ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরীফ আহমেদের সাফল্যের গল্প

প্রকাশিত: ১২:৩২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শরীফ আহমেদের সাফল্যের গল্প

শরীফ আহমেদ। জন্ম ঢাকার নাখালপাড়ায় এবং ঢাকাতেই তার বেড়ে ওঠা। বাবা রোডস এ্যান্ড হাইওয়েতে চাকরি করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন ২০১০ সালে। বহুগুণে গুণান্বিত এই মানুষটি একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, গ্রাফিক ডিজাইনার। তিনি রিয়েলিস্টিক ফর্মে কাজ করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার তৈরি টেরাকোটা, ভাস্কর্য ও ম্যুরাল রয়েছে। এগুলোর কোনটা একক আবার কোনটাতে সমন্বিত অংশগ্রহণ রয়েছে তার। তার মধ্যে কক্সবাজারের দরিয়ানগর রিসোর্টের ৭০ ফিট লম্বা ডলফিন তৈরির কাজটি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের গেম ইন্ডাস্ট্রিতেও তার অবদান রয়েছে। প্রায় অর্ধশতকেরও বেশি গেম তৈরিতে মডেলিং, ক্যারেক্টার ডিজাইন, এ্যানিমেশনসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। নৌকাবাইচ, স্রোক লুডু, যাযাবর, আমার গ্রাম প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য গেম যেগুলো মোবাইলের প্লেস্টোরে পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বেসিক আর্কিটেক্ট, লামিয়া ফার্নিচার, ডিজাইন আইডিয়া এ্যান্ড টেকনোলজি (ডিআইটি) এবং বিভিন্ন গেম ডেভেলপমেন্ট ফার্মে ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট ও ডিজাইনার হিসেবে ডিজাইনিং, থ্রিডি মডেলিং, বিল্ডিং ডিজাইনিং, লেভেল ডিজাইনিং এর কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি পেশায় একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। বহুমুখী প্রতিভা অর্জনের গল্প সম্পর্কে জানান, আঁকা আঁকির প্রতি দারুণ আগ্রহ সেই ছোট বেলা থেকেই। তখন থেকেই তিনি ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে ছবি আঁকতেন। বিভিন্ন সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে ডিজাইন ও আল্পনা আঁকতেন। এভাবেই একসময় এই কাজকেই তিনি তার ক্যারিয়ারের মাধ্যম হিসেবে নির্বাচিত করেন। এক্ষেত্রে পরিবারের পূর্ণ সমর্থন ও প্রেরণার ঘাটতি ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে গিয়ে শিক্ষকবৃন্দ ও বিভিন্ন নামী-দামী শিল্পীর দিকনির্দেশনা পেয়েছেন, যা তার কাজের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি কাজকে ভালবাসেন এবং মনে করেন এই কাজ যেন তার ওপর অর্পিত কোন এক মহৎ সামাজিক কর্মসম্পাদনের গুরুদায়িত্ব। সমসাময়িক বাস্তবতার নিরিখে অতিপরিচিত নানা বিষয়বস্তুকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন তিনি। তার কর্মে কখনও কখনও প্রতিবাদের ভাষাও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত তিনি মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন ও ভাস্কর তৈরি করে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন বিভিন্ন পুরস্কার। জাপানে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়ান আর্টপিক-২০১৮’-প্রতিযোগিতায় তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এই প্রতিযোগিতায় তিনি পাঁচটি পেইন্টিং করেছিলেন, যার সবকটিতেই রিয়েলিস্টিকের প্রয়োগ লক্ষণীয়ভাবে ফুটে উঠেছিল। তার এই চিত্রগুলোর জন্য সম্মানসূচক স্বর্ণপদক প্রদান করতে এশিয়ান আর্টপিক প্রতিষ্ঠান তাকে জাপানে আমন্ত্রণ জানায়। পুরস্কার গ্রহণ করতে গিয়ে তার মনে হচ্ছিল তিনি শুধু তার কাজের পুরস্কারই নিতে আসেননি, তিনি যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তিনি তার রিয়েলিস্টিক