ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অক্সিজেন সঙ্কটে ঘেরে চিংড়ি মাছের মড়ক

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অক্সিজেন সঙ্কটে ঘেরে চিংড়ি মাছের মড়ক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হঠাৎ বৃষ্টিতে মৎস্য ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় অনেক ঘেরে চিংড়ি মাছ মরে গেছে। এতে কয়েক হাজার চিংড়ি চাষীর প্রায় ৩০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। শুধু ফকিরহাট নয় পানির অক্সিজেন কমে বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার ঘেরগুলোতেও চিংড়ি মাছ মারা গেছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস। ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা, কলকলিয়া, বোয়ালবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকাঘুরে দেখা যায়, অনেকেই ঘেরের পাড়ে বসে হা-হুতাশ করছেন। ঘেরে বিনিয়োগ করা মূলধন হারিয়ে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা তাদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ পরিশোধের তাড়া। ফলতিতা এলাকার আল আমিন, মোঃ হাবিবুল্লাহ, নজির উদ্দিন, সুব্রতসহ কয়েকজন চিংড়ি চাষী বলেন, শনিবার ফকিরহাট উপজেলায় রাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে চিংড়ি ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় হাজার হাজার ঘেরের গলদা-বাগদা চিংড়ি মাছ মারা গেছে। এই মড়ক আমাদের সহায় সম্বল কেড়ে নিয়েছে। আমরা বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু এই ক্ষতি কাটিয়ে কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব তা আমরা জানি না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফলতিতা গ্রামের ৮৮ বছর বয়সী দম্পতি পুতুল রানী ও খগেন্দ্র রায় বলেন, চার বিঘা জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ করে জীবন চালাতাম। হঠাৎ মাছ মারা যাওয়ায় আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ টাকার বেশিরভাগই ব্যাংক লোনের টাকা। বৃদ্ধ বয়সে কিভাবে এ টাকা শোধ করব তা জানি না। চাষী কিরণ চন্দ্র, সুবাস রায়, অপূর্ব রায় বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘেরের পাড়ে যেতেই দেখি মরা মাছ ভাসছে। পানিতে নেমে দেখি অধিকাংশ মাছ মরে গেছে। এর মধ্যে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যে মাছ ছিল তা আড়তে এক হাজার ১২শ’ টাকা কেজি মূল্যের মাছ মাত্র ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করেছি। জীবনে কখনও এ রকম বিপর্যয় দেখিনি। আমাদের প্রত্যেকের ঘেরের প্রায় ৮০ শতাংশ মাছ মরে গেছে। আমরা কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করব। মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বলেন, হঠাৎ করে ঘেরের চিংড়ি মাছ মরে যাওয়ায় চাষীরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ চাষী এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করত। মাছ মারা যাওয়ায় তাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের বিদ্যমান ঋণের সুদ মাফ ও বিনা সুদে নতুন করে ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। জেলার সব থেকে বড় পাইকারি মাছের বাজার ফলতিতা মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি সৈয়দ তহিদুল ইসলাম পপলু বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর সকালে আড়তে এসে দেখি চারদিক থেকে শুধু চিংড়ি মাছ নিয়ে আসছে চাষীরা। এক হাজার ১২শ’ টাকা কেজি মূল্যের মাছ বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা দরে। সারাদিনে ফলতিতা বাজারে প্রায় ৩ কোটি টাকার চিংড়ি মাছ বিক্রি হয়েছে। স্বাভাবিক বাজার থাকলে এ মাছ ১৫-২০ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হতো। ফকিরহাটের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিত শীল বলেন, ঘেরে পানি কম থাকায় এবং হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় ঘেরের পানির অক্সিজেন কমে গিয়ে ফকিরহাট উপজেলার রেজিস্ট্রেশনকৃত আট হাজার ঘেরের প্রায় ৭০ শতাংশ ঘেরে চিংড়ি মাছ মরে গেছে। এছাড়াও বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও খুলনার রূপসা উপজেলার চিংড়ি ঘেরেরও মাছ মারা গেছে অক্সিজেন কমে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে পুকুরে অক্সিজেন বাড়াতে ট্যাবলেট ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চাষীদের আতঙ্কিত না হয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও এই অবস্থা মোকাবেলার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সবাইকে মাঠে থেকে চাষীদের পরামর্শ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
×