ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীদের অনলাইন প্যাকেজ

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২২ অক্টোবর ২০১৯

জঙ্গীদের অনলাইন প্যাকেজ

গুলশানের হলি আর্টিজানে আকস্মিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত তৎপরতায় সারাদেশে জঙ্গী কার্যক্রম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি স্থানে পুলিশের ওপর বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আবার সামনে চলে এসেছে বিষয়টি। গোয়েন্দা ও পুলিশী তৎপরতায় খুব দ্রুতই তাদের বমাল গ্রেফতারে সক্ষম হয় সংশ্লিষ্টরা। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ধৃত জঙ্গীদের অনেকেই উচ্চশিক্ষিত, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ডিগ্রীপ্রাপ্ত, তদুপরি বোমা বানানোসহ ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় পারদর্শী। তদুপরি তারা মোবাইল ও ইন্টারনেটে একে অপরের সঙ্গে প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গী কার্যক্রম ও তৎপরতায় সংযুক্ত করতে সক্রিয়। এর জন্য তারা অনলাইনে নানারকম লোভনীয় প্যাকেজও দিয়ে যাচ্ছে। যাতে দেশের তরুণ সমাজ আকৃষ্ট হয় জঙ্গীবাদে। ইতোপূর্বে জঙ্গীদের এবং বিশেষ করে তাদের নেতা ও পৃষ্ঠপোষকদের মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দিয়ে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করার প্রমাণ মিলেছে। অনেক ক্ষেত্রে টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে নারীও। একাধিক দম্পতির সন্ধান মিলেছে যারা এমনকি সন্তানসহ জঙ্গী তৎপরতায় সংযুক্ত। সপরিবারে আত্মঘাতী হওয়ার উদাহরণও আছে। বিচক্ষণ পাঠকের স্মরণে থাকতে পারে যে, মধ্যপ্রাচ্যে তথাকথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কুখ্যাত জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসএ যোগদানের নিমিত্ত বাংলাদেশী চিকিৎসকের সপরিবারে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যাওয়ার সংবাদটি। এরকম উদাহরণ আরও আছে বৈকি। ঢাকা পিস টক শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে পুস্তিকা, লিফলেট, জিহাদী বই ছাড়াও জঙ্গীবাদের যারা সংগ্রহকারী, উদ্বুদ্ধকারী তারা ইন্টারনেটে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় সব প্যাকেজ দিচ্ছে। যাতে মানসিকভাবে দুর্বল, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের অভাব। অসহিষ্ণুতা, জীবনে আয়-উন্নতির জন্য শর্টকাট পথ খুঁজছে, তাদের একাংশই উগ্রবাদী হয়ে উঠেছে, যাদের অধিকাংশই তরুণ। সে অবস্থায় কোন তরুণ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গী বা উগ্রবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক মোটিভেশন অত্যাবশ্যক। কমিয়ে আনতে হবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য। জাগরিত করতে হবে দেশপ্রেম, সাংস্কৃতিক চেতনা, মূল্যবোধ ও ন্যায়পরায়ণতা। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। স্থানীয় জঙ্গীদের বিদেশী কানেকশনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি প্রতিনিয়ত নজরদারির দাবি রাখে। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা।
×