ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ॥ চাই সঠিক সমাধান

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ॥ চাই সঠিক সমাধান

সময় বদলে যায়। মানুষও বদলায়। এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ কতটা বদলেছে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু চরিত্র বদলায়নি আমাদের। এখনও সেই মারামারি, হানাহানি আর উত্তেজনা। একটি দেশ যখন আর্থিকভাবে এগোয় তখন তার দরকার শান্তি। পাশের দেশগুলোকে ফেলে দ্রুত এগিয়ে চলা বাংলাদেশের মানুষের একটা স্বভাব- তারা উন্নয়নের শতভাগ ফল ভোগ করবে, কিন্তু আওয়ামী বিরোধিতা ছাড়বে না। যে বিষয়টা এখন দেশের ভেতর আওয়ামী বিরোধী হাওয়াকে গরম করে রাখছে। রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পারা বিএনপি-জামায়াত বা যারা সুবিধা করতে পারছে না, তাদের ইন্ধনে বুয়েটের আসল ঘটনা প্রায় পথ হারানোর পথে। সবার আগে সরকারী দলের সমালোচনা করা প্রয়োজন। তাদের যে আত্মশুদ্ধি বা আত্মসমালোচনার দরকার তা শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। তিনি কঠোর ভাষায় নিজেদের সমালোচনা করেছেন এই বলে, কিসের ছাত্রলীগ, কিসের দল? এমন করে এর আগে কেউ বলেছেন? তারপরও দেখলাম, সব আলোচনা-সমালোচনার ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্ট টার্গেট শেখ হাসিনা। কেন এমন, সেটা বুঝতে খুব বেশিদূর যেতে হবে না। একদিকে যেমন পান থেকে চুন না খসার অর্ডার দিতে হয় তাঁকে, আরেকদিকে বিরোধীরা সবকিছু সহ্য করলেও তাঁকে সহ্য করতে পারে না। কারণ তারা জানে তিনি আছেন বলেই দেশ দেশের জায়গায়। মূলত সবাই জানেন শেখ হাসিনা বা দল নয়; দায়ী দলের কিছু নেতাকর্মী আর গডফাদারদের প্রশ্রয়। বুয়েটের ঘটনা কি প্রমাণ করেছে? সবাই জেনে গেছেন ছাত্ররা আর ছাত্র নেই। মূলত সমাজে যে অপরাধ প্রবণতা, যে নৃশংসতা আর নিষ্ঠুরতা তার এক উলঙ্গ প্রমাণ বুয়েট। র‌্যাগিং আগেও হতো। বড়রা ছোটদের অত্যাচার শুধু বুয়েটে না, সব জায়গায় করে। এর চরম নিদর্শন থাকার পরও ঘটনাগুলো বাইরে আসে না। এই নিস্তব্ধ-নিশ্চুপ অত্যাচার আজ যখন সাংঘাতিক রূপ নিয়েছে, তখনই সবাই হৈচৈ করছে। একবার ভাবুন, আপনি যে ছেলে বা মেয়েকে কোনদিন একটা চড় দেননি বা কান মলে দেননি, তাকে নির্মমভাবে প্রহার করছে একদল ছেলেমেয়ে। আজকাল বদলে যাওয়া বাংলাদেশে মেয়েরা মেয়েদের যেভাবে অত্যাচার করে, তা দাসীবৃত্তিকেও হার মানায়। এই যে জঘন্য মানসিকতা, এটা একদিনে তৈরি হয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয় এখন তা সাংগঠনিক রূপ ধারণ করেছে, যার নেতৃত্বে এসেছে ছাত্রলীগের নাম। দেখলাম, বুয়েটে সাময়িকভাবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে। এটা সাময়িক সমাধান। যখন ছাত্র রাজনীতি ছিল না, তখনও দেশে মারামারি হয়েছে। যখন থাকে, তখনও হয়। বন্ধ-খোলার ভেতর সমাধান নেই। সমাধানের পথ এখন দুর্গম। আমার মতে, এদেশে হঠাৎ খুলে যাওয়া ইন্টারনেট ও মোবাইল সাম্রাজ্য এক বিরাট ভূমিকা রাখছে এতে। একটি অপ্রস্তুত জাতির তারুণ্য এ থেকে যা কিছু নিষিদ্ধ, যা কিছু প্রবল উত্তেজনার, তা লুফে নিয়েছে। বিদেশী কায়দায় যাবতীয় অপকর্ম করার যতটা খায়েশ, ভাল কিছু নেয়ায় ততটাই আপত্তি। ছাত্র রাজনীতি এই অপকর্মকে দিয়েছে নতুন ইন্ধন। কারণ সরকারী দল মানেই যেন লাগাম ছাড়া। বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করতে চাই, যে সমাজে ছাত্রলীগের নেতা আসবে বলে ট্রাফিক আটকে রাখা হয়, যেখানে ছাত্রলীগের নেতাদের টাকা-পয়সা, দাপট আকাশ সমান, সেখানে কি আশা করবেন আপনি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না বলা পর্যন্ত কোন কাজ হয় না। এমন এক পরিবেশ- কাকে ক’দিনের রিমান্ডে নেয়া হবে বা কাকে জামিন দেয়া হবে না হবে সে জন্যও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা হয়! এটা কেমন রীতি? তিনি কেন সব বিষয়ে বলবেন? তাঁর কি সে সময় বা সুযোগ আছে? আজ বাংলাদেশ যে জায়গায় সেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পরিধি অর্থনীতি ও বাণিজ্য। এগুলো ঠিক করাই যেখানে মুখ্য, সেখানে দেশের ভেতরকার ছোট ছোট সমস্যাও শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া সমাধান বা নিষ্পত্তির মুখ দেখে না। এই নির্ভরতা কি প্রমাণ করে? গণতন্ত্র কি তা বলে? এদেশে জন্ম নেয়া-বড় হওয়া মানুষ আমরা। এর আগের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বেলায়ও এমন ছিল। পার্থক্য এই, তিনি এমন কঠিন আত্মসমালোচনা করতে পারতেন না। তারপরও দেখছি এক ধরনের অপরাজনীতির মূল টার্গেট শেখ হাসিনা ও তাঁর রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতির গর্ব বা অহঙ্কার নামের যা যা ছিল, তা আজ কাহিনী। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত না অনুচিত; এ নিয়ে যারা তর্ক করেন তাদের বলি, একাত্তর আর আজকের বাংলাদেশ কি এক? একটি পরাধীন জাতির ছাত্র সমাজ এবং স্বাধীন দেশের ছাত্র সমাজ কি এক? কোনটাই মিলবে না। সবচেয়ে বড় কথা, যদি আমরা মনে করি গাছের নামে ফল বা ফলেন পরিচয়তে, তাহলে একটা প্রশ্ন করা যৌক্তিক। আ স ম রব, সিরাজুল আলম খান, শাহজাহান সিরাজ, মাহমুদুর রহমান মান্না কোন্ বৃক্ষের ফল? আসলে সমাজের যে ভয়াবহ অধঃপতন, তার নমুনা দেখেছে জাতি। এই নির্মম নিষ্ঠুরতা বলে দিচ্ছে ঘরেবাইরে অমানুষ বাড়ছে। একজন ভ্যান চালকের ছেলেও আছে খুনীর দলে। যে বিষয়টা গর্বের, যে বিষয় নিয়ে আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারতাম- ভ্যান চালকের ছেলেও বুয়েটে পড়ে, আজ তা ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে সে ছেলে। প্রমাণ হয়েছে, বড়লোক, ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত কেউ বাদ যায়নি। সব পরিবারেই যেন আজ সন্ত্রাস, খুন আর হত্যার ছাপ। এ বড় কঠিন সময়। খারাপ লাগছে এটা দেখে যে, জাতীয় ক্রাইসিস বা এমন দুর্যোগেও রাজনীতিতে একতা নেই। সবাই মিলে ছাত্রলীগের বিরোধিতার পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে শক্তি যোগানো দরকার জেনেও চলছে উল্টো। যে কারণে আবরারের ঘটনা বার বার ফিরে আসার দুর্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। মাথাব্যথায় মাথা কাটা নয়। মনে হচ্ছে, পচে যাওয়া অঙ্গ কেটে না ফেললে সরকারী দল বা দেশের রাজনীতি কিছুতেই শান্তি পাবে না। এত উত্তেজনা? ছাত্রছাত্রী, ভিসি-অভিসি সব মিলে এ এক চরম উত্তেজনাকর পরিবেশ। আর মিডিয়াও আছে সমান তালে। শান্তি যে কোথায় কেউ জানে না। তার পরও শেখ হাসিনা সব সামাল দেবেন- এটাই জনগণের প্রত্যাশা। [email protected]
×