ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জোকার কি সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে!

প্রকাশিত: ১৩:২০, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

জোকার কি সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে!

সুপার হিরো দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ভিলেন বা খলনায়ক চরিত্র নিয়ে বানানো সিনেমা জোকার মুক্তি পাবার আগে থেকেই বিতর্ক চলছিল। জোকার কি সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে? ‘জোকার’-এর প্রচারের প্রচারণা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্নার ব্রোসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে কলোরাডোর হত্যাযজ্ঞের শিকার পরিবারগুলো। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে কলোরাডোর এক সিনেমা হলে ব্যাটম্যান ‘ডার্ক নাইট রাইজেস’-এর প্রিমিয়ার শোতে এক তরুণের নির্বিচার গুলিতে ১২ জন নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়। মানসিকভাবে অসুস্থ একজন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালায়। তার ধারণা ছিল মানুষ হত্যা করে আরও উঁচুতে উঠতে পারবে এবং এটা তাকে প্রশান্তি দেবে। হত্যাযজ্ঞের শিকার পরিবারগুলোর মতে জোকার সিনেমাটিও এই একই ধরনের মানসিক রোগীদের সহিংসতার প্রতি উস্কে দিতে পারে। পরিবারগুলোর আবেদন ওই এলাকায় জোকার মুক্তি দেয়া হয়নি। একই সঙ্গে তারা ওয়ার্নার ব্রোসের কাছে জোকার সিনেমা থেকে আয়ের একটি অংশ সে সময়ের আহতের এবং নিহতদের পরিবারকে প্রদান করার অনুরোধ জানায়। অস্ত্র আইন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ বিতর্কিত বিষয়। পরিবারগুলো ওয়ার্নার ব্রোসকেও দেয়া চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আইনের সংশোধন চায় না এমন কোন রাজনৈতিক দলকেও অনুদান না দেয়ার আহ্বান জানায়। বলে রাখা ভাল যুক্তরাষ্ট্রে অটোমেটিক রাইফেলের মতো অস্ত্রও যে কেউ বিশেষ কোন অনুমতি ছাড়াই যখন তখন কিনতে পারে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী ৫ জন নিহতের পরিবার এই চিঠি লেখে। ভবিষ্যতে এ রকম কোন চরিত্র নিয়ে সিনেমা নির্মাণের আগে আবার ভাবাও উচিত বলে পরিবারগুলো মনে করে। এদিকে জোকার দেখতে অনেক দর্শকই জোকারের মতো মুখে রং মেখে সিনেমা হলে প্রবেশ করছিল। নিরাপত্তার ঝুঁকি বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের হলগুলোকে রং মেখে দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি ছদ্মবেশী পুলিশদেরও মোতায়েন করা হয়েছে সিনেমা হলে। দর্শকের ছদ্মবেশী এসব পুলিশ সিনেমা চলাকালীন সার্বিক নিরাপত্তার দিকে নজর রাখছেন। কিন্তু জোকার সিনেমায় সমস্যা কোথায়? জোকার সিনেমার গল্প গড়ে উঠেছে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ঘিরে। পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের ব্যর্থতার ফলে সে এক সময় সহিংসতা বেছে নেয়। এ ছাড়াও সিনেমায় প্রচুর সহিংস এবং রক্তপাতের দৃশ্য আছে। আর সমালোচকদের যুক্তি এই ছবি এ রকম মানসিকভাবে অসুস্থ লোকদের প্রশান্তির খোঁজে সহিংস হতে উস্কে দিতে পারে। কারণ জোকার সিনেমায়ও তাই হয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীনতার বেড়াজালে থাকা মানুষগুলো নিজেদের গল্প বলতে একই পন্থা বেছে নিতে পারে। ডিসি কমিক্সের এক চরিত্রের ওপর নির্মিত এ চলচ্চিত্রে জোকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জোয়াকিন ফিনিক্স। ওয়ার্নার ব্রোস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে জোকার এমন কোন সিনেমা নয় যেটা সমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তারা এটাও বলেছে জোকারকে সিনেমায় হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। নিউইয়র্কের অন্যতম চলচিত্র সমালোচক ডেভিড এডেলস্টাইন মনে করছেন জোকার প্রতিশোধমূলক কাজে জ্বালানি যোগাতে পারে। অনিচ্ছাকৃতভাবে জোকার চরিত্রটি তার পথ অনুসরণ করা শেখাতে পারে বলে মোট দিয়েছেন প্রযোজক দাভিদ ইরলিচ। তবে বিপরীত মতামতও দিয়েছেন অনেকেই। আরেক সমালোচক স্কট মেন্দেলসনের মতে সিনেমার এক চরিত্রকে বাস্তব জগতে কি হলো সেটার দায় দেয়া যায় না। এসব ছাপিয়ে দর্শক কিন্তু ঠিকই সিনেমা দেখতে যাচ্ছেন। ভেনিস চলচিত্র উৎসব জয় করেছে জোকার। দিন শেষে সিনেমার গল্প পর্দাতেই থাকুক এমন প্রত্যাশাই সবার।
×