ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বুয়েটে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১০ অক্টোবর ২০১৯

বুয়েটে পিটিয়ে হত্যা

নিছক ‘শিবির’ সন্দেহে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। ভয়াবহ ও মর্মান্তিক এই ঘটনাটি রীতিমতো নাড়া দিয়েছে সমগ্র দেশ ও জাতিকে। স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ করেছে আমাদেরও। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুখ্যাত ও মানসম্মত একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম একটি পরিকল্পিত হত্যাকা- সংঘটিত হতে পারে, ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। তদুপরি আবরারের হত্যাকারী আর কেউ নয়। বহিরাগত তো নয়ই, বরং তার সহপাঠী, সতীর্থ, বন্ধু এমনকি রুমমেট। হত্যাকারীরাও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবেই, তদুপরি ছাত্রলীগের নামধারী, বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত নেতা ও কর্মী। আবরারের অপরাধ, সম্প্রতি সে ভারতে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে কিছু ইলিশ দেয়া এবং ফেনী নদীর পানি ভারতকে সরবরাহসহ তথাকথিত গ্যাস রফতানির খবরে ‘ভিন্নমত’ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছিল তার ফেসবুকে। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, ভারতে গ্যাস রফতানিবিষয়ক চুক্তির ভুয়া সংবাদটি প্রচার করে বিবিসি বাংলা, যা নিয়ে পরে তারা সংশোধনী বার্তাও প্রদান করে। তবে এসব পোস্টই আদৌ উত্তেজক, নেতিবাচক, হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক নয়; সরকার ও দেশবিরোধী তো নয়ই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রীও বলেছেন, কাউকে ভিন্নমতের জন্য মেরে ফেলার কোন অধিকার কারও নেই। সরকার তা সমর্থন করে না কোন অবস্থাতেই। নিহত আবরারের বাবা চিহ্নিত ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন চকবাজার থানায়, যারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কয়েকজনকে গ্রেফতারসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কারের খবরও আছে। প্রশ্ন জাগে, বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের যে কক্ষে আবরারকে নির্মম নৃশংসভাবে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পিটিয়ে হত্যা করা হলো, তার আর্তচিৎকার ও আর্তনাদে রুমমেটসহ আশপাশের কেউ আদৌ এগিয়ে এলেন না কেন, এমনকি প্রভোস্টসহ! আর ভিসি তো নিহত আবরারের লাশ দেখতে এমনকি জানাজায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসেও যাননি অসুস্থতার অজুহাতে। যে কারণে ভিসিকে অবরোধসহ উত্তাল হয়ে উঠেছে বুয়েট। দুঃখজনক হলো ঢাবি, চবি, বুয়েটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অতীতে একাধিক হত্যা সংঘটিত হলেও কোনটিরই বিচার হয়নি। সর্বশেষ বুয়েটসহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উত্তপ্ত ও অশান্ত হয়ে উঠেছে, যে কারণে বিঘিœত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। আবরার হত্যার প্রতিবাদসহ দোষী ও দায়ীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে নেমেছে বুয়েট, ঢাবিসহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন, আবরার হত্যাকারীদের শাস্তি পেতেই হবে। এর বাইরেও ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে অশান্ত হয়ে উঠছে দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এমনিতেই দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। চলতি বছর এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পায়নি বুয়েটসহ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের উচ্চশিক্ষার এই মানগত অবস্থান কোনভাবেই স্বস্তিদায়ক হতে পারে না। অস্থির রাজনীতির কালো ছায়া পড়েছে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। শিক্ষক রাজনীতিও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ভিসিদের নীতি-নৈতিকতা-দুর্নীতিসহ মান নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষা-বিরুদ্ধ এমন কর্মকা- অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। দেশের ভবিষ্যত যারা, সেই শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচী সব সময় পরিত্যাজ্য হওয়া অত্যাবশ্যক। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্ভূত সমস্যার শীঘ্রই সমাধান হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তার কথায় আশা ও আস্থা রাখতে চাই। এর পাশাপাশি আবরার হত্যার দ্রুত বিচারসহ অপরাধীদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করাও অত্যাবশ্যক। নিহত আবরারের পরিবারের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।
×