ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়পত্র বিক্রি রেকর্ড পরিমাণে কমেছে

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১০ অক্টোবর ২০১৯

সঞ্চয়পত্র বিক্রি রেকর্ড পরিমাণে কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে সরকারের নেয়া কঠোর পদক্ষেপের ফলে অর্থবছরের প্রথম দু’মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর আগের মাসে অর্থাৎ জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ৬৬১ কোটি টাকা। প্রথম দু’মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ৩ হাজার ৬৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিক্রি হয় ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী ধারায় হাঁটছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুর্নীতি কিংবা অবৈধ আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যত তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এছাড়া এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ২১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল্য ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ২০৫ কোটি ৪০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল্য ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। হালানাগাদ তথ্যে দেখা যায়, দু’মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৩০৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল্য ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা প্রদান করে সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত প্রদান করা হয়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল্য ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ঋণ বা ধার হিসেবে গণ্য করা হয়।
×