শিল্পচর্চা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চান। আবার দলগতভাবে নৌকাবাইচ গেম তৈরির জন্য ‘ন্যাশনাল মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন এ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ অর্জন করেন। এছাড়াও ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন গোল্ড মেডেল এ্যাওয়ার্ড-২০০৭’ অর্জন করেন। তবে তিনি কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য কাজ করেন না। কেননা প্রকৃত শিল্পী কোন পুরস্কার প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে কাজ করেন না। আর তার উদ্দেশ্যও একজন প্রকৃত শিল্পী হয়ে ওঠা। তার কাজে কোনপ্রকার প্রতিবন্ধকতা ছিল না তা বলা যাবে না। তা সত্ত্বেও তিনি দমে যাননি বরং নিজের সব প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন শিল্পী হবার প্রতিভাটুকু। তার হাতের ছোঁয়ায় একেকটা শিল্পকর্ম যেন শত প্রতিভার জয়গান গায়। প্রাকৃতিক অপরূপ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেন রঙের তুলিতে জীবন্ত ভেসে ওঠে। সারাদিনের শত ব্যবস্থার মাঝে অবসর সময়ে বা কখনও কখনও সারা রাত জেগে চলে শিল্পকর্ম। তার সুনিপুণ হাতে গড়ে ওঠে নানা শিল্পকর্ম। জীবনে সবাই সুখী ও সফল হতে চায়। আর তা যদি নিজের চেষ্টায় কষ্টসাধ্য কাজের ক্ষেত্রে হয় তাহলে এর প্রভাবে মনে এক মধুর অনুভূতি বা মানসিক প্রশান্তি অনুভূত হয়। ভাল কাজের সাফল্যগুলো সবসময় উঁচুতে থাকে, মানুষ সম্মান দেয়। কিন্তু একেক জনের জীবনে সফলতা বলতে একেকরকম অর্জনকে বোঝায়। সাধারণত সফলতা বলতে আমরা বুঝি ভাল ফ্ল্যাট, সুন্দর বাড়ি, দামী গাড়ি, আর্থিক নিশ্চয়তা সর্বোপরি একটি সুন্দর ও গোছানো জীবন যাপনের অধিকারী হওয়া। ঘরে বসে অলস সময় কাটালে এই সাফল্য ধরা দেবে এমনটা ভাবা নিতান্তই অমূলক। এর জন্য আমাদের সবাইকে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। তাই আমাদের যদি চিন্তা ভাবনা এই রকম হয় ঘরে বসে থাকলেও জীবনে সহজেই সাফল্য আসবে তাহলে আমরা কখনোই জীবনে উন্নতি করতে পারব না। আমাদের সফলতা পেতে হলে অব্যাশই পরিশ্রম করতে হবে। কারণ আজ পর্যন্ত যারা সাফল্য পেয়েছে তারা তাদের শ্রম-ঘামের বিনিময়েই পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে ‘কষ্ট না করলে কেষ্ট মিলে না’ যা প্রায় সকলেরই জানা। সফলতা শব্দটি মুখে যত সহজে উচ্চারণ করা যায় ততো সহজে বাস্তব জীবনে প্রতীয়মান করা যায় না। মুখে বলার চেয়ে করাটা খুব কঠিন। সফলতা বয়সের ভারে বাধা নয়। আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, যেখানেই বসবাস করেন না কেন আপনার প্রচ- ইচ্ছাশক্তিই আপনাকে সফল করতে পারে। আর এই জীবনে সফল হতে হলে সফল মানুষের পথ অনুসরণ করতে হবে। অদম্য প্রচেষ্টা নিয়ে সামনের পথে এগুতে হবে। আইনস্টাইন বলেছিলেন, “ওসধমরহধঃরড়হ রং সড়ৎব রসঢ়ড়ৎঃধহঃ ঃযধহ শহড়ষিবফমব” অর্থাৎ কল্পনা জ্ঞানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কল্পনার জগত যত রুচিশীলভাবে সাজানো হবে আপনার সফলতা তত তাড়াতাড়ি আপনাকে ধরা দিবে। তাই কল্পনা করুণ, সুন্দর মানসিকতা গড়ুন এবং ইতিবাচক থাকুন। মনে রাখতে হবে কোন কাজে একবার ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়লে চলবে না, পুনরায় চেষ্টা করতে হবে। সবসময় ইতিবাচক মানসিকতার অনুশীলন করে ইতিবাচক মানুষদের সাহচর্য বজায় রাখতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে। অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস ও একাগ্রতা নিয়ে নিজের দৃঢ়তাকে মজবুত করতে পারলে আপনিও পৌঁছে যেতে পারেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।
×