ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হিমাগারে আলুর স্তূপ

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হিমাগারে আলুর স্তূপ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নতুন মৌসুম শুরুর আগে এখনও রাজশাহীর হিমাগারগুলোয় পড়ে আছে আলুর স্তূপ। বাজারে মূল্যহ্রাসের কারণে ব্যবসায়ীরা হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বাজারজাতের সাহস পাচ্ছেন না। এখন আলুর যে দাম তাতে বাজারজাত করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে রাজশাহীর চাষী ও ব্যবসায়ীদের। এ আগামী মৌসুমে রাজশাহীতে আলু চাষে কৃষক আগ্রহ হারাবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় ৩২ হিমাগারে প্রায় ৬২ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে লোকসান গুনে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩১ লাখ বস্তা। বর্তমানে রাজশাহীর এসব হিমাগারে আরও ৩১ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষিত আছে (প্রতিবস্তা ৬০ কেজি)। এখন বাজারে হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর প্রতি কেজি উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রি হচ্ছে তিন টাকা কমে। আর প্রতি বস্তায় লোকসান হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা। আলু রাজশাহীর অর্থকরী ফসল। ধানের পরেই ব্যাপকভাবে আলুর আবাদ হয়ে থাকে। লাভ-লোকসানের মধ্যে দিয়েই আশায় বুক বেঁধে আলুর আবাদ করেন চাষীরা। তবে গেল কয়েক বছর ধরেই আলুতে লোকসান গুনছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষীরা। তারপরও বরেন্দ্র খ্যাত এই অঞ্চলে আলু চাষের পরিধি ও উৎপাদন বেড়েছে। টানা তিন বছর থেকে আলুতে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষী ও ব্যবসায়ীদের। এ কারণে হিমাগার থেকে নেয়া ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে চাষী ও ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে আলুর আবাদের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এখন আর প্রান্তিক চাষীদের নেই। এখন চাষী কাম ব্যবসায়ীরাই আলুর আবাদ করছেন। কিন্ত ক্রমাগত লোকসান গুনতে গুনতে অনেকটায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষীরা। জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের নুড়িয়াক্ষেত্র এলাকার বাণিজ্যিক আলু চাষী মোবারক হোসেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে বাণিজ্যিক আলু চাষ করছেন তিনি। গেল বার ৫০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে উৎপাদিত আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। মৌসুমের শুরুতেই তিনি আলু বিক্রি করে দেন। এতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। মোহনপুর উপজেলার চাষী নুরুল ইসলামের এখনও হিমাগারে অবিক্রিত আলু আছে প্রায় ১১ হাজার বস্তা। বর্তমান বাজারে এগুলো বিক্রি করলে তার প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হবে বলে জানান তিনি। এই চাষী জানান, প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদন হয় প্রায় ৪ টন। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার। বর্তমান দামে আলু বিক্রিতে চাষীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিন বছর আগে আলু চাষ করে পুঁজি হারিয়েছে। পরের বছর উঠেছে উৎপাদন খরচ। এবার লাভের আশা দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্যে হতাশায় পড়েছেন তিনি। আলু চাষে রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত পবা উপজেলার বড়গাছি এলাকার চাষী রহিমুদ্দিন সরকার বলেন, কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীতে আলু চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাছাড়া উন্নতমানের আলু বীজ ব্যবহার করছেন চাষীরা। আর এতেই বাম্পার ফলন মিলছে। তবে প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণের অভাবে আলুর নায্য দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। এ অবস্থায় আলু রফতানির উদ্যোগ নিলে কিছুটা হলেও লোকসান কমত কৃষকের। রাজশাহী জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান লোকসানের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এবার একদিকে বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে এবং অন্যদিকে উৎপাদনও ভাল হয়েছে। দেশের অনেক জেলাতেই আলুর আবাদ হওয়ায় রাজশাহীর চাষীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। চাষীরা দাম না পেলে আমাদের দুশ্চিন্তাও বেড়ে যায়। কারণ তাদের সঙ্গে প্রতিটি হিমাগার কর্তৃপক্ষের লেনদেনের বিষয়টি জড়িয়ে আছে। রাজশাহী জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি আবু বাক্কার আলী জানিয়েছেন, মোট উৎপাদিত আলুর প্রায় ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ হয় হিমাগারে। জেলায় ৩২টি হিমাগারের প্রত্যেকটিতে গড়ে ১৫ হাজার টন করে প্রায় সোয়া ৪ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। বস্তা হিসেবে ধরলে প্রায় ৩২ লাখ। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, এই অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা আধুনিক চাষের কলাকৌশল নিয়ে কৃষকদের পাশে রয়েছেন সব সময়। তিনি বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব তাদের নয়। তবে কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের দাম না পেলে চাষাবাদে এমনিতেই আগ্রহ হারিয়ে পেলে। ক্রমাগত লোকসান গুনতে হলে আগামীতে আবাদও হ্রাস পেতে পারে।
×