ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ১১ অক্টোবর ২০১৯

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক

আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে (২১ জুলাই ১৮৯৯- ২ জুলাই ১৯৬১) বিশ শতকের মার্কিন সাহিত্যের অন্যতম প্রভাববিস্তারকারী প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক। জন্ম আমেরিকার ইলিয়ন অঙ্গরাজ্যের শিকাগো নগরের ওক পার্কে। ওই শতকের ফিকশনের ভাষার ওপর তাঁর নির্মেদ ও নিরাবেগী ভাষার ভীষণ প্রভাব ছিল। ১৯৫৩ সালে তিনি কথাসাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। ‘দ্য ওল্ড ম্যান এ্যান্ড দ্য সী’ বিশ্বখ্যাত উপন্যাসের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯৫৪ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তাঁর হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে যা তাঁর অসংখ্য লেখায় ফুটে উঠে। আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস, দ্য ওল্ড ম্যান এ্যান্ড দ্য সী, অলসো রাইজেস, ফর হুম দ্য বেল টোলস, দ্য ওল্ড ম্যান এ্যান্ড দ্য সী তাঁর বিখ্যাত এবং বহুল পঠিত উপন্যাস। ছোট গল্প এবং কবিতা বিনির্মাণেও তিনি অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। বাবা ক্লেয়ারেন্স এ্যান্ডমন্ডস হেমিংওয়ে পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। তাঁর ছিল দুটি নেশা-শিকার করা আর মাছ ধরা। তাঁর মা গ্রেস হল ছিলেন চার্চ-গায়িকা। বাব-মা দুইজনই চাইতেন হেমিংওয়ে তাঁদের মতো হোক। ফলে বাবা কিশোর হেমিংওয়েকে কিনে দিলেন মাছ ধরার ছিপ এবং বন্দুক। মা কিনে দিলেন যথারীতি বাদ্যযন্ত্র-চেলো। মাছধরা, শিকারে যাওয়া ও যন্ত্রসঙ্গীতে সময় কাটানোর পাশাপাশি হেমিংওয়ে কিছুদিন মুষ্টিযুদ্ধের তালিম নেন। তাঁর রোমাঞ্চপ্রিয় জীবন ও ভাবমূর্তি পরবর্তী প্রজন্মের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে তিনি তাঁর অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম রচনা করেছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের অনেকগুলোই মার্কিন সাহিত্যের চিরায়িত গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। ওক পার্কেই হেমিংওয়ে বেড়ে ওঠেন। ১৯১৩ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওক পার্ক এ্যান্ড রিভার ফরেস্ট হাই স্কুলে পাড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি কয়েক মাস দ্য কানসাস সিটি স্টার সংবাদপত্রে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। প্রথম বিশ^যুদ্ধ শুরু হলে তিনি এ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং ইতালির যুদ্ধক্ষেত্রে গমণ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হনে এবং বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁর যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতাই তাঁর দেয়া ফেয়ারওয়েল টু আর্মস ’ (১৯২৯) উপন্যাসের অনুপ্রেরণা। ১৯২১ সালে তিনি হ্যাডলি রিচার্ডসনকে বিয়ে করেন এবং প্যারিস চলে যান। সেখানে তিনি বিদেশী করসপন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য সান অলসো রাইজেস’ ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে হাডলির সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং তিনি সাংবাদিক পলিন ফাইফারকে বিয়ে করেন। স্পেনীয় গৃহযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর ফাইফারের সঙ্গেও তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা হতে তিনি ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’ (১৯৪০) উপন্যাস রচনা করেন। ১৯৪০ সালে তিনি মার্থা গেলহর্নকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় লন্ডনে ম্যারি ওয়েলশের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পর গেলহর্নের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। হেমিংওয়ের সাহিত্যের জনপ্রিয়তা তাঁর বিষয়বস্তু অর্থাৎ প্রেম, যুদ্ধ, বন্যতা ও ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়বস্তু তাঁর রচনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হেমিংওয়ে ছিলেন ‘ওয়ার প্রোডাক্ট’। গোটা মার্কিন সাহিত্যে তাঁর মতো করে যুদ্ধকে আর কেউ তুলে আনতে পানেনি। ফলে বিশ^াসহিত্যে ওয়ার রইটিংস ব যুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যেকর্মের প্রসঙ্গ উঠলেই চলে আসে তাঁর নাম। হেমিংয়ের সাহিত্যে যুদ্ধের ভয়াবতা ও যুদ্ধপরবর্তী নিঃসঙ্গতা বা হতাশার কথা যেভাবে এসেছে তিনি নিজে যুদ্ধসৈনিক না হলে হয়ত সেভাবে আসত না। ব্যক্তিজীবনে প্রথম বিশ^যুদ্ধের সৈনিক ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে সাংবাদিক হিসেবে ফ্রন্টে কাজ করেছেন। যুদ্ধে আহতও হয়েছে। মেদহীন ঝরঝরে গদ্যে, অল্পকথায়, জীবনের সবচেয়ে নীতল ও জটিল সমস্যাগুলো বলে ফেলেছেন বিশে^র অন্যতম সেরা এই কথাসাহিত্যিক। তাঁর লেখনীর ধরনকে ব্যাখ্য করা হয় ‘আইসবার্গ থিওরি’ হিসেবে। যে কারণে হেমিংওয়ে-উত্তর সাহিত্যবিশে^ খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক গাবরিয়েল গারসিয়া মার্কেস তাঁর প্রিয় লেখক হেমিংওয়ের মৃত্যুসংবাদে আহত হয়ে স্থানীয় কাগজে যে শ্রদ্ধার্ঘ্য লেখেন সেখানে উল্লেখ করেন, তাঁর (হেমিংওয়ের) লেখা আপাতদৃষ্টিতে সহজ সরল স্পষ্ট, এমনকি নাটকীয় মুহূর্তেও প্রায় সমান নির্লিপ্ত। কিন্তু সাদাসিধে এই সাহিত্যেও তলদেশে লুকিয়ে আছে, একে উঁচু করে তুলে ধরেছে নিগূঢ় প্রজ্ঞা। হেমিংওয়ের বিখ্যাত ছোটগল্প ‘ইন্ডিয়ান ক্যাম্প’ প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে প্যারিসের একটি পত্রিকায়। এই গল্পে হেমিংওয়ে প্রায় আত্মজৈবনিক চরিত্র নিক এ্যাডামসের প্রথম আবির্ভাব ঘটে। শিশুচরিত্র নিকের বয়ানেই গল্পটি বলা। এই গল্পে নিত তার ডাক্তার বাবার সঙ্গে ইন্ডিয়ান ক্যাম্পে যায় এক মহিলারই সন্তান জন্ম দিতে। অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তার মহিলাকে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। তখনকার দিনে সিজার করাটা আজকের মতো সহজ ছিল না। অজ্ঞান বা অবশ না করে পেট কাটার কারণে স্বামী তার স্ত্রীর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে চাকু দিয়ে নিজের গলাকেটে আত্মহত্যা করে। এই গল্প দিয়েই হেমিংওয়ে তাঁর স্বকীয় স্বর নিয়ে ছোটগল্পের জগতে আবির্ভূত হন। এরপর হেমিংওয়ে প্রায় দুই ডজন গল্প লিখেছেন নিকের বয়ানে বা নিককে অন্যতম চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করে। তাঁর মৃত্যুর পর এই গল্পগুলো নিয়ে ‘দ্য নিক এ্যাডামস স্টোরিজ’ শীর্ষক একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। যেখানে শিশু থেকে তরুণ নিককে পাওয়া যায়। ১৯২৫ সালে ১৫টি গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয় হেমিংওয়ের প্রথম ছোটগল্পে সংকলন ‘ ইন আওয়ার টাইম’। ইন্ডিয়ান ক্যাম্প