ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মেলা উদ্বোধনীতে খাদ্যমন্ত্রী

দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ম্ভর, এবার জোর পুষ্টিমানে

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ম্ভর, এবার জোর পুষ্টিমানে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ মধ্য আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের শতভাগ পুষ্টিমান খাবার নিশ্চিত করে অচিরেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মন্ত্রী বলেন, দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি আমরা এবার পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্যে জোর দিচ্ছি। বুধবার ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যত, পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাক্সিক্ষত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ব খাদ্য দিবসের ২০১৯ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে তিন দিনব্যাপী বিশ^ খাদ্য মেলা উদ্বোধন করেন মন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব আরিফুর রহমান অপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থাইল্যান্ডের মাহিডল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ভিসিথ চাভাসিট। মূল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমা শাহীন, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র পরিচালক ডাঃ তাহমিদ আহমেদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. কবির ইকরামুল হক। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সব সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি, বিজ্ঞানী ও গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ সেমিনারে অংশ নেন। কৃষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানের দীর্ঘ বর্ণনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে উদ্বৃত্তও থাকছে। আমরা এখন খাদ্য রফতানির জন্য বাজার খুঁজছি। এখন জনগণের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিতে সরকার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছি। মন্ত্রী বলেন, শুধু আইন দিয়ে আর সরকার চেষ্টা করলেই হবে না, নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিতের জন্য জনগণকেও সচেতন হতে হবে। বলতে হবে, ভেজাল খাব না-ভেজাল বিক্রি করতে দেব না। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সংগ্রহের মাধ্যমে প্রায় ১৮.৪৮ লাখ মে.টন চাল ও গমের মজুদ গড়ে তুলেছে যা বিগত সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। খাদ্যশস্য সংরক্ষণ সুবিধা ১৪ লাখ থেকে ২১ লাখ মে.টন করা হয়েছে। কৃষকরা যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় যেজন্য ২০০ সরকারী ধান সংরক্ষণাগার নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যেখানে ১০ লাখ মে.টন ধান সংরক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি হবে। কৃষিবান্ধব নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশ এখন দানা জাতীয় শস্য, সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনের সপ্তম। বর্তমান সরকার খাদ্য উৎপাদন ও প্রাপ্যতা বাড়াতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যে সরকার জোর দিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, বিধিবিধান তৈরি করা হয়েছে। এসব আইনকানুন নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে অচিরেই ফলপ্রসূ প্রভাব ফেলবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। তবে শুধু আইন দিয়েই নয় জনগণের সচেতনতার ওপরও গুরুত্ব দেন মন্ত্রী। সাধনচন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৬ সাল থেকে দেশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে বছরে কর্মভাবকালীন ৫ মাস ১০টাকা কেজিদরে মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এটি হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, টিআর, চা শ্রমিক, ওএমএস স্কুল ফিডিং খাতে গত বছর প্রায় ১৮ লাখ মে.টন খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে কখনও খাদ্য ঘাটতি ছিল না। নীল চাষে ব্রিটিশ আমলে এ ভূখ-ে খাদ্য ঘাটতি শুরু হয়। যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বিগত সরকারগুলোর আমলেও বহাল ছিল। সাম্প্রতিক কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বার বার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে মাছ ২শ’ টাকা কেজির নিচে নেই, পোল্ট্রি মুরগির কেজি ১৩০-১৪০ টাকা। আমরা বিদেশে পোল্ট্রির মাংস রফতানির প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, কেউ যাতে সীসা ঢুকাতে না পারে। গবাদিপশুর উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রামে এমন কোন বাড়ি পাবেন না, যেখানে একটিও গরু পাওয়া যাবে না। এক সময় গ্রামে গোয়ালঘর উঠে গিয়েছিল। এখন নতুন করে আবারও গোয়ালঘর ফিরে এসেছে। এ সময় হঠাৎ করে দুধে সীসা আছে বলে প্রচার করা হলো। ধস নামল দুধের বাজারে। কৃষকের মাথায় হাত এবং খামারিরা পথে বসে গেলো। আমরা এগিয়ে যেতে চাইলেও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র আমাদের টেনে ধরার চেষ্টা করছে।
×