ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এখন থেকে বর্ষাঋতু শুরু হবে দেরিতে ॥ অভিমত বিশেষজ্ঞদের

বিদায় নিল মৌসুমি বায়ু এবার বৃষ্টি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 বিদায় নিল মৌসুমি বায়ু এবার বৃষ্টি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত সোমবারই দেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। তবে ১২৯ দিন দেশের ওপর অবস্থানে একমাত্র জুলাইতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। জুন, আগস্ট সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ভরা বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে এ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি। মৌসুমি বায়ু অবস্থানকালে বৃষ্টির পরিবর্তে উল্টো কয়েক দফা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আবহাওয়া এই বিরূপ আচরণ অতীতে বর্ষাকালে কমই পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়বিদ আব্দুল মান্নান এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, মৌসুমি বায়ু ৯ জুন দেশে ঢুকলেও তা বেশিরভাগ সময় সক্রিয় ছিল না। ফলে একমাত্র জুলাই ছাড়া বাকি সময়টা স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়ার এই পরিবেশের মধ্যেই গত ১৪ অক্টোবর দেশ থেকে বিদায় নিল মৌসুমি বায়ু। আবহাওয়াবিদরা বলছেন মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করলে বর্ষা শুরু। প্রতি বছর জুনের প্রথম সপ্তাহে সাধারণত এটি দেশে ঢোকে। থাকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত। ফলে বাংলাদেশে এই সময়কেই বর্ষাকাল বলে ধরা হয়। এই সময়ে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টি যেমন কম হয়েছে। তেমনি এবার বর্ষাকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। মে থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্ষা সম্ভবত পিছিয়ে যাচ্ছে। বর্ষায় প্রথম দিকে বৃষ্টি হচ্ছে না। কিন্তু অন্য বছরগুলোয় শেষ সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বছরে বর্ষাকাল শেষ সময়ে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবক যে আবহাওয়ার ওপর পড়ছে তা বর্ষা ঋতুর দেখলেই বোঝা যায়। আবহাওয়া অফিস জানায়, গত সোমবার দেশের ভেতর থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। মৌসুমি বায়ু এমন এক বায় প্রবাহ যার প্রভাবে বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে বর্ষকালের চার মাস প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বন্যা হয়। দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সর্বাপেক্ষা প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ। মৌসুমি বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প বহন করে আনে। তাই এ অঞ্চলে এই সময় ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহে এই বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। এবার এই চার মাসের মধ্যে একমাত্র জুলাই মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। বাকি জুন, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। যদিও আবহাওয়া অফিস বলছে সার্বিকভাবে সেপ্টেম্বর মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঢাকা ময়মনসিংহ, সিলেট রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগের স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৮ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর কেবল চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত মাসে টেকনাফে সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি এই মাসেই মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় থাকার কারণে ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিলেট, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর মাসের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ০.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং ২.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি ছিল বলে আবহাওয়া অফিস জানায়। আগস্টকে ভরা বর্ষা মৌসুম বলা হয়ে থাকে। বিশেষ করে এই সময়ে পড়ে বাংলা শ্রাবণ মাস। অথচ শ্রাবন মাসজুড়ে এবার বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এবার আগস্টে স্বাভাবিককের চেয়ে শতকরা ২৩.২ ভাগ বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে এই মাসে খুলনা এবং বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগস্টের ১৩ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ২৩ আগস্ট টেকনাফে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেশের অন্যত্র মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় থাকায় আগস্টের ৫ থেকে ৬ এবং ১১ থেকে ১২ তারিখ এবং ২২ আগস্ট দেশে পশ্চিমাঞ্চলের অনেক স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ১২ আগস্ট দেশের সর্বোচ্চ ৩৮.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়। এ মাসে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ক্ষেত্রে ১.৮ ডিগ্রী বেশি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ক্ষেত্রে .৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এ বছর জুন মাসের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ওই মাসে বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৩৭.৭ ভাগ কম হয়েছে। যদিও এ মাসের ৯ তারিখে মৌসুমি বায়ু আনুষ্ঠানিক বর্ষা দেশে ঢুকে বিস্তার লাভ করে। আবহাওয়া বিশ্লেষণে দেখা গেছে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করলে তা একেবারের কম সক্রিয় ছিল।
×