ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা ফুটবল লিগ না হওয়ায় জাতীয় দলের সাবেক মহিলা ফুটবলার অম্রাচিং মারমার একরাশ ক্ষোভ-হতাশা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১২ অক্টোবর ২০১৯

মহিলা ফুটবল লিগ না হওয়ায় জাতীয় দলের সাবেক মহিলা ফুটবলার অম্রাচিং মারমার একরাশ ক্ষোভ-হতাশা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা কে? উত্তরটা খুবই সহজ-সাবিনা খাতুন। একটা সময় ছিল দেশসেরা এই ফরোয়ার্ডের প্রবল ও যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অম্রাচিং মারমা। ঘরোয়া ফুটবলে সাবিনার মতো গোল করতেন অজস্র। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের প্রায় শুরুর দিকেই অম্রাচিং ছিলেন দলের অপরিহার্য সদস্য। জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছেন দশ বছর (২০০৪-২০১৪)। ২০১০ সালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবলে দেশের হয়ে করেছিলেন প্রথম হ্যাটট্রিক। তার একসময়ের সতীর্থ সাবিনা যখন জাতীয় দলের হয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন ২৯ বছর বয়সী অম্রাচিং চাকরি করছেন বাংলাদেশ আনসারে। রাঙামাটিতে মূল কর্মস্থল হলেও আপাতত আছেন গাজীপুরের শফিপুর আনসার একাডেমিতে। ২০০৮ সাল থেকেই আছেন এই সার্ভিসেস সংস্থায়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে দুবার (২০১১ ও ২০১৩ সালে) মহিলা ফুটবল লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে দু’বারই শিরোপাজয়ী দলের সদস্য ছিলেন খাগড়াছড়ির মেয়ে অম্রাচিং (যথাক্রমে শেখ জামাল ধানমণ্ডি এবং আবাহনীর হয়ে)। ক্যারিয়ারের শুরুতে অম্রাচিং ছিলেন মিডফিল্ডারই! এছাড়া ২০১০ এসএ গেমসে খেলেন ডিফেন্সে! লিওনেল মেসি আর মার্তার ভক্ত অম্রাচিং। ভাই কমল ফুটবল খেলতেন, তাকে দেখেই ফুটবল খেলতে শুরু করেন তিনি। ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগর মহিলা ফুটবল লিগে আবাহনীর হয়ে খেলতে গিয়ে নাসরিন স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে একাই করেছিলেন ১৪ গোল! খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে ২০১৩ সালে ‘সি’ লাইসেন্স’ কোচিং করেছিলেন অম্রাচিং। কিন্ত সেই ভবিষ্যত ধূসর হয়ে যায়। ফুটবলেই যে আর থাকা হলো না এই পাহাড়ীকন্যার। কারণটা তিনি নিজেও জানেন না। তবে ফুটবল এখনও তাকে নাড়া দেয়, ভাবায়। চর্মগোলকের এই খেলাটি নিয়ে অনেক ক্ষোভ-হতাশা আছে তার। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এক পোস্টের মাধ্যমে তা প্রকাশও করেছেন। সেখানে তিনি আর্জেন্টিনা দলের বাংলাদেশে আসা, সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে, গত কয়েক বছর ধরে বার বার ঘোষণা দিয়েও বাফুফের মহিলা ফুটবল লিগ চালু করতে না পারা, সার্ভিসেস সংস্থায় চাকরিরত নারী ফুটবলারদের ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো : ‘যখন খবরের শিরোনামে দেখি সবার প্রিয় মেসি আমাদের