ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পৈশাচিক

প্রকাশিত: ১২:০৮, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

পৈশাচিক

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পাশবিক কায়দায় শিশু তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। গলা কেটে জবাই নয়, ছোট্ট এই শিশুটির কান ও লিঙ্গ কেটে ফেলার লোমহর্ষক ঘটনা সবাইকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়েছে। পাষাণ খুনীরা হত্যা করেই খান্ত হয়নি, তার লাশ গাছের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এমন মর্মস্পর্শী হৃদয়বিদারক ঘটনা সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শিশুটির পিতা আবদুল বাছিত নিজেই তার শিশু সন্তানটিকে চাকু দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে মেরে ফেলে। তাকে সহায়তা করে তার ভাই ও ভাতিজা। বাবা নিজেই শিশু তুহিনকে হত্যা করে প্রতিবেশীর ঘাড়ে দোষ চাপানোর লক্ষ্য নিয়েই এমন নৃশংস জঘন্য ঘটনাটি ঘটায়। সঙ্গে ছিল তুহিনের চাচা ও চাচাত ভাই। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই এমন অমানুষিক নির্যাতনে শিশুটিকে চির বিদায় নিতে হলো। নিজেদের দ্বন্দ্ব, সংঘাত, বিবদমান উন্মত্ত শত্রুতার জের মেটাতে হবে নিজ সন্তান হননের মধ্য দিয়ে? মানবিক সভ্যতার এমন বিপর্যয় আমাদের শেষ অবধি কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে? বাবা-চাচার হাত কাঁপেনি একটুও! অসহায় নিষ্পাপ সন্তানের করুণ মুখচ্ছবি তাদের বিন্দুমাত্র আলোড়িত করেনি? এ কোন সামাজিক অভিঘাত, যেখানে অমানবিকতার দুর্ভেদ্য বলয়ে আমাদের সভ্য মানুষের বসবাস। এই পশুবৃত্তি সারাদেশের মানুষকে আলোড়িত করেছে। শিশুর নিরাপদ জায়গাটি যখন বিভীষিকাময় হতে সময় নেয় না, সেখানে কচিকাঁচাদের যথার্থ নিরাপত্তা কোথায়? সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শ উঠে আসে শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যার মতো লোমহর্ষক, ন্যক্কারজনক ঘটনা। মায়ের হাতে শিশু সন্তানের মৃত্যু আমরা দেখেছি। পরকীয়ার জের কিংবা অভাব-অনটনে সন্তান হত্যার ভয়াবহ পরিণতিও মেলে। কিন্তু প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলতে ঠা-া মাথায় এমন পাশবিক বর্বরতা সত্যিই এতদিন সবার অজানা ছিল। সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনবোধ যখন মানুষকে কোন সুষ্ঠু পথ নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়, তেমন অসঙ্গত, অসংলগ্ন মুহূর্তগুলো যে কাউকেই সর্বনাশের সর্বশেষ পর্যায়ে নামিয়ে আনতে অপশক্তি হিসেবে উন্মত্ত করে তোলে। পাঁচ বছরের অসহায় তুহিনও সেই অদম্য অপরাধ প্রবণতার নৃশংস বলি। শিশুটির মা কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করলে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার যথার্থতা যাচাই করতে বাবা-চাচাকে আটক করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বাবা-চাচার বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে নিলেও সন্তানহারা হতভাগিনী মায়ের কোলটি আর কি কখনও ভরে উঠবে?
×