ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম আবাহনীর উড়ন্ত সূচনা

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২০ অক্টোবর ২০১৯

চট্টগ্রাম আবাহনীর উড়ন্ত সূচনা

জাহিদুল আলম জয়, চট্টগ্রাম থেকে ॥ দাপুটে জয় দিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে মিশন শুরু করেছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। শনিবার রাতে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাবকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে অনেকটা ভাড়াটে দলে পরিণত হওয়া চট্টগ্রাম আবাহনী। বন্দরনগরীর দলটির জয়ে জোড়া গোল করেন নাইজিরিয়ান মিডফিল্ডার চিনেদি ম্যাথুউ। অপর গোল দু’টি করেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত ও মন্টেনিগ্রোর ফরোয়ার্ড রটকোভিচ লুকা। ম্যাচের তিনটি গোল হয় প্রধমার্ধে। বিজয়ী দলের হয়ে ম্যাচের ৮ ও ৩৯ মিনিটে দুই গোল করেন ম্যাথুউ। আর অপর গোল দু’টি করেন ম্যাচের ১০ মিনিটে ইয়াসিন ও ৭১ মিনিটে লুকা। এরমধ্যে ম্যাথুউ ও ইয়াসিন দু’জনই আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ থেকে এই টুর্নামেন্টে অতিথি হিসেবে খেলছেন চট্টগ্রাম আবাহনীতে। দলটির কোচ মারুফুল হকও আরামবাগ থেকে অতিথি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর। অন্যদিকে ৮৬ মিনিটে টিসি স্পোর্টসের হয়ে সান্ত¡নার একমাত্র গোলটি করেন ফরোয়ার্ড ইসমাইল ইয়াসা। ম্যাচ শুরুর আগে বেলুন উড়িয়ে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও টুর্নামেন্ট কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আ জ ম নাসির, সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ, টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান সমন্বয়ক তরফদার মোঃ রুহুল আমিন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগসহ আরও অনেকে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে চলেছে। এখন পর্যন্ত খেলা তিনটি ম্যাচেই দারুণ খেলেছেন জামাল ভুঁইয়া, সাদ উদ্দিন, নাবীব নেওয়াজ জীবন, ইয়াসিন খানরা। ভারতের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ম্যাচে তো দুই মিনিটের জন্য জয় হাতছাড়া হয়ে যায়। এরপরও বাংলাদেশী তরুণদের খেলায় ভীষণ উচ্ছ্বসিত দেশের মানুষ। অনেকদিন পর বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা লক্ষ্য করা গেছে। সর্বসাধারণ বলছেন, ভাল খেললে দর্শক ঠিকই মাঠে আসবে। সে প্রমাণও মিলতে শুরু করেছে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক গ্যালারিতে আসেন। টুর্নামেন্টকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো স্টেডিয়াম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ কামালের ছবি স্থাপন করা হয়েছে মাঠের চারিদিকে। মূলত ভারতের বিরুদ্ধে জাতীয় দলের ম্যাচই দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ জন্য তারা সরাসরি মাঠে বসে জামাল, ইয়াসিনদের খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। দর্শকদের সুবিধার কথা ভেবে আয়োজকরা ১০ ও ২০ টাকার নামমাত্র মূল্যে টিকেটের ব্যবস্থা করেছে। আয়োজকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ দর্শকরা। একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সারোয়ার জাহান বলেন, ‘ফুটবল আমার ভীষণ পছন্দ। আমাদের এই দলটা (জাতীয় দল) অনেক ভাল। এখন তাদের খেলা সরাসরি মাঠে বসে দেখতে পারছি এটাই অনেক বড় পাওয়া।’ উন্মাদনা যে চরমে সেটা আঁচ করা গেল রিক্সাচালক জমির উদ্দিনের কথাতে, ‘আমাগো জন্য ভালাই হইছে। দশ টেহায় (টাকা) খেলা দেখবার পারতাছি।’ খেলা দেখলে রোজগার কমে যাবে না? জবাব দিলেন অকপটে, ‘আমাগো জামালদের খেলা দেখার জন্য কামাই কিছু কম হলে হোক। ওগো খেলা দেহনই আগে’। এক ম্যাচেই দৃশ্যপট কেমন বদলে গেছে। এই না হলে খেলাপাগল বাঙালী। গতকাল গ্যালারিতে একঝাঁক চট্টগ্রাম আবাহনীর সমর্থকরা দৃষ্টি কেড়েছেন সবার। প্রিয় দলকে উৎসাহ ও সমর্থন দিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গ্যালারিতে আসেন তারা। কপালে ‘সাবাশ টিটাগাং আবাহনী’ লেখা ব্যানার নিয়ে তারা প্রিয় দলকে সমর্থন যোগান। এদেরই একজন আনিস বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দল চট্টগ্রাম আবাহনী। আশাকরি এবার আবার আমাদের দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে। প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে প্রতিটি খেলাতেই আমরা মাঠে আসব।’ অবশ্য কেউ কেউ আক্ষেপও করছেন। দেশের খেলাধুলাই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক সব খেলার তটস্থ আরাফাত অনিকের। অনেকটা বিশেষজ্ঞের মতো তিনি বলেন, ‘এখানে মনে হয় আরও ভালমানের দল আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। ভারত থেকে এতগুলো দল খেলানোর দরকার ছিল না। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বোঝা গেছে ভারতের মান। এরচেয়ে আমাদের আরও কয়েকটি ক্লাবকে সুযোগ দিলে মন্দ হতো না। এরপরও আশা করছি দারুণ একটা আসর হবে।’ আবু সুফিয়ান নামের সরকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রাম আবাহনী ধন্যবাদ এমন একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য। আমরা সৌভাগ্যবান যে মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছি। এই আয়োজন নিঃসন্দেহে দেশের ফুটবলের উন্নতিতে সহায়ক হবে।’
×