ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য পিটিয়ে হত্যা সংবিধানের ওপর আঘাত ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১১ অক্টোবর ২০১৯

স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য পিটিয়ে হত্যা সংবিধানের ওপর আঘাত ॥ ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা সংবিধানের ওপরে আঘাত মন্তব্য করে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীন ছাত্ররাজনীতির পক্ষে মত দিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, লেজুড়বৃত্তি করা রাজনীতি চাই না। তিনি বলেন, সংবিধানে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যে কেউ তার মত প্রকাশ করতেই পারেন। সেজন্য পিটিয়ে কাউকে হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ। আবরার হত্যার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করে ড. কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত করে সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটন করতে হবে। এটা কোন দলীয় বক্তব্য নয়। ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে আমি এই দাবি জানাচ্ছি। রবিবার রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই হলের শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার এক হাজার ১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে শিক্ষার্থীরা রাতে হলের দ্বিতীয়তলার সিঁড়িতে তার লাশ পায়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবরারের দুই কাঁধের নিচ থেকে হাতের কব্জি পর্যন্ত কালসিটে ছিল। একইভাবে কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ছিল জখমের দাগ। আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলা হয়েছে এই ১০জনসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সবাইকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে রবিবার সন্ধ্যায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন, ছাত্রলীগ বুঝি না অপরাধীদের কঠোর বিচার হবে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক মন্ত্রী কামাল হোসেন বলেন, লেজুড়বৃত্তি করা ছাত্ররাজনীতি আমরা কোনদিনই চাই না। তবে স্বাধীন ছাত্ররাজনীতি থাকতে পারে। আবরার হত্যাকা-ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় হতে পারে সঙ্গে অন্যরাও থাকতে পারেন।’ দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনার দলের সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা আজ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মতো আচরণ করছে। হলে হলে টর্চার সেল। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা কলেজের হোস্টেলগুলোতে টর্চার সেল রয়েছে। টার্গেটে থাকা শিক্ষার্থীকে টর্চার করার আগে দেয়া হয় বিরোধী কোন সংগঠনের তকমা। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, রাজনৈতিক ভ-ামি ও কৌশলী প্রতারণা। সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেশ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি এমন মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, জনগণের মালিকানা জোরপূর্বক ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের কারণে আজ গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নেই। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ন্যূনতম ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্ষমতা যেখানে কেন্দ্রীভূত দুর্নীতির মহোৎসব সেখানে দৃশ্যমান। বর্তমান ভিন্নমত দমন, মিথ্যা মামলা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সভা-সমাবেশে বাধা-নিষেধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির মাধ্যমে সরকার প্রকাশ্যে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে। দেশে আজ ক্যাসিনো সংস্কৃতি। মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সায়ীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মহসীন রশিদ, মোকাব্বির খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন আহমেদ আফসারি, মোস্তাক আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারি হামিম প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ভোট দেয়ার অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। এই ধরনের রাষ্ট্র সমাজ ব্যবস্থায় লুটপাট, ধর্ষণ, কালো টাকা, অর্থ পাচারকারীদের রমরমা হবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারী ছত্রছায়ায় গুটিকয়েক চক্র ব্যাংক লুট করছে, টেন্ডারবাজি করছে, আর্থিক ভাগাভাগি নিয়ে খুন-খারাবি চালাচ্ছে। মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। সর্বত্রই চলছে অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং ব্যাপক দুর্নীতি। তিনি আরও বলেন, এ অবস্থা থেকে দেশবাসী পরিত্রাণ পেতে চায়। আসুন, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত, ভ-, গণবিরোধী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করি। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
×