ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

ঢাকার দিনরাত

বাসা থেকে জনকণ্ঠ ভবন, কাজ শেষ করে আবার বাসায় ফেরা। এই রুটিনের বাইরে গত সপ্তাহে যেতে হয়েছে দু’তিনদিন। ঢাকার দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে গেছি বিশেষ প্রয়োজনে। দুই দিকেই চলার গতিতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে মেট্রোরেলের কাজ। ঈদের আগে ঢাকাবাসীকে সুখবর দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল চালু হবে ইনশাল্লাহ। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। এরপর এমন কষ্ট ঢাকাবাসীকে আর পোহাতে হবে না। মেট্রোরেলের কাজের জন্য সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তবে ভাল কিছুর জন্য আমাদের সবাইকে একটু কষ্ট পোহাতে হচ্ছে, আশা করি এর সুফল ভোগ করার পর সব কষ্ট লাঘব হয়ে যাবে। মন্ত্রীর কথাগুলো মনে পড়ল বারবার। আবরার হত্যাকা- এবং তারপর আবরার হত্যাকা-ের পর আমাদের অনেকেরই উচ্চশিক্ষার জন্যে ঢাকায় প্রথম আসার কথা মনে পড়ে যাবে অবধারিতভাবে। নিজেকেই যেন দেখতে পেয়েছি সময়ের দর্পণে। মানের বিচারে দেশসেরা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠকালে একদল সহপাঠী ও সিনিয়র ভাইয়ের হাতে বর্বর পীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া যে সমাজের কত বড় পতনের চিহ্ন ধারণ করে, সেটি আমাদের অনেকেরই বিবেচনায় নেই। আমরা শুধু দুষছি ছাত্র রাজনীতিকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই বড় দায় নিয়মের ব্যতিক্রম ও অন্যায় কিছু ঘটলে তার প্রতিকার করা। এজন্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামরিক সরকার ছাড়া আর কোন সরকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেবে- এমনটি যে-ভিসি ভাবেন তিনি সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন বা হারান। দশকের পর দশক ধরে র‌্যাগিং ও ছাত্র রাজনীতির নামে বুয়েটে যা চলে আসছিল সেটি অপরাধেরই বিভিন্ন স্তর। পরিবারে এবং স্কুল-কলেজে মেধাবী ও ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত শিক্ষার্থী বুয়েটে এসে ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠছে কেনÑ এই প্রশ্নটির উত্তর জানা জরুরী। অসুখ জানলে ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। আমরা ভুলে যাচ্ছি না এই বুয়েটেই ছাত্রদলের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি বিনিময়ের সময়ে তার মাঝে পড়ে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ছাত্রী নিহত হয়েছিলেন। আজ বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছে, জেগে ওঠার পরিবেশও রয়েছে সমাজে; একইসঙ্গে তাদের ন্যায্য দাবী মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতাও জয়ী রয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে যদি বুয়েট থেকে অপরাধমূলক কর্মকা-ের চিরঅবসান হয়, প্রত্যাশিত সুন্দর পরিবেশ ফেরেÑ তবে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন। সেই অর্জনের নেপথ্যে আবরারের অকালমৃত্যু চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি মোঃ অনিক সরকার। পড়ছিলাম সেটি, আর নানা প্রশ্ন ভিড় করে আসছিল মনে। দ্বিতীয় দফা এলোপাতাড়িভাবে না পিটালে হয়ত আবরার মারা যেত না- এমন একটি সম্ভাবনার কথা ভেবে আফসোস হচ্ছে। জানি না অনিকের অনুতাপ হচ্ছে কিনা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত অনিকের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, অনিকের দেয়া জবানবন্দিতে আবরার ফাহাদকে ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। আবরার হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিক থেকে সন্তোষজনক অগ্রগতি হিসেবেই এটিকে দেখছে সমাজ। পথে পথে সারমেয় ঢাকার পথে পথে কি কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেল? জলাতঙ্কের জীবাণু নিশ্চয়ই বহন করছে এসব কুকুর। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ দেশের ৩৯টি জেলায় জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু শুধু ঢাকা শহরেই এখনও এর আওতার বাইরে রয়ে গেছে কয়েক হাজার কুকুর। সাধারণ পথচারীরা বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বের হয় কুকুরে কামড়ানোর আতঙ্ক নিয়ে। রাস্তায় কিংবা গলিতে কুকুর দেখা মাত্রই সবার মধ্যেই ভয় কাজ করে। তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনই বলছে, তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহায়তায় চলতি বছরেই ৯০ শতাংশ কুকুরের শরীরে ভ্যাকসিন দিয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে শতভাগ কুকুরকে জলাতঙ্ক নিরোধ প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রাপ্ত হিসাব মতে, গত ১৪ মে থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনের ৪২ হাজার ৯৩৫টি কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে ঢাকা শহরে কুকুরের সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশন এবং অন্য আরও পাঁচ সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের ৩৯ জেলায় সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনের অফিসের মাধ্যমে এ ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। গত ৬ অক্টোবরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এখনও দেশের ২৫ জেলায় জলাতঙ্কের এ ভ্যাকসিন পৌঁছেনি। তবে এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কিছু ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও অন্য দুটি হাসপাতালে ফ্রিজিং করে রাখা আছে, আর কিছু ভ্যাকসিন এ মাসেই ফ্রান্স থেকে দেশে আসছে। বাকি ২৫ জেলাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ভ্যাকসিন পৌঁছে যাবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা কথাশিল্পী ও সাংবাদিক মোস্তফা কামালের তিন উপন্যাস নিয়ে প্রাণবন্ত লেখক আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র এ আড্ডায় যোগ দেন কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ ‘দ্বিতীয় বইআড্ডা’র আয়োজন করে শ্রাবণ প্রকাশনী। শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা, অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিমানুষ’ ও ‘অগ্নিপুরুষ’- এ উপন্যাসগুলোতে কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষভাবে তাকে চিত্রিত করেছেন লেখক মোস্তফা কামাল। এসব উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১-এর সময়কাল। আড্ডায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেন, আমি খুব বেশি বই পড়ি না। তবে যখন পড়ি, তখন মন দিয়ে পড়ি। মোস্তফা কামালের লেখা আমি মন দিয়ে পড়েছি। তিনি ইতিহাসের সত্য ঘটনাকে উপস্থাপনের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। আর কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, অগ্নিপুরুষ- এই একটি শব্দ ব্যবহার করে মোস্তফা কামাল উত্তাল সময়কে তুলে ধরেছেন। এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বড় কোন ইতিহাস বই পাঠ না করে, উপন্যাস তিনটি পড়ে ইতিহাস জানতে পারবে। এরপর তারা নিজেদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকে জেনে নিতে পারবে। তাদের কাছে নতুন দিক উন্মোচন করবে। ইতিহাস পাঠ করার পাশাপাশি ইতিহাসের মানুষদেরও জানতে পারবে। সময়ের চিত্রকে উপন্যাসে চিত্রিত করা বড় কারিগরের কাজ। সে কাজটি মোস্তফা কামাল করেছেন। মোস্তফা কামাল লেখকের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করলেও, নিয়মিত লিখছি ১৯৯১ সাল থেকে। আমি প্রতিদিন লিখি। এটা আমার কাছে প্রার্থনার মতো। সেরা পাঠক খোঁজা কার্যক্রম সারাদেশে বইমেলা ও সেরা পাঠক খুঁজে নেয়া কার্যক্রম শুরু করেছে এ্যাডর্ন পাবলিকেশন। ‘আনন্দে বই, উৎসবে বই’ প্রতিপাদ্যে এই আয়োজনে ১৮ জেলায় ২১টি বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। কাঁটাবন মোড়ের কবিতা ক্যাফেতে সম্মিলিত এ কর্মসূচী উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘এটি একটি শুভকর দিক। আগে শুধু অমর একুশে গ্রন্থমেলা হতো। আর এখন ছোট-বড় অনেক বইমেলার আয়োজন করেন প্রকাশকরা। এতে পাঠক ও প্রকাশকদের মধ্যে একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, বইমেলার মাধ্যমে পাঠকরাও উপকৃত হয়।’ আয়োজক প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ জাকির হোসাইন জানান, এ্যাডর্নের বইয়ের প্রদর্শনী ও বিশেষ ছাড়ে বই বিক্রির ২১ দিনব্যাপী প্রথম কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৮ জেলায় ২১টি আলাদা আলাদা বুকশপ ও স্থানে কর্মসূচীর মাধ্যমে এ্যাডর্নের ১২ শতাধিক বই আকর্ষণীয় ছাড়ে পাঠকদের হাতে তুলে দিতে এই আয়োজন। আরও থাকছে এ্যাডর্নের বই ছুঁয়ে দেখুন, বই নিয়ে লিখুন প্রতিযোগিতা। যে কোন এক বা একাধিক বই পড়ে লিখবেন ৪০০ শব্দের মধ্যে। একটি বই নিয়ে একবারই একজন অংশ নিতে পারবেন। বই না কিনেও পড়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া যাবে। বই পাওয়া যাবে পাবলিক লাইব্রেরি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের অনুদানপ্রাপ্ত পাঠাগার, নিকটস্থ যে কোন পাঠাগার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতেও নিকটস্থ বুকশপে। এ্যাডর্নের ঠিকানায় প্রথম প্রতিযোগিতার লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ নবেম্বর। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার দেয়া করা হবে। একক বইমেলা শনিবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কাজী জহিরুল ইসলামের একক বইমেলা উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক। এ সময়ে মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত কবির নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘একালে কাকতলাতে বেল’ গ্রন্থেরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন রূপা চক্রবর্তী, আহকাম উল্লাহ, নাজমুল আহসান, আব্দুস সবুর খান চৌধুরী ও প্রান্তিক হোসাইন। কাজী জহিরুল ইসলামের বিভিন্ন গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেন কাজী রোজী, জাহিদুল হক, ফরিদ কবির, মারুফুল ইসলাম, রহিমা আখতার কল্পনা, গাজী রফিক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংস্থা স্কলারস পাবলিশার্সের সিইও এম ই চৌধুরী শামীম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহমদ রফিক বলেন, কাজী জহিরুল ইসলাম একজন গুণী লেখক, আমি বিস্মিত হয়েছি জেনে যে তিনি মাত্র ৫১ বছর বয়সে ৬১টি গ্রন্থের জনক। নিজের লেখা ছাড়াও তিনি বাঙালী কবিদের ইংরেজী কবিতার এ্যান্থোলজি আন্ডার দ্য ব্লুরুফ সম্পাদনা করছেন যা প্রকাশিত হচ্ছে আমাজনের মতো একটি আন্তর্জাতিক মাধ্যমে। এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি কাজ। এমন কাজ এর আগে আর কোন বাঙালী করেছেন বলে আমার জানা নেই। মারুফুল ইসলাম তার ‘ক্রিয়াপদহীন কবিতা’ গ্রন্থের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে বলেন, ক্রিয়াপদ তুলে দিয়ে এমন সাবলীল কবিতা লেখা এক দুরূহ কাজ। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজী জহিরুল ইসলামের একক বইমেলা চলবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৭ম তলায় অবস্থিত বাতিঘরে। শেষ হবে ১৯ অক্টোবর। প্রতিদিন বিকেলে পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন লেখক। ১৩ অক্টোবর ২০১৯ [email protected]
×