দেশে আসবে ফুটবল খেলার যাদু দেখাতে, তখন সবার মতো আমারও খুশি হওয়ার কথা। কেউ চাই না মাঠে বসে মেসিদের খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে। যাকে ফুটবলের রাজপুত্র বলা হয়, যার কোটি কোটি ভক্ত দেশে-বিদেশে, তার খেলা সরাসরি দেখা, এটা তো স্বপ্নের মতো একজন মেসি-ভক্ত হিসেবে। তার আসার খবরে সবাই খুশি হলেও আমি খুশি হতে পারিনি। আমার খুশি না হওয়ার কারণ মেসি না, মেসিকে তো আমিও পছন্দ করি, ওনার খেলার স্টাইল আমিও ফলো করি, তাহলে আমি খুশি নই কেন? যখন আমি এই লেখা লিখছি, তখন টিভির শিরোনামে আমাদের ছোট বোনদের জয়ের মুহূর্ত আমার চোখের সামনে। সাফ অনুর্ধ-১৫ ফুটবলে ভুটানের সাথে জয়ের মুহূর্ত। জয় দেখেও আমি খুশি হতে পারলাম না। এতক্ষণে মনে হয় সবার মনে একটা প্রশ্ন উঁকি মারছে-আমি কি ফুটবলের বিরোধিতা করছি কি না? আসলে আমি ফুটবলের বিরোধিতা করছি না। এই কথাগুলো একজন ফুটবল খেলোয়ারের জমে থাকা কষ্ট মাত্র। আমিও একজন খেলোয়ার। একজন খেলোয়ার কিভাবে মেসিদের আসাতে খুশি হতে পারে না? আপনাদের বলছি, আমি একজন সাবেক জাতীয় মহিলা ফুটবল টিমের সদস্যা। আমার মতো অনেকেই আছে একসময় জাতীয় দলে খেলতো। কিন্তু এখনও খেলা ছাড়েনি। কিন্তু খেলাই তাদের ছেড়ে চলে গেছে। সেটা কিভাবে? উত্তর হচ্ছে-গত ৪ বছর যাবত আমাদের কোন টুর্নামেন্ট হয় না, কোন জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হয় না, কোন ক্লাব লিগ হয় না, কোন কর্পোরেট লিগ হয় না, কোন জেলা পর্যায়ে খেলা হয় না। তাহলে খেলা আমাদের ছাড়বে না তো কে ছাড়বে? ২-৩ মাস আগেও একটা আশার কথা শুনেছিলাম, যে ক্লাব লিগ হবে। সেই খবরও এখন অতীত। কোন আশায় মেসিদের আগমনে খুশি হবো বলেন? অন্য একটা প্রসঙ্গ। মহিলা ফুটলারদের যে দুটি সংস্থা খেলার বিনিময়ে চাকুরি দিয়েছিল, যেমন- আনসার এবং বিজেমসি। আমার জানা মতে এই দুই সংস্থার খেলার জন্য অনেক সুনাম আছে। অন্য খেলার মতো ফুটবলাদের চাকরির সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু যদি চার বছর যাবত কোন খেলাই না থাকে, তাহলে তারা কিভাবে ফুটবলারদের চাকরিতে রাখবে? বিজেমসির খবর জানি না, আনসার থেকে অলরেডি মহিলা ফুটলারদের ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। যে মেয়েগুলো মাস শেষ হলে বাবা-মার হাতে কিছু টাকা তুলে দিত, আজ তারাই বেকার হয়ে বসে আছে। এই আশায় যেকোন খেলা হোক, কোন রোজগার হোক, খেলা তো আর হয় না। লজ্জা, লজ্জা, একজন খেলোয়ার হিসেবে লজ্জা! মেসি, তুমি আসবে বলে স্টেডিয়াম পাড়ায় রঙ্গীন আলোয় সাজবে। কিন্তু আমার মতো কোন খেলোয়ারের ঘরে আলো তা নিভু নিভু করছে! এত এত টাকা খরচ করে, মেসিদের খেলা ব্যবস্থা করতে পারলে কেন মেয়েদের লিগ চালাতে পারবে না বাফুফে? নাকি তারা জানে না বাংলাদেশে মহিলা ফুটবলার আছে?’ সবশেষে অম্রাচিং রূপনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একটা আফসোস- তোমরা যতই ভাল খেল না কেন, ভবিষ্যতে তোমাদেরকে রেখে খেলা ছেড়ে চলে যাবে!’
×