ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরির পরও হারল ঢাকা মেট্রো

রাজশাহীকে হারাল খুলনা

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ২১ অক্টোবর ২০১৯

 রাজশাহীকে হারাল খুলনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) ২১তম আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে গেল রাজশাহী। খুলনার কাছে ৭ উইকেটে হারল তারা। রাজশাহীর হারের দিনে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরির পরও সিলেটের কাছে ৮ উইকেটে হারল ঢাকা মেট্রো। ইমতিয়াজ হোসেনের সেঞ্চুরির সঙ্গে জাকির হাসানের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে জিতল সিলেট। বাকি দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। প্রথম স্তর ॥ চট্টগ্রামে ঢাকা ও রংপুরের ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্রই হলো। প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেট হারিয়ে ৫৫৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ঢাকা। জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয়দিন শেষ হওয়ার আগে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রান করে রংপুর। রংপুর এরপরও ২২২ রানে পিছিয়ে থাকে। তখনই বোঝা হয়ে যায় ম্যাচটি ড্র হবে। দুই দলের কোন দলই যে তৃতীয়দিন পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে পারেনি। চতুর্থদিন সোহরাওয়ার্দী শুভর অপরাজিত ৯২ ও তানভির হায়দারের ৭৩ রানে ৫০৮ রান করে অলআউট হয় রংপুর। যোগ্য সঙ্গীর অভাবে সেঞ্চুরি হলো না সোহরাওয়ার্দী শুভর। ৮ রানের আক্ষেপ রয়ে গেল। এরপর ঢাকা ১০ রান করতেই খেলা ড্র দিয়ে শেষ হয়। খুলনায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিপদেই পড়ে থাকে রাজশাহী। শেষ পর্যন্ত হারই হয় নিয়তি। হারের সম্ভাবনা তৃতীয়দিনই জেগে ওঠে। খুলনার জিততে ১০৮ রান লাগতো। তা সৌম্য সরকারের (৫০*) উজ্জ্বল ব্যাটিংয়ে করে ফেলে খুলনা। প্রথম ইনিংস ২৬১ রান করে অলআউট হয় রাজশাহী। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩০৯ রান করে খুলনা। ৪৮ রানে এগিয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭০ রানের বেশি করতে পারেনি রাজশাহী। খুলনার সামনে জিততে ১২৩ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। তৃতীয়দিন শেষ হওয়ার আগে খুলনা ১ উইকেট হারিয়ে ১৫ রান করে। শেষদিনে সৌম্য সরকারের রানে ফেরা ব্যাটিংয়ে জিতে খুলনা। আরও ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য দরকার ১০৮ রান করে খুলনা। ৩ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে জিতে। দিনের প্রথম সেশনেই জয় তুলে নেয় খুলনা। দ্বিতীয় স্তর ॥ ফতুল্লায় চট্টগ্রাম-বরিশাল ম্যাচটিও ড্র হয়। বিপাকে ছিল বরিশাল। প্রথম রাউন্ডের একমাত্র জয়ী দল বরিশাল হারের মুখেও পড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সময় না থাকায় রক্ষা মিলে। চট্টগ্রাম প্রথম ইনিংসে ৩৫৬ রান করে। জবাবে বরিশাল ২১৬ রানের বেশি করতে পারেনি। ১৪০ রানে শুরুতেই পিছিয়ে যায় বরিশাল। দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয়দিন শেষ হওয়ার আগে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান করে চট্টগ্রাম। তাতে ১৯০ রানে পিছিয়ে যায় বরিশাল। পিনাক ঘোষ (৩০*) ও মুমিনুল হক (৯*) অপরাজিত ছিলেন। চতুর্থদিনে ব্যাট করতে নামেন। পিনাক ৫৪ রান করলেও মুমিনুল (৩০) আবারও ব্যর্থ হন। মাহিদুল ইসলাম অংকন ৪৩ রানে আউট হলে ইনিংস ঘোষণা করে চট্টগ্রাম। ৬ উইকেট হারিয়ে প্রথম সেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ১৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে চট্টগ্রাম। বরিশালের সামনে জিততে ৩৩৬ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এই বিশাল রানের টার্গেটে পড়ে ১২৭ রানেই ৬ উইকেট হারায় বরিশাল। মোহাম্মদ আশরাফুল (৬০), শাহরিয়ার নাফীস (৪২) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৩৫) যদি ছোট্ট ছোট্ট ইনিংসগুলো না খেলতেন তাহলে হার হতে পারত। ১৭৪ রানে গিয়ে ৭ উইকেট হারায় বরিশাল। যখন দিন শেষ হতে আর একঘণ্টা বাকি থাকে, তখন ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান করে বরিশাল। একঘণ্টায় বরিশালের হারও হতে পারতো। কিন্তু সপ্তম উইকেটে মোসাদ্দেক ও শামসুল ইসলাম (১৫*) মিলে উইকেট আঁকড়ে থাকেন। শেষ মুহূর্তে গিয়ে মোসাদ্দেক আউট হন। তার আউট হতেই দিনও শেষ হয়। ম্যাচও হয় ড্র। প্রথম রাউন্ডে বরিশালের কাছে হারের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে যেন ঢাকা মেট্রোর বিরুদ্ধে হারের জ্বালা মেটাতে নামে সিলেট। ম্যাচ ড্র হওয়ার পথেই ছিল। কিন্তু সিলেটের সামনে জিততে ২০১ রানের টার্গেট দেয় ঢাকা মেট্রো। হাতে থাকা দুই সেশনেই করে ফেলে সিলেট। ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেনের অপরাজিত ১১০ রান ও জাকির হাসানের ৭২ রানে জয় পায় সিলেট। ২ উইকেট হারিয়ে ২০৪ রান করে জিতে যায় সিলেট। ম্যাচটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরি করেন। ১১১ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে আউট হন। একাই ঢাকা মেট্রোর দ্বিতীয় ইনিংস টেনে নিয়ে যান। কিন্তু দলকে বাঁচাতে পারেননি। তবে ভারত সফরের আগে প্রস্তুতি ভালই হলো মাহমুদুল্লাহর। বল হাতে ঝলক তো দেখিয়েছেন। ব্যাট হাতে দুই ম্যাচের তিন ইনিংসে পঞ্চাশ উর্ধ ইনিংস খেলেছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে প্রথম রাউন্ডের মতো প্রথম ইনিংসে ৬৩ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে ২৪৩ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ১১১ রানের উজ্জ্বল নৈপুণ্য মিলেছে। তৃতীয়দিনই ঢাকা মেট্রো ১৫২ রানে এগিয়ে ছিল। হাতেও ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট। ৯৫ রান করে ঢাকা মেট্রোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ। ৫ রানের অপেক্ষা ছিল। তা চতুর্থদিন হলোও। কিন্তু মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে শহিদুল ইসলাম (৪২) তাল মেলাতে পারলেও অন্যরা ব্যর্থ হন। ৬ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান করে