ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গারো পাহাড়ের সীমান্ত কলমাকান্দা

প্রকাশিত: ১২:৪২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

গারো পাহাড়ের সীমান্ত কলমাকান্দা

সারি সারি তরঙ্গায়িত পাহাড় দূরের গন্তব্যে বয়ে গেছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার। চূড়া থেকে আপন গতিতে নিচে নেমে এসেছে ঝর্ণা ও পাহাড়ী নদী। ঝর্ণাধারায় ভূমি ক্ষয়ে তৈরি হয়েছে পাহাড় লেক ও জলাশয়। পাহাড়ী নদী খাড়া ভাবে এসে ঢালু হয়ে নিচে মিশেছে কলমাকান্দায় কংশের বুকে। নদীতে নানা রং বেরঙের পাথর গড়িয়ে চলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে। পাহাড়ী বনে শোভা পায় নানা গাছ গাছরা ও ফল মূল। চারদিকে সবুজের সমারোহ, ঝোপঝাড়। সীমান্তের এই ঝোপঝাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে বাস করে পুরানো এক জাতি ‘গারো’। দেশের উত্তর সীমান্তে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার গারো পাহাড়ের জনপদে দাঁড়িয়ে দেখা মেলে এসব দৃশ্য। গোলাকার মুখম-ল, কোঁকড়ানো চুল, চ্যাপ্টা নাক, শক্ত শারীরিক গঠনের মানুষের কাছে সাধারণ চেহারার মানুষ সেখানে যেন বেমানান। বনের লতাপাতা, ফলমূল ও পাহাড়ের ঢালে উৎপাদিত শস্যে মেটে তাদের খাদ্য চাহিদা। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুম চাষ করে ফলায় নানা শষ্য। বাঁশে তৈরি ঝোঙায় গাছের ছাল বেঁধে তা কপালে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় খাবার ও লাকড়ির সন্ধানে। বুকে পেটে কাপড় দিয়ে সন্তান বেঁধে মহিলারা কাজ করে মাঠে প্রান্তরে। কাজ শেষে ঝোঙায় করে পুরুষ মহিলারা সওদা নিয়ে ঘরে ফেরে সন্ধ্যায়। পুরুষরা পশুপাখি শিকার করে ঘুরে বেড়ায় জঙ্গল থেকে জঙ্গলে। এখানে দিনদুপুরে বন্যপ্রাণি নেমে আসলেও ভয় পায়না তারা। প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করেই বসবাস করে। কখনও কখনও নিজের অজান্তেই সীমানা ভুলে চলে যায় ভারতে। মাঝে মাঝে বি.এস.এফ অত্যাচার চালায় তাদের ওপর। এসবই এখন তাদের সহ্য হয়ে গেছে। বন পাহাড়ের মানুষ হিসেবে পরিচিত সকল কষ্টকেই তারা মামুলি হিসেবে নেয়। জানা যায় পাহাড়কে কেন্দ্র করেই তাদের জাতি সত্তা গড়ে উঠেছিল। কলমাকান্দা সীমান্তের এ জনপদে পাহাড়ের পাদদেশে গারোদের ঝুমচাষ, কপালে ঝোঙা ঝুলিয়ে খাবার সংগ্রহের দৃশ্য মনোলোভা দৃষ্টি কাড়ে। প্রাচীন জীবনধারায় বন থেকে ফলমূল সংগ্রহ এবং পাখি ও বন্যপ্রাণী শিকার করে খাবারের চাহিদা মেটায়। বন থেকে আহরিত জিনিস বাজারে বিক্রি করে যোগান দেয় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের। কয়লার খনিতে আবার কেউ কেউ পাহাড়ী নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করেও জীবিকা চালায়। শারীরিক গঠন মজবুত হওয়ায় কঠিন পরিশ্রমেও তাদের ক্লান্ত মনে হয় না। প্রচ- শীতের এ অঞ্চলে গাছের গুঁড়িতে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তা দিয়ে শীত নিবারণ করে বেঁচে থাকে তারা। মিশনারী তৎপরতা তাদের সেবা প্রদান করলেও কেড়ে নিয়েছে ধর্ম, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা। পাহাড়ের ঢালে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন নির্বাহ করার দৃশ্য অনেকটাই অকল্পনীয়। কলমাকান্দা সীমান্তের রংছাতি, লেংগুরা, বরোয়াকোনা এলাকায় ভ্রমণ করে জানা যায় তাদের জীবন প্রণালী সম্পর্কে। রোগশোক নিত্য সঙ্গী হলেও পরিবেশ প্রতিকূলতার কারণে তা আমলে নেয় না তারা। দরিদ্রতার কাছে হার মানতে হয় তাদের। এখনও তারা পান করে পাহাড়ী ঝর্ণা ও কুপের পানি। তবে নানা কষ্টের মধ্যে বেঁচে থাকলেও আদি ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারেনি কলমাকান্দা সীমান্তের গারোরা।
×