ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা দরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা দরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : সমতা, সার্বজনীন উন্নয়ন এবং সবার জন্য সমৃদ্ধির চালিকা শক্তি’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় কো-চেয়ারের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। খবর বাংলানিউজের। সভায় আরেক কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সানচেজ। বাংলাদেশের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ২৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপের বৈশ্বিক ফ্রেমওয়ার্ক আরবিএম পার্টনারশিপের চেয়ার অব দ্য বোর্ড মাহা তায়সির বারাকাত, অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক উইনিয়ে বয়ান্যিমা, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর টেকসই উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক জেফ্রে সাচ প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য পূরণ করতে এবং অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেকের সুস্বাস্থ্য এবং ভাল থাকার অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকার প্রধান বলেন, বর্ণ, ধর্ম, রাজনৈতিক বিশ্বাস, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবেচনা ছাড়াই সুস্বাস্থ্য উপভোগ করা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। ‘সবার জন্য উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি দুটি বিষয়কে বোঝায়। প্রথমত, সামাজিক অবস্থা বিবেচনা ছাড়াই প্রত্যেকে অবশ্যই সমান সুবিধা ভোগ করবে। দ্বিতীয়ত, সম্পদ ও লাভে প্রত্যেকের সমান ও সাধারণ প্রবেশাধিকার থাকবে।’ সার্বজনীন উন্নয়নের অনুপস্থিতি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এবং সামাজিক ঐক্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও প্রবেশাধিকার ছাড়া শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জন যথেষ্ট নয়। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত সার্বজনীন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ‘২০৩০ এজেন্ডা গ্রহণের সময় আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সব মানুষ এবং সম্প্রদায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে এবং কেউ এ সুবিধা থেকে বাদ পড়বে না। যদিও কিছু বড় অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এখনও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। কেবল স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের কারণে প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে। ৮০০ মিলিয়ন মানুষ তাদের ব্যয়ের কমপক্ষে ১০ শতাংশ খরচ করছে স্বাস্থ্যসেবার জন্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব লোকজন সাধারণত বেসরকারীভাবে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেবা নিতে পারে না। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে। সমাজের দরিদ্র মানুষের সাশ্রয়ী ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মাধ্যমে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবার সমতা আনা যেতে পারে। ‘স্বাস্থ্যে সঙ্কটময় পরিস্থিতির কারণে মানুষকে যেন দরিদ্রতর হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায় আমাদের সে চেষ্টা করতে হবে, তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।’ সরকার প্রধান বলেন, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণ হতে পারে স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক পর্যায়ে। শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হতে পারে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা হতে পারে কার্যকর ও সার্বজনীন উপায়। গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রতিমাসে ১০ মিলিয়নের বেশি মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেয়।
×