তৃতীয়দিন শেষ করা ঢাকা মেট্রো চতুর্থদিন ২৭৩ রানেই অলআউট হয়ে যায়। আবু জায়েদ রাহী ৪ উইকেট শিকার করে নেন। প্রথম ইনিংসে ২৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি ঢাকা মেট্রো। জবাব দিতে নেমে সিলেটের ৩১৯ রানের বড় সংগ্রহ হয়ে যায়। এরপর ঢাকা মেট্রো দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে ৯ রান করতেই দ্বিতীয়দিন শেষ হয়। ঢাকা মেট্রো ৬৪ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয়দিন খেলা শুরু করে ১৫২ রানে এগিয়ে থাকে। চতুর্থদিন প্রথম সেশনেই ঢাকা মেট্রোর ইনিংস শেষ হয়। সিলেটের সামনে জিততে ২০১ রানের টার্গেট পড়ে। তা অনায়াসেই করে জয় তুলে নেয় সিলেট। স্কোর ॥ ঢাকা-রংপুর প্রথম স্তরের ম্যাচ- চট্টগ্রামে ঢাকা প্রথম ইনিংস- ৫৫৬/৮ (ইনিংস ঘোষণা); ১৬০ ওভার; সাইফ ২২০*; সোহরাওয়ার্দী ৩/১৩৪, সঞ্জিত শাহা ৩/৮৯ ও দ্বিতীয় ইনিংস ১০/০। রংপুর প্রথম ইনিংস তৃতীয়দিন ৩৩৪/৫; ১০৮ ওভার; লিটন ১২২, নাঈম ১২৪*, তানভির ৫২*; সুমন ২/৭০ ও চতুর্থদিন ৫০৮/১০; ১৮০.৫ ওভার; সোহরাওয়ার্দী ৯২*, তানভির ৭৩। ফল ॥ ম্যাচ ড্র। ম্যাচসেরা ॥ সাইফ হাসান (ঢাকা বিভাগ)। খুলনা-রাজশাহী প্রথম স্তরের ম্যাচ- খুলনায় রাজশাহী প্রথম ইনিংস- ২৬১/১০; ৮৫.৩ ওভার; জুনায়েদ ৫১, ফরহাদ ৪৫, ফরহাদ রেজা ৪১; মিরাজ ৪/৩৮, মুস্তাফিজ ২/৬৪, রুবেল ২/৫১ ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৭০/১০; ৬০ ওভার; শান্ত ৫৭, মুশফিক ৪৪; আল আমিন ৪/১৭, রাজ্জাক ৪/৬২। খুলনা প্রথম ইনিংস- ৩০৯/১০; সোহান ৯৭*, ইমরুল ৯৩; শফিউল ৩/৫৫, তাইজুল ২/৯৭ এবং দ্বিতীয় ইনিংস তৃতীয়দিন ১৫/১; ৩ ওভার; ইমরুল ১১* ও চতুর্থদিন ১২৩/২; ২২.১ ওভার; সৌম্য ৫০*। ফল ॥ খুলনা ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নুরুল হাসান সোহান (খুলনা)। চট্টগ্রাম-বরিশাল দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচ- ফতুল্লায় চট্টগ্রাম প্রথম ইনিংস- ৩৫৬/১০; অংকন ৯১; মনির ৪/৯৯ ও দ্বিতীয় ইনিংস তৃতীয়দিন ৫০/১; ১৯ ওভার; পিনাক ৩০*, মুমিনুল ৯* ও চতুর্থদিন ১৯৫/৬; ইনিংস ঘোষণা; পিনাক ৫৪, মুমিনুল ৩০, অংকন ৪৩; রাব্বি ২/৪৩। বরিশাল প্রথম ইনিংস- ২১৬/১০; ৮২.৩ ওভার; নুরুজ্জামান ৬০, আশরাফুল ২১; নাঈম ৪/৬২ ও দ্বিতীয় ইনিংস- ১৭৪/৭; ৬৫ ওভার; আশরাফুল ৬০, শাহরিয়ার ৪২, মোসাদ্দেক ৩৫; নাঈম ৪/৫৪। ফল ॥ ম্যাচ ড্র। ম্যাচসেরা ॥ নাঈম হাসান (চট্টগ্রাম) ও মাহিদুল ইসলাম অংকন (চট্টগ্রাম)। ঢাকা মেট্রো-সিলেট দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচ- বগুড়ায় ঢাকা মেট্রো প্রথম ইনিংস- ২৪৬/১০; ৮৩.৪ ওভার; মাহমুদুল্লাহ ৬৩, শহিদুল ৫৪; রেজাউর ৪/৭৫ ও দ্বিতীয় ইনিংস তৃতীয়দিন ২২৫/৬; ৯৭ ওভার; মাহমুদুল্লাহ ৯৫*, শহিদুল ২৯* এবং চতুর্থদিন ২৭৩/১০; ১১৯ ওভার; মাহমুদুল্লাহ ১১১, শহিদুল ৪২; রাহী ৪/৪৯। সিলেট প্রথম ইনিংস- ৩১৯/১০; ৮৪.৫ ওভার; জাকির ৭১, জাকের ৭১, তৌফিক ৬১, কাপালী ৫৪; রনি ৫/৫৫ ও দ্বিতীয় ইনিংস ২০৪/২; ৫২.৩ ওভার; ইমতিয়াজ ১১০*, জাকির ৭২। ফল ॥ সিলেট ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ জাকির হাসান (সিলেট)।
×