ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১২ ওয়ানডে এশিয়া কাপ, ২০১৮ সালের ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ এবং ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেও শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে। সাকিব সেই খরা ঘোচাতে পারবেন?
×