ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঙালী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎসহ তিন মার্কিনীর নোবেল জয়

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

বাঙালী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎসহ তিন মার্কিনীর নোবেল জয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ। তারা হলেন, অভিজিৎ ব্যানার্জি, এস্তার দুফলো ও মাইকেল ক্রেমার। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস স্থানীয় সময় সোমবার বেলা এগারোটায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায়) এ পুরস্কার ঘোষণা করে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। অভিজিৎ ব্যানার্জি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন ও ড. মুহম্মদ ইউনুসের পর চতুর্থ বাঙালী হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেলেন কলকাতায় জন্ম নেয়া অভিজিৎ ব্যানার্জি। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত তিনি। অভিজিতের সঙ্গেই নোবেল পেয়েছেন তার স্ত্রী মার্কিন অর্থনীতিবিদ এস্তার দুফলো। তিনি ফরাসী বংশোদ্ভূত। দ্বিতীয় নারী অর্থনীতিবিদ হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিনি। সর্বকনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার কৃতিত্বও দুফলোর। ৪৬ বছর বয়সে নোবেল জিতলেন দুফলো। আর তার স্বামী অভিজিৎ জিতলেন ৫৮ বছর বয়সে। অভিজিৎ-দুফলো দম্পতির সঙ্গে নোবেল জেতা আরেক অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যৌথভাবে তাদের তিনজনকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কার দেয়া হয়। বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে নিরীক্ষাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এই তিনজনকে অর্থনীতিতে নোবেল দেয়া হয়। তারা দারিদ্র্য বিমোচনে পথ খুঁজতে উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষণার ধরন বদলে দিয়েছেন। এবার নোবেল পুরস্কারের ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (সাত লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড) ভাগ করে নেবেন তারা। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। এর আগে গত ৭ অক্টোবর চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন দুই মার্কিন ও এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম কায়েলিন জেআর ও গ্রেগ এল. সিমেনজা এবং ব্রিটেনের স্যার পিটার জে. র‌্যাটক্লিফ। ৮ অক্টোবর বিকেলে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ বিভাগে এবার যৌথভাবে নোবেল জিতেছেন জেমস পিবলস, মিশেল মেয়র ও দিদিয়ের কেলোজ। এর মধ্যে জেমস পিবলস পেয়েছেন পুরস্কারটির অর্ধেক। আর বাকি অর্ধেক পেয়েছেন মিশেল মেয়র ও দিদিয়ের কেলোজ; অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ করে। ৯ অক্টোবর রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। এ বছর যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন জন বি. গুডেনাফ, এম. স্ট্যানলি হুইটিংহাম ও আকিরা ইয়োশিনো। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় তাদের এ পুরস্কার দেয়া হয়। ৯ অক্টোবর একসঙ্গে দুই বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন অস্ট্রিয়ান ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও অনুবাদক পিটার হান্দকে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের জন্য নোবেল পেয়েছেন পোল্যান্ডের লেখক, অধিকারকর্মী ও বুদ্ধিজীবী ওলগা তুকারজুক। বিতর্কের কারণে গতবছর এ বিভাগে পুরস্কার স্থগিত রাখা হয়। ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় ঘোষণা করা হয়েছে শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম। এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলি (৪৩)। সবশেষ সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হলো। যার মাধ্যমে শেষ হলো এ বছরের নোবেল পুরস্কার বিতরণ। ১০ ডিসেম্বর নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একযোগে নোবেল পুরস্কার বিতরণ করা হবে। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯০১ সাল থেকে নিয়মিত নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা, পদার্থ, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতি- এ ছয়টি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটি। বাঙালীর ফের নোবেল জয় ॥ এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় জন্ম নেয়া অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জী। অমর্ত্য সেনের পরে দ্বিতীয় বাঙালী হিসেবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই সম্মানে ভূষিত হলেন অভিজিৎ বিনায়ক। একইসঙ্গে নোবেল সম্মান পেলেন তার স্ত্রী এস্তার দুফলোও। পুরস্কৃত হলেন অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমারও। নোবেল কমিটি জানাচ্ছে, দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে গবেষণার জন্যেই পুরস্কার দেয়া হলো এই ত্রয়ীকে। এস্তার বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ অর্থনীতির নোবেল প্রাপক। বিশ্বের দ্বিতীয় নারী হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিনি। দ্বিতীয় বাঙালী হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পাচ্ছেন অভিজিৎ ব্যানার্জী। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন অমর্ত্য সেন। এবার তার ছাত্র অভিজিৎ পেলেন নোবেল। বাঙালী হিসেবে চতুর্থ হিসেবে অমর্ত্য সেনের ছাত্র এই মুহূর্তে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে এমআইটিতে কর্মরত অভিজিৎ বিনায়ক। ২০১৩ সালে অভিজিৎ ও এস্তার যুগ্মভাবে ‘আব্দুল লতিফ জামিল প্রোভার্টি এ্যাকশান ল্যাব’ গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বের দারিদ্র্যদের নিয়ে গবেষণার জন্যে। তাদের পরীক্ষামূলক গবেষণাকেই সম্মান জানাচ্ছে নোবেল কমিটি। ১৯৬১ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম অভিজিৎ বিনায়কের। তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা সারেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন অভিজিৎ। সেই বছরই স্নাতকোত্তর পড়তে চলে যান জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইনফরমেশন ইকোনমিক্স। অভিজিৎ জাতিসংঘেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ পরবর্তী ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা কর্মসূচীতে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতিনিধি প্যনেলের সদস্য ছিলেন তিনি। অর্থনীতি বিষয়ে তার লেখা চারটি বই বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। তার মধ্যে ‘পুওর ইকোনমি’ বইটি গোল্ডম্যান সাচস বিজনেস বুক সম্মানে ভূষিত হয়।
×