ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিবির ছবি প্রকাশ

শূন্যরেখা অতিক্রম করে প্রথম গুলি ছোড়ে বিএসএফ ॥ সীমান্তে সতর্কতা

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২০ অক্টোবর ২০১৯

শূন্যরেখা অতিক্রম করে প্রথম গুলি ছোড়ে বিএসএফ ॥ সীমান্তে সতর্কতা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পদ্মানদীতে ইলিশ শিকারে এসে আটক হওয়া ভারতীয় জেলে প্রণব ম-লকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে বিজিবি ও বিএসএফ’র মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার পর সীমান্তে সতর্কতা বাড়িয়েছে বিজিবি। বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানান, ঘটনার পর থেকেই সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। রাজশাহীর সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। এ সময় কেউ যেন কোনভাবেই সীমান্তের শূন্য রেখার দিকে না যান তার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। এদিকে সেদিনের পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিজিবি। একইসঙ্গে বিএসএফের বাংলাদেশে প্রবেশের দুইটি ছবিও প্রকাশ করেছে। শূন্যরেখা অতিক্রম করা বিএসএফের ছবি দিয়ে বিজিবি বলেছে, ওই স্পিডবোট দিয়ে রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাইন থেকে প্রায় ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে চলে আসেন বিএসএফ সদস্যরা। বিজিবি সূত্র জানায়, ওইদিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে চারঘাট বিওপি থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিম দিকে এবং সীমান্ত পিলার ৭৫/৩-এস থেকে ৫০০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে চারঘাট থানার শাহরিয়ার খাল এলাকায় মাছ ধরছিলেন তিন ভারতীয় জেলে। ওই সময় সেখানে মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযান চলছিল। ওই সময় তিন জেলেকে আটক করার চেষ্টা করলেও দুইজন পালিয়ে যায়। একজনকে জালসহ আটক করার পর বিজিবি কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন যে ওই জেলেরা ভারতীয় নাগরিক। এর কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারি ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পিডবোট নিয়ে ‘অনুমতি ছাড়া’ শূন্য রেখা অতিক্রম করে ‘অবৈধভাবে’ বাংলাদেশের ভেতরে ৬০০-৬৫০ গজ প্রবেশ করে। নদীর এ পাড়ে বিজিবি টহল দলের কাছে এসে তারা আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলে। তখন বিজিবি টহল দল আটক ভারতীয় নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান। কিন্তু তারা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে তাদের ওপর ৬/৮ রাউন্ড গুলি চালায় বিএসএফ। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবি টহল দল পাল্টা ফাঁকা গুলি করলে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করতে করতে দ্রুত চলে যায়। আটক ভারতীয় নাগরিক প্রণব ম-ল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার ছিড়াচর গ্রামের বসন্ত ম-লের ছেলে বলে জানিয়েছে বিজিবি। তাকে চারঘাট থানায় হস্তান্তর করা হলে আইনী প্রক্রিয়া শেষে শুক্রবারেই রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, আটক ভারতীয় কাছ থেকে উদ্ধার করা জাল ইলিশ শিকারে ব্যবহৃত হয়। ঘটনার সময় তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের আরিফুল বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা যেন নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পারে সেজন্য বিজিবি সদস্যদের নিয়ে ওইদিন সকালে নদীতে অভিযানে যান তিনি। চারঘাট থানার ওসি সমিত কুমার কু-ু জানান, বিজিবির চারঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির হাবিলদার হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে প্রণব ম-লের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বেআইনীভাবে মাছ শিকারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে বিজিবির সঙ্গে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গোলাগুলির ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা দাবি করা হলেও সীমান্তবাসীর মধ্যে চলছে অজানা আশঙ্কা। কখন যেন আবার কি হয়? এমন আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। সরেজমিনে গিয়ে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। চারঘাটে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা চক মোক্তারপুর এলাকার রবিউল ইসলাম, জমশেদ আলী, আরশাদ আলী ও মহাদেব বলেন, আমরা পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা। নদীতে মাছ শিকার করে আমাদের জীবন সংগ্রাম। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে বিএসএফ’র গুলির ঘটনায় চরম আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছি। নদীতে কোনভাবেই নামার সাহস পাচ্ছি না। এমনকি নদীর কিনারে সন্ধ্যার পরে কেউ আর থাকছে না। সকলেরই মাঝে এক ধরনের অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা বলেন, ইতোমধ্যে মাইকিং করে নদীতে নামতে নিষেধ করায় আরও শঙ্কা বেড়ে গেছে। সীমান্ত সংলগ্ন গোপলপুর এলাকার বাসিন্দা সাবদুল বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকে নদীর কিনারায় কেউ জমিতে কাজও করতে সাহস পাচ্ছে না। সব সময় একটা আতঙ্ক মনের ভেতরে বিরাজ করছে। এমন আশঙ্কা এখন পুরো পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে। জরুরী কাজ ছাড়া কেউ এখন আর নদীর দিকে যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার চারঘাটে পদ্মা ও তার শাখা বড়াল নদের মোহনায় বিজিবি এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে নিজেদের একজন সদস্য নিহত এবং আরেকজন আহত হওয়ার দাবি করেছে বিএসএফ। তবে বিজিবি বলছে, তারা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। নিহত বা আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানান, মূলত বিএসএফ সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে নিয়ে মারধর করেন। তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে প্রথমে আনুমানিক ৬ থেকে ৮ রাউন্ড ফায়ার করে। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবির টহল দল ফাঁকা ফায়ার করে। তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকেই সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
×