ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘে পাটতন্তু

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

জাতিসংঘে পাটতন্তু

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। শুক্রবার পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এজেন্ডা-২৪-এর আওতায় ‘কৃষি উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি’ বিষয়ক আলোচনায় বিষয়টি তুলে ধরেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, প্রকৃতিজাত কৃষিপণ্য পাট ও পাটজাত তন্তু শতভাগ পরিবেশবান্ধব এবং এর বহুমুখী ব্যবহারসহ পুনর্প্রক্রিয়া সম্ভব। যা অন্যবিধ কৃত্রিম তন্তু তথা প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় আদৌ। বর্তমানে পরিবেশ ও জলবায়ু দূষণ এমনকি সমুদ্র দূষণের অন্যতম একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক, যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সমগ্র বিশ্বে। অথচ প্রাকৃতিক তন্তু ও আঁশ জাতীয় প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের তেমন জনসচেতনতা তৈরি হয়নি। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রাকৃতিক তন্তু, যেমন পাট ও সিসালের ব্যবহার বিষয়ক বাংলাদেশের প্রস্তাবটি জাতিসংঘে উপস্থাপন করা বাস্তবানুগ ও সময়োপযোগী বৈকি। প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারে বৈশ্বিক সচেতনতা সৃষ্টিতে এই প্রস্তাব হতে পারে কার্যকর একটি দলিল, যা এর উৎপাদনকারী, সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি ভোক্তা সাধারণের জন্যও এনে দেবে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ। এর পাশাপাশি পরিবেশের জন্য সমূহ ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও কৃত্রিম তন্তু ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী একটি বুলন্দ আওয়াজ। উল্লেখ্য, কৃষিজাত পণ্য পাট, পাটজাত তন্তু এবং এর বহুবিধ সামগ্রী প্রস্তুতসহ রফতানিতে বাংলাদেশের রয়েছে এক অত্যুজ্জ্বল অতীত, যা কৃত্রিম তন্তুর আবিষ্কার ও ব্যবহারে হারিয়ে যেতে বসেছিল। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ তার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর জেনম সিকোয়েন্স আবিষ্কারসহ আন্তর্জাতিক পেটেন্ট পাওয়ার অধিকারীও বাংলাদেশ। জাতিসংঘ যদি বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হয়, তবে তা হবে আরও গর্ব ও গৌরবের। সত্য বটে, বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পাটের সুদিন আবার ফিরে আসছে। বাংলাদেশেও বেসরকারী পাটকলগুলো ভাল করছে। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রফতানি আয়ও বাড়ছে। অথচ সরকারী পাটকলগুলো ক্রমাগত লোকসান দিচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাটকলগুলোর লোকসান হয়েছে ৪৬৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণ ৩৯৫ কোটি টাকা। জগদ্দল পুরনো অবকাঠামোর আমলাতান্ত্রিক বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সরকারী পাটকলগুলোর ভবিষ্যত নেই বললেই চলে। পাটকলের লোকসান কমাতে অভ্যন্তরীণ খাদ্য ও আনুষঙ্গিক দ্রব্য পরিবহনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই বস্তাও সরকারী পাটকলগুলো সময়মতো সরবরাহ করতে পারে না। এক্ষেত্রে তারা বেসরকারী পাটকলগুলোকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায়সহ বিদেশে পাট রফতানিতেও রয়েছে নানা অনিয়ম-অভিযোগ। বাস্তবে স্বর্ণযুগ ফিরে আশার যুগই এখন সোনালি আঁশ। বর্তমানে পাট থেকে তৈরি হচ্ছে ২৩৫ রকমের আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পণ্য। সবচেয়ে বড় কথা, পাট থেকে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিথিন। বর্তমানে যে প্লাস্টিক পলিথিন দেশে ও বিদেশে যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে। তা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সমূহ ক্ষতিকর। শুধু স্থলভাগেই নয়, সাগর-মহাসাগর পর্যন্ত পলিথিন দূষণে জর্জরিত, পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে অবস্থায় বিকল্প হিসেবে পাটের পলিথিন ব্যবহারের অত্যুজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে ৫০০ বিলিয়ন পিসের। এর ১০ শতাংশ বাজার দখল করতে পারলে বছরে আয় করা সম্ভব ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাট খাতের বৈশ্বিক রফতানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। সে অবস্থায় সরকারী পাটকলে লোকসান হবে কেন? এই অবস্থার দ্রুত অবসানে প্রয়োজনে ভর্তুকিতে অভ্যস্ত বিজেএমসির খোলনলচে পাল্টে ফেলা জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী পাটতন্তুর বহুবিধ ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে জাতিসংঘকে।
×