ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টানা তৃতীয় বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল, শিরোপা কার?

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

টানা তৃতীয় বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল, শিরোপা কার?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়সভিত্তিক নারী সাফ ফুটবলে বরাবরই দুটি দেশের প্রাধান্য, দাপট, আধিপত্য থাকে। ঘুরে ফিরে তারাই ফাইনাল খেলে, শিরোপা জেতে। এবারও তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী চাম্পিয়নশিপের শিরোপার স্বাদ পায় কারা, বাংলাদেশ, নাকি ভারত? মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ভুটানের চাংলিমিথান স্টেডিয়ামে শুরু হবে ফাইনাল খেলাটি। ফাইনালে জয়ের ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ? জনকণ্ঠের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপচারিতায় বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জানান, ‘ফাইনাল খেলাটি যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। যে কোন দলই জিততে পারে। সবার জন্য ফিফটি-ফিফটি চান্স।’ সেই সঙ্গে একটি দুঃসংবাদও দেন ছোটন, ‘দলে একটি ইনজুরি সমস্যা আছে। আমাদের অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র গ্রোয়েন ইনজুরিতে পড়েছে।’ তাহলে কি অধিনাকের ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা নেই? ‘এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমাদের হাতে এখনও বেশ কয়েকঘণ্টা সময় আছে ফাইনালের আগে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি শামসুন্নাহারকে ফিট করে তোলার জন্য। ওর জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। দেখা যাক কি হয়।’ ছোটনের জবাব। ভারত নিঃসন্দেহে শক্তিশালী দল। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলার ধরণটা কেমন হতে পারে? এ্যাটাকিং ফর্মেশন, নাকি ডিফেন্সিভ ফর্মেশন বা কাউন্টার এ্যাটাক স্টাইল? ‘অবশ্যই আমরা আক্রমণাত্নক স্টাইলে খেলবো।’ ছোটনের ভাষ্য। সবশেষে ছোটন জানান, তার দলের মেয়েদের মনোবল খুব ভাল আছে এবং সোমবার দলের সবার রিকভারি ট্রেনিং হয়েছে। শিরোপা জেতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। মজার ব্যাপার-সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের এই আসরে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দলই এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে! উভয় দলই শিরোপা জিতেছে একবার করে। ২০১৭ আসরে ঢাকায় ফাইনালে বাংলাদেশ ১-০ গোলে এবং ২০১৮ আসরে ভুটানে ফাইনালে ভারত একই ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। চলতি আসরে দু’দলই অপরাজিত দল হিসেবে ফাইনাল খেলবে। লিগ পর্বে দু’দলই পরস্পরের মুখোমুখি হলেও কেউ কাউকে হারাতে পারেনি। তবে ভারত গোল করেছে বেশি (১৫টি, এই আসরের সর্বাধিক), বাংলাদেশ করেছে কম (৫টি)। তবে গোল হজমের ক্ষেত্রে এগিয়ে বাংলাদেশই (২টি, ভারত ৩টি)। এই আসরে তিন দেশ পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা অংশ নেয়নি। ফলে দলের সংখ্যা কম (৪টি) হওয়াতে লিগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এই আসর। যাতে ইতোমধ্যেই এক ম্যাচ হাতে রেখে ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ ও ভারত। এ পর্যন্ত দু’দল মুখোমুখি হয়েছে চার বার। জিতেছে বাংলাদেশ ২ বার, ১ বার জয় ভারতের। ১টি ম্যাচ ড্র হয়। ২০১৭ আসরে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে গ্রুপ পর্বে ভারতকে ৩-০ গোলে হারায় লাল-সবুজরা। ফাইনালে আবারও মুখোমুখি হয় দু’দল। ফাইনালে আবারও ভারতকে হারায় স্বাগতিক বাংলাদেশ, এবার ১-০ গোলে। পরের আসরটি হয় ২০১৮ সালে ভুটানে। যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত খেলে দুই গ্রুপে। ভারত ‘এ’ গ্রুপের আর বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে সেমিতেও দেখা হয়নি দু’দলের। শেষ চারে নেপালকে ২-১ গোলে হারায় ভারত। অন্যদিকে ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। শিরোপা লড়াইটা হয় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ওই ম্যাচে বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতার পাশাপাশি বদলাও নিয়ে নেয় ভারত। সর্বশেষ চলতি আসরে লিগ পর্বে দু’দল ১-১ গোলে ড্র করে। ওই ম্যাচে উভয় দলই তাদের সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে রিজার্ভ বেঞ্চকে খেলায়। আজ অবশ্য সেরা একাদশই খেলাবে উভয় দল। এই আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করেছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোরে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। পক্ষান্তরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারত ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেয় নেপালকে। পরের ম্যাচে ভুটানকে বিধ্বস্ত করে ১০-১ গোলে। গত আসরে অল্পের জন্য শিরোপাটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার প্রায় নতুন একটা দল নিয়েই শিরোপা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন কোচ ছোটন। ২০১৭ সালে প্রথম শিরোপা জেতার পর এবং! ২০১৮ আসরে রানার্সআপ হবার পরই কোচ ছোটন বুঝতে পেরেছিলেন তাদের আগের স্কোয়াড থেকে মনিকা, মারিয়া, তহুরা বা আঁখির মতো অভিজ্ঞ প্রায় ১৫ ফুটবলারই বয়সের কারণে ২০১৯ আসরে খেলতে পারবে না। এটা মাথায় রেখেই বাফুফে বিভিন্ন ইভেন্ট থেকে (সুব্রত কাপ, জেএফএ অ-১৪ কাপ, ইউনিসেফ অ-১৬ ফুটবল এবং বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল) নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় সংগ্রহ শুরু করে। তারপর তাদেরকে বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে রেখে দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে ছোটনের জন্য সমস্যা হ একটিই-এই ব্যাচটা সম্পূর্ণ নতুন। এই দলের ৯ জনের আন্তর্জাতিক খেলার অভিজ্ঞতা আছে। বাকি ১৪ জনই সবাই নতুন। তবে দল নিয়ে ছোটন যথেষ্টই আশাবাদী। বাংলাদেশ কি পারবে ভারতকে হারিয়ে বদলা নেয়ার পাশাপাশি শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে? বাংলাদেশ অ-১৫ জাতীয় নারী ফুটবল দল ॥ রূপনা চাকমা, ইয়াসমিন আক্তার, উন্নতি খান, শামসুন্নাহার জুনিয়র (অধিনায়ক), নাসরিন আক্তার, সোহাগী কিসকু, রোজিনা আক্তার, কোহাতি কিসকু, শাহেদা আক্তার রিপা, রেহেনা আক্তার, নওসন জাহান, আবেদা আক্তার, আফেদিয়া খন্দকার, মাহফুজা খাতুন, মেহেনুর আক্তার, নুসরাত জাহান বৃষ্টি, ইতি খাতুন, জয়নব বিবি রিতা, সুমি খাতুন, সুরমা জান্নাত, পূর্ণিমা রাণী মণ্ডল, রুমি আক্তার ও স্বপ্না রাণী।
×