ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুমকির মুখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হুমকির মুখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জলবায়ু পরিবর্তন, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাট করে করে বাড়ি, পুকুর নির্মান, মাছের ঘের তৈরি, কৃষি জমিতে উচ্চমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, স্লুইজগেট দিয়ে বিলাঞ্চলে সময়মত পানি না উঠানোর কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত বরিশালের উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার লাল শাপলার বিল হুমকির মুখে পরেছে। ফলে গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে বিলাঞ্চলে এবার অনেক কম শাপলা ফুটেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বোরো মৌসুমে কৃষকদের ধান কাটার পর বর্ষায় স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীরা বিলে মাছ চাষ করেছেন। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং সময়মতো স্লুইজগেট খুলে না রাখায় বিলে পানি উঠতে পারেনি। এছাড়াও বিলে গ্রাস কার্প জাতীয় মাছ চাষ করা হয়েছে। ফলে ধারনা করা হচ্ছে এসব কারনেই চলতি মৌসুমে শাপলা কম ফুটেছে। তবে আরও কয়েকদিন পর বিলে শাপলা বৃদ্ধি পাবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পর্যটকদের সমস্যা ॥ বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানিয়েছেন, লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় মূলত ভোরের সূর্য ওঠার পর থেকে সকাল আটটা কিংবা নয়টা পর্যন্ত। কিন্তু সকালে দুরদুরান্ত থেকে এসে ফুটন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পর্যটকদের সুবিধার্থে বিলাঞ্চলের আশপাশে ভাল মানের রিসোর্ট থাকলে সহজেই দুরদুরান্তের লোকজন এসে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া পর্যটকদের জন্য এখানে নেই কোন ওয়াশরুম কিংবা ভালমানের খাবার দোকানের ব্যবস্থা। শাপলার বিলে ঘুরতে আসা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী বাবু ও সাংবাদিক এসএম মিজান জানান, গত বছরের ন্যায় এবছরও বন্ধুদের নিয়ে তারা শাপলার বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর শাপলা কম হওয়ায় তারা অনেকটা হতাশ। তারা বলেন, প্রশাসনের উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে লাল শাপলার এ বিলকে সংরক্ষণ করা না হলে অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে পর্যটন সম্ভাবনাময় লাল শাপলার নৈসর্গিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের বিলাঞ্চল। পর্যটকরা পরিকল্পিতভাবে বিলে শাপলা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি করেন। সরেজমিনে উজিরপুর উপজেলার মুড়িবাড়ি, কালবিলাসহ একাধিক স্পট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সূর্য ওঠার আগেই ছুটে আসছেন পর্যটকরা। পর্যটকদের লাল শাপলা বিল ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য সারি সারি নৌকা বেঁধে রেখেছেন স্থানীয় মাঝিরা। প্রতি নৌকা চার’শ টাকায় ভাড়া নিয়ে কয়েক ঘন্টা পরিবারের সদস্যের নিয়ে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করে লাল শাপলা নিয়ে ছবি ও সেলফিতে মেতে উঠছেন পর্যটকরা। সূত্রমতে, এক সময় বিলাঞ্চলের সাথে উপজেলা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা দূর্গম হওয়ায় স্বচোখে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হতেন পর্র্যটকরা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের রূপকার মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র ছোয়ায় বিলাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে ওঠে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেকারনে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার লাল শাপলার বিল পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট হিসেবে। ফলে বিলাঞ্চলের লাল শাপলাকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে। এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু বলেন, সাতলার শাপলা বিলকে পর্যটকবান্ধব করতে ইতোমধ্যে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। লাল শাপলার বিলকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করতে অতিসম্প্রতি বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরও জানান, সাতলার শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের জন্য কালবিলা নামক এলাকায় ছোট্ট পরিসরে একটি আবাসন নির্মাণের স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বিলে শাপলা বৃদ্ধির ব্যাপারে চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলার উন্নয়ন সমন্ময় সভায় তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরবেন।
×