ছাড়াও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প স্থান পায় সংকলনটিতে। ‘সোলজার’স হোম’ গল্পটির প্রকাশকাল ১৯২৫ সাল। এ গল্পের ক্রেবজ চরিত্রটি আসলে হেমিংওয়ে নিজেই। যুদ্ধফেরত একজন সৈনিকের হতাশাগ্রস্ত জীবন এই গল্পের মূল বিষয়বস্তু। অনুগল্প আকৃতির ‘এ ভেরি শর্ট স্টোরি’ গল্পটি ইন আওয়ার টাইম গ্রন্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প। গল্পে হাসপাতালে সেবা দিতে গিয়ে প্রথম বিশ^যুদ্ধে আহত সৈনিকের প্রেমে পড়ে যায় নার্স। তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সৈনিক আমেরিকায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসার পর সেই নার্সের একটি চিঠি পায় এই মর্মে যে সে নতুন করে এক অফিসারের প্রেমে পড়েছে। অসফল প্রেম সেটি। এই সংকলনের বহুল পঠিত গল্প ‘ক্যাট ইন দ্য রেইন’ প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে। গল্পটি হেমিংওয়ের যাপিতজীবনের অংশবিশেষ। গল্পটি তিনি যখন লেখেন তখন তাঁর প্রথম বিয়ে ভাঙনের মুখে। তাঁর প্রথম স্ত্রী হ্যাডলি তখন দু‘মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি একদিন টেবিলের তলায় বেড়াল দেখে হেমিংওয়েকে বলেছিলেন, আমি একটি বেড়াল চাই। আমি চুল বড় করতে না পারলে অন্তত একটি বেড়াল তো পেতে পারি। উল্লেখ হ্যাডলির চুল ববকাট ছিল। হেমিংওয়ের দ্বিতীয় গল্পসংকলন প্রাকাশিত হয় ‘মেন এ্যান্ড উইমেন’ শিরোনামে ১৯২৭ সালে। এই সংকলনে স্থান ১৪টি গল্প। এর ভেতর ‘হিলস লাইক হোয়াইট এলিফেন্টস’ এবং ‘দ্য কিলারস’ গল্পদুটি হেমিংওয়ের বহুল পঠিত গল্পগুলো ভেতর অন্যতম। ‘হিলস লাইক হোয়াইট এলিফেন্টস’ গল্পের সেটিং স্পেন। শুরুতেই পাহাড়-গাছপালা দিয়ে বেষ্টিত রেলস্টেশনের ডিটেইল বর্ণনা দেয়া হয়েছে। মাদ্রিদের ট্রেন ধরার জন্য এক আমেরিকান তার বান্ধবীকে নিয়ে স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছে। ওরা বিয়ার অর্ডার করে। বান্ধবী বলে যে সামনের পাহাড়টা দেখতে শে^তহস্তির মতো। আমেরিকান পুরুষটি তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছে না বলে জানান। তারা পান করতে থাকে। বান্ধবী ফের বলে, পাহাড়টি আর সাদা হাতির মতো দেখাচ্ছে না। তারপর তারা মেয়েটির সম্ভাব্য অপারেশন করা নিয়ে কথা বলে। ‘দ্য কিলারস’ গল্পটি হেমিংওয়ে লেখেন মাদ্রিদে এক হোটেলে বসে। তাঁর অন্যতম সেরা গল্প এটি। গল্পটির উপর শতাধিক আলোচনা লেখা হয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে এবং এর ছায়া অবলম্বনে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এ গল্পে নিককে কৈশোর থেকে তারুণ্যে পৌঁছাতে দেখা যায়। তৃতীয় গল্পসংকলন ‘উইনার্স টেক নাথিং’ প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ সালে। এই সংকলনেও ১৪টি গল্প স্থান পায়। এ সংকলনের ‘অ্যা ক্লিন, ওয়েল-লাইটেড পেইস’ গল্পে প্রায় শেষরাত করে পানশালা থেকে বড়ি ফেরেন গল্পের বধির বৃদ্ধচরিত্রটি। তিনি পান করছেন আর দুজন ওয়েটার তার উঠে যাওয়ার অপেক্ষা করছে। তারা তাকে নিয়ে নিজেদের ভেতর কথা বলছে। একজন ওয়েটার জানায় যে বৃদ্ধ সম্প্রতি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। কারণ হিসেবে তারা হতাশাকে চিহ্নিত করে। হতাশার কারণ একজন ওয়েটার জিজ্ঞেস করলে অন্যজন উত্তর দেয় ‘নাথিং’। কারণ তার অনেক টাকা আছে, এরপর যোগ করে সে। ওয়েটাররা দেখে রাতের অন্ধকারে এক সৈনিক এক মেয়েকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ওয়েটারের একজন বৃদ্ধের