ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উতমাছড়া-রোদ বৃষ্টির অবিরাম খেলা

প্রকাশিত: ১২:৪১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

উতমাছড়া-রোদ বৃষ্টির অবিরাম খেলা

একটু আগেও খটখটে রোদ ছিল। এখন অঝোরধারায় বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির পরশ পেতে আমি গাড়ির গ্লাসের বাইরে হাত বারিয়ে দেই। আমরা চারজন বেড়িয়েছি নতুন গন্তব্যে আজকের ভ্রমণের মূল পথ নির্দেশক হলো ইমরান আহমদ হেলাল। ইমরানের বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের নোয়াগাঁও এ অনেক দিন ধরে বলছিল উতমাছড়ার কথা যাব যাব করে বেটে বলে মিলছিল না শেষ পর্যন্ত আমরা রওনা দিলাম। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নে উতমাছড়া অবস্থান। সিলেট শহর থেকে আম্বরখানা মালনীছড়া চা বাগান ধরে আমরা এগিয়ে চলছি সবাই তাকিয়ে দূর আকাশের পানে। যেখানে রোদেরা খেলা করছে পাহাড়ের গায়ে। অথচ আমাদের কাছে দৃষ্টিসীমা ঝাপসা করে দিয়ে বৃষ্টি ঝরছে। চা বাগানের প্রতিটি পাতা বৃষ্টির স্পর্শে এক নতুন রূপ ধারণ করেছে। শুরুটা যেমন-তেমন ধূপাগুল এর কাছাকাছি যেতেই রাস্তাটা হঠাৎ খাল-বিল-নদী-নালার রূপ পেল। আমাদের গাড়ি হঠাৎ করে কাঁদার মাঝে আটকা পড়ে অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হয়। হেঁটে হেঁটে কিছুটা পথ পার হই। আমরা সালুটিগড় হয়ে যেই থানার বাজারের পথে প্রবেশ করি সেই থেকেই বাকিটা পথ স্বপ্নের মতো! সর রাস্তার দুই পাশের সবুজ ধানখেত দেখতে দেখতে হঠাৎ যখন সুদূরের পাহাড়গুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, তখনই স্বপ্নের শুরু। আরে! আকাশটাও বদলে গেছে! উজ্জ্বল নীল আকাশ আর তার শরীরে সাদা মেঘ নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত। পাহাড়ে এসে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে মেঘ। দিগন্তরেখায় মেঘ আর পাহাড়ের পারস্পরিক ভালবাসা দেখে চোখ জুড়ে যায়। ইমরান আমাদের আশ্বস্ত করে, পাহাড়ের যত কাছে যাবেন, ততই ভাল লাগবে আমাদের ভাল লাগতে শুরু করেছে। অনন্ত দূর যেতেই পৌঁছে যাই ধলাই সেতুতে। যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদী। সামনে মেঘালয় পর্বতমালা। কোল ছুঁয়ে বয়ে চলেছে ধলাই নদী। সে এক দৃশ্য বটে! এককথায় অসাধারণ। এমন দৃশ্যে চোখ-মন দুটিই ভরে ওঠে। নদীর বাম পাশে পানি আর ডান পাশে বিশাল বালিয়াড়ি। পুরো পরিবেশ অপরূপ। তবু বালুচরে ঘেরা এমন ¤্রয়িমাণ ধলাই নদী দেখে দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। আমরা দয়ার বাজারের পথ ধরে এগিয়ে চলেছি। তারপর ভাটরার গ্রামে এসে দেখা মিলল প্রায় শতবর্ষ পুরনো এক স্কুলঘরের। এবার ভাটরার গ্রাম পেছনে ফেলে প্রায় আধঘণ্টা পর চড়ার বাজারে পৌঁছি। চড়ার বাজারে আমাদের যাত্রাবিরতি টানতে হয়। কেননা প্রায় তিন ঘণ্টা আমরা পথ চলছি। পেটে কিছু পড়েনি, এবার পেটে কিছু দেবার পালা। তেমন ভাল মানের কোন হোটেল নেই কিন্তু কিছুই করার নেই রাস্তার পাশের দোকান থেকে গরম গরম ভাত আর মুরগির ঝাল ফ্রাই পেটে খুব ক্ষিদা ছিল তাই খাবার অমৃতের মতো মনে হচ্ছিল। আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম টলির ঘাটে সেখান থেকেই উতমাছড়ার শুরু। সারি সারি পাহাড়, পাহাড়ের বুকে গাঢ় সবুজের আস্তরণ। পাহাড়ের বুক চিড়ে চলেছে শীতল স্বচ্ছ জলরাশি আছে পাথর ছড়ানো সর্বত্র। আমি একের পর ছবি তুলতে থাকলাম। আকাশে নিলিমার ছোঁয়া আবার কখন কালো মেঘের মায়া এই সব কে সঙ্গী করে আমরা উপভোগ করছি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের। রূপ-লাবণ্যে যৌবনা উতমাছড়া পরতে পরতে সাজিয়ে রেখেছে সম্মোহনী সৌন্দর্য। যান্ত্রিক কোলাহল থেকে মুক্ত নির্জন অরণ্যের সাহচার্য পেতে উতমাছড়ার বিকল্প নেই। আছে সবুজের সমারোহ, দিগন্ত বিস্তৃত সাদা মেঘের খেলা, পাথর ছড়ানো চারপাশ, দুধসাদা জলরাশি, পাখিদের কলতান। মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই! উতমাছড়ার সৌন্দর্য্য সবচেয়ে বেশি ধরা দেয় বর্ষাকালে। অন্যান্য মৌসুমে উতমাছড়াকে মরুভূমির বুকে গজিয়ে ওঠা উদ্যানের মতো মনে হয়। দেখতে দেখতে গোধূলির লগ্নে আমাদের ফিরার সময় হয়ে এলো। আমরা আবার ফিরে চললাম শহর পানে সঙ্গী হয়ে রইল উতমাছড়ার সম্মোহনী সৌন্দর্য।
×