ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে আজ শুরু শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 চট্টগ্রামে আজ শুরু শেখ কামাল আন্তর্জাতিক  ক্লাব কাপ ফুটবল

জাহিদুল আলম জয়, চট্টগ্রাম থেকে ॥ নগরীর সব পথ যেন এসে জড়ো হয়েছে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের বাহারি নৈপুণ্যের পর এবার আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে মুখরিত হতে চলেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। আজ থেকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীতে শুরু হচ্ছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলের তৃতীয় আসর। টুর্নামেন্ট উপলক্ষে গোটা চট্টলা শহরে সাজ সাজ রব। আয়োজকরা শেষ করেছেন সবধরনের প্রস্তুতি। গ্যালারি দর্শক টইটুম্বর করতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এবারের আসরে পাঁচ দেশের আটটি ক্লাব দুই গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ক্লাব আছে মাত্র দু’টি। আজ সন্ধ্যায় ‘এ’ গ্রুপে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাবের ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠছে এবারের আসরের। মজার বিষয় হচ্ছে, এই দুই দলই সর্বশেষ দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন। ২০১৫ সালে প্রথম আসরে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় আসরে বাজিমাত করে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস। দুই চ্যাম্পিয়ন দল এবার একই গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই শুধু করছে না; মুখোমুখি হচ্ছে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে। অনেকদিন পর দর্শকদের মধ্যে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভাল করার কারণেই আবারও ফুটবলমুখী হয়েছেন ভক্তরা। সর্বসাধারণ বলছেন, ভাল খেললে দর্শক ঠিকই মাঠে আসবে। তাই তো শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে গ্যালারি ভরপুর থাকবে বলে আশা করছে আয়োজকরা। শুক্রবার ঢাকা থেকে এক বহর সাংবাদিক এসেছেন বন্দর নগরীতে। নগরীতে পা ফেলার পরই বোঝা গেছে ঝাঁজ। যেন ফুটবল জোয়ারে কাঁপছে চট্টলা। দর্শকদের মধ্যে বিরাজ করছে বাড়তি উৎসাহ-উদ্দীপনা। ভারতের বিরুদ্ধে জাতীয় দলের ম্যাচই দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তারা সরাসরি মাঠে বসে জামাল, ইয়াসিন, ইব্রাহিমদের খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। দর্শকদের সুবিধার কথা ভেবে আয়োজকরা ১০ ও ২০ টাকার নামমাত্র মূল্যে টিকেটের ব্যবস্থা করেছে। এবারের আসরে ‘এ’ গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাব, ভারতের মোহনবাগান এ্যাথলেটিক ক্লাব, লাওসের ইয়ং এলিফেন্ট ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। প্রথমে ‘বি’ গ্রুপের দলগুলো ছিল বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস, ভারতের চেন্নাই এফসি, মালয়েশিয়ার তেরাঙ্গানো এফসি ও বাংলাদেশের ঢাকা আবাহনী। কিন্তু শেষক্ষণে ঢাকা আবাহনী নাম প্রত্যাহার করলে তাদের বদলে নেয়া হয়েছে ভারতের আরেক ক্লাব গকুলাম কেরালাকে। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারতের এই ক্লাব এএফসির ছাড়পত্র পায়নি। দুই গ্রুপের শীর্ষ দু’টি করে দল সেমিফাইনালের টিকেট পাবে। ফাইনালের টিকেট পাওয়ার লড়াইয়ে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন-‘বি’ গ্রুপ রানার্সআপ এবং ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন-‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ। দু’টি সেমিফাইনাল হবে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর। আর শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল হবে ৩০ অক্টোবর। আসরের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৫০ হাজার ইউএস ডলার ও রানার্সআপ দল পাবে ২৫ হাজার ডলার। আর আসরের অংশগ্রহণ মানি ১০ হাজার ইউএস ডলার। এবার জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া খেলছেন চট্টগ্রাম আবাহনীতে। অতিথি হিসেবে খেললেও তিনি চট্টগ্রামকে শিরোপা উপহার দিতে চান। এ লক্ষ্যে আজই টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন টিসি স্পোর্টসের মুখোমুখি হচ্ছে তার দল। টুর্নামেন্ট নিয়ে শুক্রবার জামাল ভুঁইয়া বলেন, চট্টগ্রাম আবাহনীর একমাত্র লক্ষ্য শিরোপা জয়। আশা করছি সেটা হবে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যেতে চাই। জয় দিয়ে মিশন শুরু করতে চাই। চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক বলেন, আমার লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। চিটাগাং এসেছি শিরোপা জয়ের জন্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে ও কৃতী ক্রীড়া সংগঠক শহীদ শেখ কামালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য এই আসরের যাত্রা শুরু হয়েছে। সে সময়ের টগবগে তরুণ শেখ কামাল ফুটবলে রীতিমত বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন। দূরদর্শিতা আর আধুনিকতার অপূর্ব সমন্বয়ে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন উপমহাদেশ জুড়ে। সেই ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্টকে এনে ফুটবলপ্রেমীকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তখন ক্লাব তো দূরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোন বিদেশী কোচ ছিল না। আর তাই তো ১৯৭৪ সালে আবাহনী যখন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ‘আইএফএ’ শীল্ড টুর্নামেন্ট খেলতে যায়, তখন আবাহনীর বিদেশী কোচ আর পশ্চিমা বেশ ভুষা দেখে সেখানকার কর্মকর্তা আর সমর্থকদের চোখ ‘ছানাবড়া’ হয়ে যায়। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারনণ খেলা আবাহনী ক্রীড়াচক্র দর্শকের মুগ্ধতা অর্জন করেছিল। শুধু ফুটবল নয়, হকিসহ অন্যান্য খেলাধুলাতেও নতুন দিনের সূচনা করেছিলেন শহীদ শেখ কামাল।
×