ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের মধুপুরে জিপসাম সারে আনারস ও কলা বাগান নষ্ট

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

টাঙ্গাইলের মধুপুরে জিপসাম সারে আনারস ও কলা বাগান নষ্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের মধুপুরে আদিবাসী গারো কৃষক জয় নকরেকের (৩২) জমিতে জিপসাম সার প্রয়োগের ফলে কলা ও আনারস বাগান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসী গারো কৃষক বাড়ি উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের আমলিতলা গ্রামে। জানা যায়, আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের কৃষক হরেন্দ্র নকরেকের পুত্র জয় নকরেক (৩২) তার শশুরের নিকট থেকে মধুপুর বনাঞ্চলের ধলিবাইদ এলাকায় ৮ বিঘা জমি প্রতি বিঘা ৭ হাজার টাকা করে লিজ নিয়ে ৭ বিঘায় কলা এবং ১ বিঘায় আনারস চাষ করেছেন। কলাগাছ পরিপক্ক হয়ে গাছে থোর ও কলা ধরতে শুরু করেছে। কলা আরো পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য বাজার থেকে ২ বস্তা ইউরিয়া, ২ বস্তা টিএসপি, ২ বস্তা পটাস ক্রয় করেন। এর সাথে স্থানীয় ঘুঘুর বাজারের আব্দুল হামিদের মেসার্স সিরাজ ষ্টোর থেকে ৫ বস্তা রহিমা আফরোজ এগ্রো লিমিটেড কোম্পানীর তারা জিপসাম লেখাযুক্ত জিপসাম সার ক্রয় করে বাগানে নিয়ে গিয়ে দেখেন মুখ খোলা সেলাই বিহীন বস্তার মধ্যে আর একটি নাম সীলহীন আরেকটি সাদা বস্তার মধ্যে জিপসাম সার ভরা। সকল সারের সাথে এই সার মিশিয়ে প্রয়োগ করার কয়েক দিন পর থেকে বাগানের কলা ও আনারস বাগানের গাছের অবস্থা খারাপ হতে থাকে এবং বাগানের গাছ ধীরে ধীরে সতেজতা হারিয়ে বিবর্ণ হতে দেখা যায়। আস্তে-আস্তে কলা গাছের শেকড় পঁচা ও পাতা মরে যাচ্ছে। কলা একে বেঁকে যাচ্ছে। কলার ছড়িতে অনেক কলা পঁচা ও মরা মরা ভাব দেখা দেয়। আনারস বাগানে গাছের মাইজ পাতা নষ্ট হয়ে পঁচন ধরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় কৃষক হতাশা হয়ে পড়েছে। ধার দেনা করে এ পর্যন্ত তার ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানান। কোন সার বা কোন কারণে এমন হল তা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়ে ক্ষোভ। কৃষক জয় নকরেকের ধারণা মুখ খোলা বস্তা জিপসাম সারের কারণে এমনটা হতে পারে। আমলিতলা গ্রামের সবিমল মাঝি (৫৫) জানান, জয় নকরেক গত বছর ৮ বিঘা জমি আমার নিকট থেকে কলা ও আনারস আবাদের জন্য লিজ নিয়েছে। গাছ লাগানো থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত অতি যতœ করে আসছে। সম্প্রতি ৫ বস্তা জিপসাম সারের সাথে মিশ্রন করে বাগানে প্রয়োগের ফলে বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বাগানে গিয়ে দেখেছি কলার থোরগুলো চিকন হয়ে এঁকেবেঁকে বের হচ্ছে। বাগানে তার অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। একই গ্রামের চিত্তরঞ্জন মাঝি (৬০) ও আব্দুল খালেক (৫০) জানান, আমরা বাগানে গিয়েছিলাম। বাগানের সিংহভাগ গাছ, কলা, থোর নষ্ট হয়ে গেছে। আনারসের গোড়সহ পঁচন ধরেছে। পচনকৃত গাছে আর আনারস ধরার সম্ভাবনা নেই। তাদের ধারণা খোলাকৃত বস্তার সারের কারণে এ অবস্থা হতে পারে বলে আশংকা করছেন তারা। এ ব্যাপারে কৃষক জয় নকরেক(৩২) জানান, তার লিজ নেয়া জমিতে সার নেয়ার সময় অন্যান্য সারের সাথে রহিমা আফরোজ এনে ৫ বস্তা তারা জিপসামের মধ্যে ১টি বস্তার মুখ সেলাই খোলা ছিল। খোলা বস্তা নিতে না চাইলে দোকানদার আব্দুল হামিদ বলে দিয়েছেন এতে কোন সমস্যা হবে না। এ কথা শুনে সার বাগানে নিয়ে প্রয়োগ করার কয়েক দিনের মধ্যে বাগানের কলা ও আনারসের গাছ নষ্ট হতে শুরু করে। দিন দিন বাগানের অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। ধার দেনা করে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। কলা ও আনারস ভাল হলে ৬ লক্ষাধিক টাকা পেতো বলে তিনি জানান। ধার দেনা নিয়ে সে এখন চিন্তিত। স্থানীয় সার ব্যবসায়ী মেসার্স সিরাজ ষ্টোরের স্বত্তাধিকারী আব্দুল হামিদ জানান, ১০টা জিপসাম সারের বস্তা স্থানীয় রক্তিপাড়ার ডিলার আলমগীরের কাছ থেকে তিনি এনেছেন। এর মধ্যে ২টি বস্তা সেলাই খোলা ছিল। সেই ২টি বস্তা জয় নকরেক ও ভূটিয়ার কৃষক আলম নিয়ে বাগানে দিয়েছেন। খোলা বস্তা সারের কারণে এমনটি হতে পারে বলে তিনি আশংকা করছেন। তিনি তার ডিলারকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহামুদুল হাসান জানান, অভিযোগ পেয়েই অফিসের একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম, সে বাগান দেখে এসেছে। আবারও সরজমিনে যাবো। কয়েক ধরনের সার একত্রে মিশিয়ে বাগানে প্রয়োগ করেছে। কোন সার বা কোন কারণে বাগান নষ্ট হয়েছে। তা দেখতে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
×