ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৮ অক্টোবর ২০১৯

 মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি

গত ৮ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। প্রতি বছরের ন্যায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথভাবে পালিত হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউ এইচ ও-এর তথ্য মতে- বিশ্বে ৫৬ কোটি মানুষ মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত, তার মধ্যে ৩০ কোটি মানুষ বিষন্নতায় এবং ২৬ কোটি মানুষ উদ্বেগে ভোগে। এর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস করে। ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যাল থেরাপির (ডব্লিউসিপিটি) মতে- ফিজিওথেরাপি শুধু শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নয়, মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নির্দেশিত কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ বিশেষ করে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া যখন একজন ব্যক্তি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভোগেন তখন মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বেড়ে যায়। যেমন একজন ব্যক্তি হঠাৎ ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তার শরীরের একপাশ প্যারালাইসিসে পরিণত হলো তখন রোগীটির শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি শানসিক অসুস্থতাও দেখা দেয়। কারণ, যে কিনা দুদিন আগেও সুস্থ- স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তার আক্রান্ত হাত-পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছে না; সে কি আবার আগের মতো সুস্থ হতে পারবে-এই ধরনের নানা রকম মানসিক উদ্বেগে ভোগে। তেমনিভাবে কিছু রোগী আছেন যারা দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন ব্যথা-বেদনায় ভুগে থাকেন তখন তারাও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে যে তারা বোধহয় আর কখনও সুস্থ হবে না, এ ধরনের বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। এসব ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী যখন ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে, শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থতা লাভ করে তখন তার ভেতর আসন্ন ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা দূর হয়, তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ব্যাপক প্রসারতা লাভ করলেও বাংলাদেশে এই চিকিৎসা তেমন বিস্তার লাভ করেনি। কারণ, সরকারী হাসপাতালগুলোতে গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পদ নেই, কিছু পদ থাকলেও নিয়োগ নেই। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবজেক্ট হওয়া সত্ত্বেও এমবিবিএস ও বিডিএসের ন্যায় বিপিটি (ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি) পাস ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য বিসিএস দেয়ার সুযোগ নেই। তেমনিভাবে নেই কোন রেগুলেটরি অথরিটি বা কাউন্সিল। যার ফলে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ফিজিওথেরাপি সেন্টারে অনেক রোগীই অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। কারণ, এর বেশিরভাগ সেন্টারেই গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নেই। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক বিস্তৃত একটি শাখা; যেখানে বহির্বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার ন্যায় ফিজিওথেরাপিতেও রয়েছে বিভিন্ন সাব-স্পেশালিটি। যেমন পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপি বিভাগ, নিউরোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপি বিভাগ, অর্থোপেডিক বা মাস্কুলোস্কেলিটাল ফিজিওথেরাপি বিভাগ, কার্ডিওরেসপিরেটরি বা চেস্ট ফিজিওথেরাপি বিভাগ, স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি বিভাগ, গাইনি ফিজিওথেরাপি বিভাগ। যার ফলে স্ব স্ব বিভাগের প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক যদি সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারে তাহলে রোগী সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাবে। বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন- বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি কলেজের বাস্তবায়ন, বিশেষায়িত হাসপাতালসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলা হাসপাতালে স্নাতক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি ও বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল বাস্তবায়ন করে দেশের আপামর জনসাধারণের সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। ডাঃ এম ইয়াছিন আলী বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষঙ্গ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান - ফিজিওথেরাপি বিভাগ প্রো-এ্যাক্টিভ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, চীফ- কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল ধানমন্ডি, ঢাকা, মোবাঃ ০১৭৮৭১০৬৭০২
×