ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২২ অক্টোবরের সমাবেশ সফল করতে দৌড়ঝাঁপ

আগামীতে দেশ জনগণের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 আগামীতে দেশ জনগণের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব ॥ ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতায় থাকতে স্বৈরশাসকরা সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক সঙ্কট সমাধানে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। জাতীয় ঐক্য সুসংহত করে দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, স্বৈরশাসকদের মূল চেষ্টা থাকে সাম্প্রদায়িকতা ও সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতার মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টি করা। তারা জনগণকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে স্বৈরশাসনের পতন হয় উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘স্বৈরশাসকরা জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় না। তবে অতীতে এ ধরনের শাসকরা এসব করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সাময়িক ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের ঐক্যে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, জনগণের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। ঐক্যের ডাক জেলা গ্রাম পাড়া-মহল্লায় নিয়ে যেতে হবে আপনাদের। ক্ষমতার মালিক হিসেবে জনগণ যেন নিজের ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য জাতীয় ঐক্য সুসংহত করতে হবে। এজন্যই আমাদের এই ঐক্যের ডাক। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা হবে উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, সেই ধরনের শাসন ব্যবস্থা জনগণের আকাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। আসুন, ঐক্যের শপথ নেই, ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিকে গতিশীল, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আমরা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার পদক্ষেপ অবশ্যই নেব। আমরা আগামীতে দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব। সাময়িক কোন সরকার বৈধভাবে ক্ষমতায় এলেও তারা ক্ষমতার মালিক নয়, মালিকের প্রতিনিধি। যারা অবৈধভাবে এখন আছে, তারা তো কিছুই না, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। তিনি বলেন, ‘কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হলো- প্রত্যেককে নিজের দিকে তাকিয়ে বলতে হবে, আমি দেশের মালিক। মালিক হওয়াটা মানে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হব। সংগঠিত হব, দেশে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করব যাতে দেশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে। মালিক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারলেই, আমাদের যে স্বপ্ন, যে লক্ষ্য তা পূরণ হবে। ড. কামাল বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশে জন্ম থেকে এ পর্যন্ত যারা জনগণের ঐক্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তারা সাময়িক সফল হলেও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি। ঐক্যের ডাক দিলে মানুষ সাড়া দেয়। এবারও সে রকম সাড়া দিয়েছে। সুতরাং এই ঐক্যের ডাক গ্রামে গ্রামে নিয়ে যান, যাতে জনগণ সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার মালিক হিসেবে নিজের ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের টাকা নাই, সাম্প্রদায়িক বিভক্তি নাই। আমাদের মূল শক্তি হলো ঐক্য। আমরা দেশের মালিক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যদি মালিকানাটা ভোগ করি, তাহলেই দেশে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। সভায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, অঘোষিতভাবে দেশে এখন কোন সংবিধান নেই। ক্ষমতাসীনরা যেমন ইচ্ছে সেভাবে দেশ চালাচ্ছে। স্বৈরশাসকদের দেশ পরিচালনায় কিছু নিয়ম থাকে, কিন্তু এখন দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে। মশা মারা থেকে শুরু করে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকান্ডের আসামিদের ধরতে তার নির্দেশ লাগে। তার হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না। দেশে উন্নয়নের জুয়াতন্ত্র (ক্যাসিনো), উন্নয়নের সন্ত্রাসতন্ত্র (আবরার হত্যা) চলছে বলে অভিযোগ করে আ স ম রব বলেন, তারা দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়েছে। এখন বলা হচ্ছে ছাত্র রাজনীতির কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়, দেশবিরোধী চুক্তির বিরোধিতা করার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। আসাদ হত্যার কারণে আইয়ুব খানকে এ দেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আবরার হত্যার কারণে আপনাদের ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হবে। সেটা আর বেশি দেরি নয়।’
×