ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্কুল থেকেই শুরু হোক

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 স্কুল থেকেই শুরু হোক

বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক, রেল, নৌ এবং বিমান চলাচলকে সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দিতে সরকার প্রতিনিয়ত তার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় নতুন রাস্তা, উড়াল সেতু, কালভার্টসহ আরও আনুষঙ্গিক বিষয়ে সরকারের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প দৃশ্যমান হতে খুব বেশি সময় লাগছে না। যাত্রীবাহী আধুনিক ট্রেন নিয়েও সরকারের জনবান্ধব কর্মযোগ জনগণের প্রতিদিনের জীবনের আবশ্যিক পর্যায়। তেমন কর্মোদ্যোগে নতুনভাবে সংযোজিত হলো আরও একটি ট্রেন সার্ভিস। বুধবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ঢাকা-কুড়িগ্রামে লেনে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস। গণভবন থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতায়াত ব্যবস্থার রেল পথের অপার সম্ভাবনাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনেন। শুধু তাই নয়, দেশের যোগাযাগ মাধ্যমের সব সূচকের সমন্বয় সাধন এবং উন্নয়ন তৎপরতা বাড়ানো ছাড়া পুরো কাঠামোকে সংহত করা যাবে না। প্রসঙ্গক্রমে এসেই যায় বিএনপির আমলে রেল বন্ধের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের অযৌক্তিক ব্যাপারটিও। অনুষ্ঠানে উন্নয়নের মহাযজ্ঞে কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সম্ভাবনাকেও প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। লালমনিরহাটে একটি এ্যারোস্পেস এ্যান্ড এ্যারোনটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিমান তৈরির আধুনিক প্রযুক্তির প্রকল্পকেও সরকার ইতোমধ্যে আমলে নিয়েছে। উত্তরবঙ্গের এসব অঞ্চলে এককালে মঙ্গার দুঃসময় দেশ পার হয়ে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী সামনে আরও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আবার এই অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গানকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলতে সরকার তার প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করে যাবে বলেও মত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে গণভবন থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভুলতায় চার লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার, সেতু, বাইপাসসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কর্মযোগের উদ্বোধন করা হয়। সড়কের ব্যাপারে আবারও নতুন করে শৃঙ্খলা রক্ষার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একেবারে স্কুল থেকেই শিশুদের সড়ক পরিবহন বিধির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া দেশ ও মানুষের স্বার্থে জরুরী। রাস্তা পারাপার, ফুটপাথ ব্যবহার করা, ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পথচারীর যাতায়াত সবই একটি নিয়মবিধির আওতায় একেবারে ছোট থেকে সবাইকে জেনে নিতে হবে। এটি যখন-তখন পথ দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে নিয়ামক শক্তি হবে। সিভিল ডিফেন্সের মতো নাগরিক সুরক্ষার ব্যাপারটিও স্কুল থেকে শিক্ষা দেয়া একান্ত আবশ্যক। অগ্নিনির্বাপণ, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার মতো তাৎক্ষণিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও ছোট্টমণিদের প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষা শুধু পুঁথিগত কিংবা পরীক্ষা পাসের জন্য নয়, জীবন সঙ্কটের মতো দুর্ভোগকেও উপস্থিত কর্মযোগে নিজেদের আয়ত্তে রাখা চাই প্রাথমিক সুরক্ষার বিশেষ উপায় হিসেবে। এসবই শিশু-কিশোরদের জ্ঞানের প্রয়োজনীয় বিষয় হওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সুতরাং এ ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। মানুষের জীবনের চেয়ে দামী অন্য কিছু নয়। সুতরাং সেই মূল্যবান জীবনকে রক্ষা করতে আনুষঙ্গিক অনেক বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা শিক্ষার্থীকে তার প্রতিদিনের জীবন নিরাপদ করবে। উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি বাংলাদেশের অবকাঠামোসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচকে বিভিন্নভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে। সামগ্রিক খাতে উন্নয়ন দৃশ্যমান না হলে সার্বিক প্রবৃদ্ধিও সেভাবে উঠে আসে না। বাংলাদেশ আজ তার অনেক ক্রান্তিকালকে পেছনে ফেলে নিরন্তর সামনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তেমন সমৃদ্ধ ধারাবাহিকতায় সর্বসাধারণের দায়বদ্ধতাও বিশেষ জরুরী। সচেতনভাবে সমূহ বাধাবিঘ্নকে সজাগ এবং সতর্কতার সঙ্গে অতিক্রম করতে হবে। একা সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়ত বিচারিক আইনানুগ ব্যবস্থার মাধ্যমে আসলে মুশকিল পুরো সামাজিক বলয়কে নিশ্চিত আর নিরাপত্তার বেষ্টনী দেয়া। প্রতিটি নাগরিকের সার্বক্ষণিক নজরদারি, আইনের বিধিনিষেধের প্রতি সম্মান, তার চেয়েও বেশি মানবিক মূল্যবোধে সংহত হতে পারলেই অশনি সঙ্কেত থেকে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।
×