ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজউক ভবন থেকে বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ৭১ নথি জব্দ

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

রাজউক ভবন থেকে বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ৭১ নথি জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনারের ব্যক্তিগত অফিস থেকে বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের ৭১ নথিসহ ফাইল জব্দ করেছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজউকের এ্যানেক্স ভবনের ৫১৪ নম্বর কক্ষ থেকে রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক অভিযানে নথিগুলো উদ্ধার করা হয়। এ সময় সংস্থাটির সদস্য (ভূমি), সদস্য (প্রশাসন), পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তারসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংস্থাটি কর্তৃক সম্প্রতি দালালমুক্ত করতে শুরু করা এক শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানা গেছে। এ সময় এসব ফাইল ছাড়াও রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সিল, সিটি কর্পোরেশনের ভুয়া প্রত্যয়নপত্র, অসংখ্য জাতীয় পরিচয়পত্রসহ পর্নো সিডি উদ্ধার করা হয়। রাজউক চেয়ারম্যান বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। এ সময় পারভেজ নামের রাজউকের এক অফিস সহায়ক এ কক্ষের ভেতরে দরজা বন্ধ করে অবস্থান করছিলেন। পরে উপস্থিত রাজউকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আহ্বানে সে বের হয়ে আসে। সূত্র জানায়, রাজউকের চেয়ারম্যান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন একটি বিশাল চক্র রাজউকের বিভিন্ন সরকারী ফাইল রাজউকেরই অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরে সহায়তায় নানা রকম জাল জালিয়াতি করে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়াতে নীরবে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালনা করলে হাতেনাতে তার প্রমাণ পায়। সূত্র জানায়, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এসব ফাইল রাজউকের রেকর্ডরুম থেকে নিজের কাছে রেখে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বাড্ডা পুর্নবাসন প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করে আসছিল। জানা যায়, কক্ষটি ১৯৮৬ সলের ১ মার্চ মেসার্স পলি ওভারসিজ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে মাসিক ১৫ হাজার ৮২০ টাকা হারে ফজলুল হক নামে একজন বরাদ্দ নেন। এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্ষটির ভাড়া পরিশোধিত রয়েছে। তার থেকে কালোর্স ট্রেড লিমিটেড নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কক্ষটি ভাড়া নেয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক এম এ কাইয়ুম। তিনি মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও অখণ্ড ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিতর্কিত ও আলোচিত কমিশনার ছিলেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন সাকে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের ভাগিনা পরিচয়দানকারী মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনির। দেশে অবৈধ সোনা আমদানির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে সবাই গোল্ডেন মনির নামে পরিচিত বলে জানা গেছে। রাজউক কর্মকর্তার জানান, রাজউকের বাড্ডা প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্লটগুলো নিজেরা ভাগিয়ে নিয়ে তা অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিত। এই দুই ব্যক্তি রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ফাইলগুলো রাজউকের কেন্দ্রীয় রেকর্ড রুমে না রেখে তাদের ব্যক্তিগত এ অফিসে এনে রাখতেন। সেখানে কর্মকর্তাদের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে নিতেন। তবে কমিশনার কাউয়ুন ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় বর্তমানে দেশের বাইরে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজউকের অভিযানে সংস্থাটির অফিস সহকারী উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত জবানবন্দী প্রদান করেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, অফিসটি সাবেক কমিশনার কাইয়ুম ও গোল্ডেন মনিরের ছিল। তাদের লোকজন এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গোল্ডেন মনির সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের ভাগিনা। তারা বিভিন্নভাবে প্রকল্পের নথিগুলো নিয়ে এসে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল কাগজপত্র সাজাতেন। রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি এভাবে রাজউকের বিভিন্ন ফাইল গায়েব করে ফেলত। অথচ এই ফাইলগুলো থাকার কথা রাজউকের কেন্দ্রীয় রক্ষণাগারে। জানতে চাইলে রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের নিয়মিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে চেয়ারম্যান সাহেব ওই ফ্লোরে অভিযান চালান। তখন অফিসটিতে ঢুকে তিনটি কক্ষের মধ্যে একটিতে আমাদের বাড্ডা প্রকল্পের প্রায় ৭১টি নথি পাওয়া গেছে। সেখানে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সিলও পাওয়া গেছে। বাড্ডার সাবেক একজন কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্রের দুটি বই যেখানে ফাঁকা ব্যাক ডেটে সই স্বাক্ষর রয়েছে। এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ বলেন, আমাদের বেশকিছু কক্ষ অনেক বছর যাবত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়াদেয়া রয়েছে। যা নিয়ে বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে। আমরা তাদের রুমটি ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় আমরা রায় পেয়েছি। পরে আদালত তাদের অফিস সরিয়ে নেয়ার জন্য ৬ মাস সময় দিয়েছে। যার ৩ মাস ইতোমধ্যে চলে গিয়েছে। আমরা অভিযান চালিয়ে তিনটি কক্ষের একটিতে আমাদের বাড্ডা প্রকল্পের ৭১টি ফাইল পেয়েছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট স্টোরে এসব ফাইল থাকার কথা থাকলেও কিভাবে এসব ফাইল ওখানে নিয়ে গেলে এর সঙ্গে কে কে জড়িত তা বের করতে আমরা একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছি। একইসঙ্গে অভিযুক্ত পারভেজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনানুযায়ী ফৌজদারি আইনেও মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।
×