ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মরাগাঙে নাম লিখিয়েছে অনেক নদী

শুকনো মৌসুমে উত্তরের নদী বালিয়াড়িতে পরিণত

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 শুকনো মৌসুমে উত্তরের নদী বালিয়াড়িতে পরিণত

সমুদ্র হক ॥ বালিয়াড়ি ঠা ঠা চরভূমি। জল নেই, পানি প্রবাহ নেই। শুকনো মৌসুম শুরু না হতেই যমুনার এই অবস্থা। কত নদী শুকিয়ে ভূমি হয়েছে আর কত নদী মরা গাঙের খাতায় নাম লিখিয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসনের কাগজে কলমের হিসাবে অনেক নদী এখনও আছে (!)। বাস্তবে সেগুলো মরুপথে ধারা হারিয়ে বালিয়ারিতে পরিণত হয়েছে অনেক আগে। ভূমি অফিসগুলোতে মরা গাঙের হিসাব নেই। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পাড়ে দেখা যায় নদীভূমি বালিয়াড়ি। পড়েছে অনকে চর। আটকা পড়েছে নৌযান। তীরের মানুষ নদীর এমন অবস্থা নিকট অতীতে দেখেনি। এত কিছুর মধ্যে একটি সুখবর : সরকার নদী রক্ষায় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। যা দীর্ঘমেয়াদী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্রজেক্ট)। এর আগে পর্যায়ক্রমে মরা নদীগুলোর ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অসংখ্য শাখা প্রশাখা নিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। উজানের গঙ্গা এই দেশে পদ্মা। উজানের ব্রহ্মপুত্র এই দেশে একই নামে প্রবেশ করে সঙ্গী করেছে যমুনাকে। এই নদনদী থেকেই অসংখ্য শাখা নদী ও উপ নদীর সৃষ্টি হয়েছে। নদীগুলো প্রায় ৯ দশমিক ৬০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবাহিত। যার মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এলাকা নিয়ে আছে বাংলাদেশ। নদীর জল প্রবাহের ৮০ শতাংশ আসে বর্ষা মৌসুমের চারটি মাসে (জুন-সেপ্টেম্বর)। প্রতি বছর এরা বহন করে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন পলি। যে পলি ছোট নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। নদীর পলি বহনের নির্দিষ্ট ক্ষমতা থাকে। ক্ষমতার বেশি বহন করলে অথবা বন্যার সময় বাড়তি জলপ্রবাহ ধারণ করতে না পাড়লে নদীকে গতি পরিবর্তন করতে হয়। এ দেশে প্রায় ১৪ হাজার ২শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথ আঁকাবাঁকা (অথবা মেয়েদের চুলের বেনীর মতো প্যাঁচানো)। যার বাড়তি পলি অথবা জলপ্রবাহ ভাঙ্গনের বড় কারণ হয়। এ ছাড়া যে নদীর পাড় স্থিতিশীল নয় সেখানেও দেখা দেয় ভাঙ্গন। একদিকে পাড় ভেঙ্গে দেয়। আরেকদিকে প্রবাহ বাধা পেলেই গতিপথ পরিবর্তন করে। নদী শুকিয়ে হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এভাবেই অনেক নদী হারিয়ে গিয়েছে। নদীতে চর জাগার বিষয়টি নদীর চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক নদী ভরাট হয়ে মরাগাঙে পরিণত হচ্ছে। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক নদী ভরাট হয়ে রুদ্ধ করেছে নৌপথ। বালিয়াড়ি থেকে পরিণত হয়েছে চরে। অনেক নৌকাকে আটকে থাকতে দেখা যায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার বালিয়াড়ি ও চরাভূমে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চরভূমি। রাজশাহীর চারঘাট থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ৩শ’ ৫০টির বেশি চর জেগেছে। কুড়িগ্রাম থেকে পাবনার ঢালারচর পর্যন্ত প্রায় এক হাজার চর জেগেছে। ঢালার চর থেকে রাজশাহী ২শ’ ৫০ এরও বেশি। এসব চর বড় নদীতে পানি প্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে। সূত্র জানায় নদীতে জেগে ওঠা চরের পরিমাণ অন্তত দুই হাজার বর্গ কিলোমিটার। যা মোট ভূমির প্রায় দুই শতাংশ। যমুনায় দেড় হাজার বর্গ কিলোমিটার। গঙ্গা ও পদ্মায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার। মেঘনা উত্তর ও দক্ষিণ অববাহিকায় ৭শ’ বর্গ কিলোমিটার। প্রবাহ কমেছে বড় নদী ব্রহ্মপুত্র যমুনা পদ্মা মেঘনা ধরলা তিস্তায়। যার প্রভাবে অনেক ছোট নদী অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। খলসডোঙ্গা, মহানন্দা, আত্রাই, বড়াল, তেঁতুলিয়া, ইচ্ছামতি, নারদ, হুরাসাগর, গুমানী, কাঁকন, কাকেশ্বরি, চিকনি, চিকনাই, করতোয়া, রূপনাই, ফুলেশ্বরি, বাঙালী, নদীশুখা, মাথাভাঙ্গা, গোমতি, গুঙ্গানী, ট্যাপাখাওয়া, উছলি ইত্যাদি নামের নদীগুলো কোথাও মরা গাঙ কোথাও খালের মতো। খরস্রোতা করতোয়ার নাব্যতা হারানো শুরু হয় গত শতকের আশির দশকে। শুকনো মৌসুমে অনেক নদী খুঁজে পাওয়া যায় না। পদ্মা মেঘনা তিস্তা ও শাখা নদীগুলোতে পানি প্রবাহ কমছে। নাব্যতা হারিয়ে মরে যাচ্ছে। বর্ষায় উজানের ঢলে পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। হেমন্তের শুরুতে কোথাও পানি থাকে না। শীতের শুকনো মৌসুমে নদীকে চেনাই যায় না।
×