গ্লাসে ব্রান্ডি দিতে দিতে বলে, আপনার সেদিন মারা যাওয়াই উচিত ছিল। যুবক ওয়েটারটি প্রার্থনা করে বৃদ্ধ যেন জলদি উঠে পড়ে, তাহলে সে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর কাছে যেতে পারবে। বৃদ্ধ ওয়েটারটি ক্যাফে পরিষ্কার ও আলোক-উজ্জ্বল করে রাখার কথা চিন্তা করে। এ সংকলনের ‘দ্য সি চেঞ্জ’ বা ‘সমুদ্র পরিবর্তন’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে দ্য কোয়ার্টার পত্রিকায়। গল্পটির বিষয় উভয়গামিতা বাই সেক্সুয়ালিটি। গল্পটিতে ফিল নামে ছেলেটির এবং আনামা মেয়েটির সম্পর্কের আসন্ন বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায় যখন তার মেয়েটির অন্য সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে থাকে। ফিল তার প্রেমিকার সম্পর্ককে ‘বিকৃতি’ বা ‘অন্যায়’ হিসেবে আখ্যা দেয়-যা মেয়েটি মানতে চায় না বা প্রতিবাদ করে। আলোচ্য সংকলনের ‘দ্য মাদার অব এ কুইন’ গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ সালে। হেমিংওয়ে সমকামিতা নিয়ে যে কয়েকটি গল্প লিখেছেন তার মধ্যে ‘দ্য মাদার অব এ কুইন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৩৮ সালে পূর্বোল্লিখিত তিনটি গ্রন্থের গল্পগুলোর পাশাপাশি আরও তিনটি বড়গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘ফার্স্ট কলাম এ্যান্ড দ্য ফার্স্ট ফোরটি-নাইন স্টোরিজ’ শিরোনামে একটি এ্যানথলজি। এ সংকলনে স্থান পাওয়া হেমিংওয়ের মিতব্যয়ী কথনের গল্প ‘ব্রিজের ধারে বৃদ্ধ’ (ওল্ড ম্যান এট দ্য ব্রিজ) প্রথম প্রকাশিত হয় ‘কেন’ ম্যাগজিনে ১৯৩৮ সালে। গল্পটি যুদ্ধ এবং মৃত্যু নিয়ে। স্পেনিস সিভিল ওয়ার চলাকালীন একজন যোদ্ধা এবং ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধের কথোপকথন। সকলে ব্রিজ পেরিয়ে শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। বৃদ্ধ যেতে চান না। হয়ত এই ব্রিজের ধারেই তার মৃত্যু হবে। ‘কিলিমান্জারোর বরফপুঞ্জ’ গল্পটি হেমিংওয়ের বহুল পঠিত গল্পগুলোর একটি। আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃৃঙ্গ কিলিমানজারো দিয়ে গল্পটি শুরু হয়। গল্পটি অবলম্বনে একই শিরোনামে ১৯৫২ সালে আমেরিকান ও ১৯১১ সালে ফরাসী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ‘দ্য শর্ট হ্যাপি লাইফ অব ফ্রান্সিস মাকম্বর’ গল্পটির প্রেক্ষাপটও আফ্রিকা। ফ্রান্সিস মাকম্বর ও তার স্ত্রী মার্গারেট আফ্রিকা যায় শিকারে। সেখানে স্ত্রীর ভুল ফায়ারে নিহত হয় মাকম্বর। হেমিংওয়ের সবচেয়ে সফল গল্পগুলোর এটি একটি। এছাড়া হেমিংওয়ের জীবদ্দশায় অগ্রন্থিত গল্পের সংখ্যাও কম ছিল না। গ্রন্থিত অগ্রন্থিত এবং ছোট বড় সব মিলে তাঁর ৭০টির মতো গল্পের দেখতে পাওয়া যায়। দ্য ওল্ড ম্যান এ্যান্ড দ্য সী (১৯৫২) প্রকাশের কিছুদিন পর হেমিংওয়ে আফ্রিকায় সাফারি ভ্রমণে যান। সেখানে তিন পরপর দুটি বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পান কিন্তু বাকি জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি শারীরিক পীড়া নিয়ে কাটান। তিনি ১৯৩০-এর দশকে ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টে এবং ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে কিউবায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি আইডাহোর কেচামে একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং সেখানে ১৯৬১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।
×