বিশ্বে এখন বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বন্যা খরা ঘূর্ণিঝড় অগ্নিকা- এসবে ক্ষয়ক্ষতি যাতে হ্রাস পায় তার জন্য যা ব্যবস্থা নেয়ার ইতোমধ্যে সরকার তা নিয়েছে। যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং সবাই মনে করে এটাও বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখার রয়েছে। এই বাস্তবতা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে দেশের তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, দেশের ৬৪ জেলায় ১১ হাজার ৬০৪টি দুর্যোগসহনীয় বাড়ি এবং ১৪ জেলায় ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন। একই সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৮২ জনকে সম্মানিত করা কেবল দেশের স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য অনুপ্রেরণারই নয়, বরং দায়িত্ব সচেতনতার স্বীকৃতিরই পরিচায়ক। প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকা-, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সব সময় সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবেলায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেছেন, কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কি কি করণীয় সে সবের প্রচার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান করবে। যেসব নির্দেশনা আছে তার ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। এছাড়া দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও সবাইকে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার পূর্বাভাস আগে থেকে জানা যায় না। এ ছাড়া একে আটকানোরও কোন পথ নেই। এ অবস্থায় সচেতনতা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অনেক অগ্রসর হলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ভূমিকম্পকে মোকাবেলা করার মতো প্রস্তুতিতে আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়। আর এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে ভূমিকম্পের সময় ও তারপর কি করণীয় সে সম্পর্কে মানুষকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে। ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রয়োজন সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারাভিযান। মানুষকে বোঝাতে হবে যে, ভূমিকম্প হলে উত্তেজিত না হয়ে সাবধানে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ভূমিকম্প মোকাবেলায় তৈরি মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ অনুসরণে বাড়ি তৈরির পরামর্শ আগামীতে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায়। দুর্যোগ মোকাবেলায় বর্তমানে প্রায় ৫৬ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। তাছাড়া ৩২ হাজার নগর স্বেচ্ছাসেবক, ২৪ লাখ আনসার ভিডিপি, ১৭ লাখ স্কাউট, ৪ লাখ বিএনসিসি, গার্লস গাইডের প্রায় ৪ লাখ সদস্য- তারাও এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যে দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্ববাসীর কাছে একটি আদর্শÑ তাতে কোন সন্দেহ নেই।