বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। অনুষ্ঠানে তারই বিভাগের ৭৩ শিক্ষার্থীকে বিশেষ বৃত্তি ও বই প্রদান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উপকমিটির চেয়ারম্যান এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। উপকমিটির সদস্য সচিব সুজিত রায় নন্দী অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদেরকেই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হবে। এমনকি নিজ দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে এখন দুদকের মামলা চলছে। শেখ হাসিনা কখনও তাদের দুর্নীতি মামলার জামিনের জন্য ওকালতি করেন না। কারণ, তার কাছে দুর্নীতির কোন স্থান নেই। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ক্যাসিনোর অর্থ অনেক বিএনপি নেতার কাছেও যেত। বিএনপিকেও সেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনাকে ১৯৭৫ সালের পর দেশের সবচেয়ে পরিশ্রমী ও সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা একটু একটু করে আলো জ্বালিয়ে রাখছেন। শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রী, কিন্তু তিনি আমাদের সবার অনেক উপরে। আমাদের অতিক্রম করে তিনি বহু উপরে উঠে গেছেন। এমনকি তিনি নিজেকেও অতিক্রম করেছেন। তিনি এখন আমাদের সবার মতো শুধু পরবর্তী ইলেকশন নিয়ে ভাবেন না, তার ভাবনাটা পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে। পরবর্তী ১০০ বছরের এজেন্ডাও তার কাছে রয়েছে। মৃত্যু মিছিলে তিনি জীবনের জয়গান গান। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তিনি সৃষ্টির পতাকা ওড়ান। অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের একমাত্র আশার আলো শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে দুজন কখনও হারিয়ে যাবেন নাÑ একজন বঙ্গবন্ধু এবং আরেকজন শেখ হাসিনা। যতদিন বাংলার জনপদ থাকবে ততদিন তারাও থাকবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যে রকম আদর্শ ও মূূল্যবোধের রাজনীতি বঙ্গবন্ধু করে গেছেন, আমাদের রাজনীতিতে সেটির অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের রাজনীতিতে সৌজন্যতাবোধের বড়ই অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে ছাত্রলীগের দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। শেখ হাসিনা চান ছাত্রলীগ ভাল খবরের শিরোনাম হোক। এ সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করার জন্য বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপিকে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির মুখে নীতিকথা অনেকটা ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ এর মতো। তাদের মুখে নীতিকথা মানায় না। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে হাওয়া ভবনকে ‘খাওয়া ভবন’এ পরিণত করেছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার জন্মদিনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের মাহাত্ম্য অসামান্য। এ সময় যেকোন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রীদের না করে জাতীয় অধ্যাপকদের করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদের প্রধান অতিথি করা হয় মিডিয়ার জন্য। কেননা, আমাদের মিডিয়ায় জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান স্যারদের মতো ব্যক্তিদের ভারি ভারি বক্তব্য, মূল্যবান কথাবার্তা তেমন আসে না। মন্ত্রীদের কথাই বেশি আসে। এটি কেমন যেন মনে হয়। উনাদের রেখে একজন মন্ত্রীকে প্রধান অতিথি রাখাটাও শোভনীয় নয়। কেননা, একজন জাতীয় অধ্যাপক কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা কোন কিছুতে ভীত না হয়ে অকুতোভয়ে দেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সত্যি সত্যি তিনি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের জীবনে ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসার অতিরিক্ত আর কিছু পাওয়ার থাকে না। আমরা যারা শেখ হাসিনার শিক্ষক ছিলাম তারা তা পেয়েছি এবং পেয়ে যাচ্ছি।
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার রাজনীতি দেখেছি। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীর সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। শেখ হাসিনা ও বেবি মওদুদের কথা আমরা জানি। তাদের মধ্যে সেসময় থেকে বেবি মওদুদের মৃত্যু পর্যন্ত ভাল সম্পর্ক ছিল। এটি বর্তমান ছাত্রনেতাদের জন্য একটি অনুস্মরণীয় বিষয় হতে পারে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের যে সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, শেখ হাসিনার কাছ থেকে আমরা তারচেয়েও বেশি সম্মান পাচ্ছি। আমরা খুবই অভিভূত। এসময় তিনি বলেন, অনেকেই লেখাপড়া করার উপকরণ যোগাতে পারে না। এই শিক্ষাবৃত্তি তাদের জন্য অনেক উপকারের হবে। আজ যারা শিক্ষাবৃত্তি নিচ্ছে, একদিন তারাও এমন বৃত্তি দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: