ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মনোরোগ ও আমাদের মনোস্তাত্ত্বিক ভাবনা

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

মনোরোগ ও আমাদের মনোস্তাত্ত্বিক ভাবনা

জন্মের পর প্রকৃতির নিয়মেই একজন মানুষের শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানসিক/মনের বিকাশ পর্যায় ক্রমে হয়ে থাকে। যে কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ইত্যাদি দিয়ে যে কোন মানুষই যে কোন বয়সে শারীরিকভাবে রোগাক্রান্ত হতে পারে, ব্যাহত হতে পারে সেই মানুষটির দৈনন্দিন কার্যকলাপ, ঠিক তেমনিভাবে যে কোন বয়সে যে কোন মানুষেরই বিভিন্ন কারণে তার মনের বিকাশ হঠাৎ করে থেমে যেতে পারে অথবা মনোরোগ/ মানসিক রোগ তৈরি হতে পারে এই মনোরোগের কারণে তৈরি হতে পারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক অথবা সামাজিক পর্যায়ে বৈকল্য ব্যাহত হতে পারে সেই মানুষটির দৈনন্দিন কার্যকলাপ আমাদের সমাজে আমরা শারীরিক অসুস্থতাকে খুব সাদরে গ্রহণ করতে পারি হোক তা ডায়াবেটিস, ডেঙ্গুজ্বর, যৌনরোগ অথবা ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি কিন্তু যদি কোন মানুষের মনোরোগ/মানিসক রোগ দেখা দেয় তখন আমাদের সমাজের, সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শারীরিক রোগের মতো মনোরোগকে সাদরে গ্রহণ করতে তো পারিই না বরং কোন মানসিক/মনোরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় উপহাস, ঠাট্টা এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং তাকে আখ্যায়িত করি ‘পাগল’ বলে। আমি একজন ভাষাবিদ এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনে করি ‘পাগল’ শব্দটি একটি অপশব্দ (ঝষধহম ড়িৎফ), এই শব্দটি একজন মনোরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্যবহার করা, সামাজিকভাবে অন্যায় এবং যিনি বা যারা এই শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন তার নিচু মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পাওে : যদি কোন ব্যক্তি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কোন মানুষকে নিয়ে কটূক্তি করেন অথবা হাসিঠাট্টা করেন তাহলে অসুবিধা সেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর নয়, যিনি মেনে নিতে পারছেন না তার, এই জন্য যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় দেখা গেছে এই বিশ্বভ্রমান্ডে যত মানবজাতি আছে, সবারই ‘মন’ আছে। মন ছাড়া কোন মানব জাতির অস্তিত্ব কল্পনীয় নয় কারণ মন থাকে মস্তিষ্কে এবং যার প্রারম্ভিক বিকাশ শুরু হয় মাতৃগর্ভে মস্তিষ্কে তথা স্থায়ুতন্ত্র গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, মন/মানসিকতার বিকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে একজন মানুষ তার পরিবার ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে কী ধরনের উদ্দীপনা ও প্রেরণা পেল তার ওপর আর এই জন্যই বলা হয়ে থাকে। ‘ব্যবহারই বংশের পরিচয়’ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে (ডড়ৎষফ গবহঃধষ ঐবধষঃয উধু) আমার সবার কাছে অনুরোধ/আবেদন থাকবে আপনারা মনোরোগ/মানসিক রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে জিন, ভূত, পরীধরা অথবা ভূতপ্রেতের আছর আছে বলে তথাকথিত বাবাদের কাছে চিকিৎসার জন্য ছুটে না গিয়ে অথবা হাসিঠাট্টা, উপহাস ও অসৌজন্যমূলক আচরণ না করে, তাদের চিকিৎসার আওতায় আনুন, কারণ শারীরিক রোগের মতো মানসিক/ মনোরোগের ও সঠিক ও সুচিকিৎসা আছে/ সুচিকিৎসা পেলে মনোরোগ/মানসিক রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। এটি রোগ ব্যতীত আর কিছুই নয়। প্রয়োজন সঠিক সচেতনতা এবং আমাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন। ডাঃ ফাহমিদা ফেরদৌস চিকিৎসা ভাষাবিদ এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ জেডএইচ সিকদার ওমেন্স মহিলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
×