ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিন বদলের গান গাইছে যারা

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

দিন বদলের গান গাইছে যারা

ওরা কিছু দুঃসাহসী তরুণ, অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে বদলে দিতে চাইছে আমাদের পরিচিত পৃথিবী। সবারই বয়স তিরিশের নিচে, এ বয়সেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্য ছুঁয়ে তারা এখন প্রস্তুত আরও বড় লড়াইয়ের জন্য। তাদের এই লড়াই কতটা বদলে দেবে আমাদের জীবন সে উত্তর থাকুক সময়ের হাতে, আপাতত আমরা জেনে নেই এমন কিছু তরুণের গল্প। ধারাবাহিকের নবম পর্ব, লিখেছেন- পপি দেবী থাপা এ্যালেক্স রড্রিগেজ (২৩) সহ-প্রতিষ্ঠাতা এমবার্ক রোবটিক্সের প্রতি প্রবল ভালবাসা থেকে বন্ধু ব্র্যান্ডম মোয়াককে নিয়ে নতুন কিছু করার আশায় পাড়ি জমান সিলিকন ভ্যালিতে। সেখানে জিএম ক্রুজের মতো কোম্পানিতে যোগদানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রতিষ্ঠা করেন এমবার্ক। এ মুহূর্তে চালকবিহীন ট্রাকফ্লিট পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে এ কোম্পানি। বিখ্যাত সব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কোম্পানিতে ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ করেছে ৪৭ মিলিয়ন ডলার। এ্যালেক্সের শুরুটা মাফিন নামের এক রোবট দিয়ে। জুনিয়র হাই স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন ওয়ার্ল্ড রোবটিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন নিজের তৈরি তিন ফুট উচ্চতার রোবট মাফিন নিয়ে। যেটির কাজ ছিল হকি খেলার সামগ্রী কুড়িয়ে মাঠে একটি বিনে জড়ো করে রাখা। ২০০৩ সালে জিতে নেন ওয়ার্ল্ড রোবটিক চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই থেকে শুরু রোবটিক্স নিয়ে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখা। সেই স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এমবার্ক ট্রাক। তার আঠারো চাকার ব্লু পিটারবিট সেমি ট্রাকে স্বচালিত সফটওয়্যার। ২০১৮ এর শুরুতে এমবার্কের স্বচালিত ট্রাক এক উপকূল থেকে আর এক উপকূলে সফলভাবে যাত্রা সম্পন্ন করে। গন্তব্য ছিল সারবান লস্ এ্যাঞ্জেল্সে থেকে জ্যাকসন ভিল ফ্লোরিডা। এ্যালেক্সের ভাষায় আমাদের ট্রাকগুলো তৈরি হয়েছে হাই ওয়েতে চালানোর জন্য। আমরা মনুষ্যবিহীন যান পরিচালনায় এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি যা খুবই সহজ একই সঙ্গে নিরাপদ। আর এভাবেই স্বচালিত যানবাহন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এমবার্ক এগিয়ে আছে অনেকের চেয়ে। উবার কিংবা জিম ক্রুজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যখন তাদের রবো-ট্যাক্সি সার্ভিস নিয়ে গলদঘর্ম তখন এমবার্কের সেমি ট্রাকগুলো খুব সহজেই প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যেতে সক্ষম। সম্প্রতি পরিচালিত আমেরিকান ট্রাকিং এ্যাসোসিয়েশনের এক জরিপ জানাচ্ছে, বর্তমানে আমেরিকায় পরিবহন বাণিজ্যে অর্থের পরিমাণ সাত শ’ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বর্তমানে তারা ভুগছে ড্রাইভার সঙ্কটে। বিশেষ করে দূরের যাত্রায়। কেবল ২০১৭তেই পরিবহন সেক্টরে প্রয়োজনের চেয়ে ৫০ হাজার ড্রাইভার কম ছিল। ভবিষ্যতে এ সঙ্কট আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারনা। আর এখানেই এ্যালেক্স ও তার কোম্পানির রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। হাই স্কুল শেষে এ্যালেক্স রোবটিক্স নিয়ে পড়তে যান ওনটারিয়োর ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানেই তার পরিচয় এমবার্কেও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুয়াকের সঙ্গে। দু’জনে মিলে তৈরি করেন স্বচালিত গলফ্ কার্ট। তাদের দাবি অনুযায়ী, সেটিই কানাডায় প্রথম স্বচালিত কোন যান বা পরিবহন। বিশ বছর বয়সে তারা পাড়ি জমান সিলিকন ভ্যালিতে। সেখানে পরিচয় ক্রুজ সিইও কাইল ভোগটের সঙ্গে। ২০১৬ সালে ক্রুজ বিক্রি করে কাইল যোগ দেন বিশ্বখ্যাত জিএম কোম্পানিতে। তবে অনেক চেষ্টার পরেও এ্যালেক্স এবং মুয়াককে জিএম-এ যোগদান করাতে ব্যর্থ হন। এ্যালাক্স বলেন, কাইল আমাদের এটা বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত পড়ালেখা ছেড়ে আমাদের উচিত তার সঙ্গে যোগ দিয়ে নতুন কিছু করা। তিনি তার চেষ্টায় কেবল অর্ধেক সফল হয়েছেন অর্থাৎ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছি ঠিকই কিন্তু সেটি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি এমবার্কে আরও বেশি সময় দিব বলে। এ মুহূর্তে তাদের হাতে রয়েছে বিশাল ট্রাক বহর। এ বহরকে আরও উন্নত করতে চান তারা। আর এ লক্ষ্যে তারা নিজেরাই তৈরি করছেন সফটওয়্যার। পাশাপাশি কেবল নিজেদের বহরেই নয় অন্য পরিবহন সংস্থাগুলোও যেন তাদের সফটওয়্যার ব্যবহার করে উপকৃত হয় সে উদ্যোগও ব্যবহার করেছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পরিবহনের যে বিশাল বাজার তার ৭০ শতাংশ পণ্য পরিবাহিত হয় ট্রাকের মাধ্যমে। এ্যালেক্সের ভাষায় সাত শ’ বিলিয়ন ডলারের এই ট্রাকিং ইন্ডাস্ট্রিতে যে কোন উন্নতি আমাদের অর্থনীতিতে ফেলবে ইতিবাচক প্রভাব।
×