ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২২ অক্টোবর ২০১৯

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে গোলাগুলির ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যকে দোষারোপ করছে। নিয়ন্ত্রণ রেখাটি এখন কাশ্মীরে উভয় দেশের সীমান্ত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। রবিবার সেখানে গুলিবিনিময়ের ঘটনার উভয়পক্ষের ১০ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশ এখন ২০০৩ সালে স্বাক্ষরিত অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। পরমাণু অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশ কাশ্মীর নিয়ে ইতোমধ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে তিনবার যুদ্ধ করেছে। বিবিসি ও রয়টার্স। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। রবিবার ভোর রাতে কুপওয়ারা জেলার টংধর সেক্টরে কয়েক ঘণ্টা ধরে উভয়পক্ষে ওই গোলাগুলি হয়। ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর দুদেশের মধ্যে সংঘাতে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা। ভারত বলেছে, জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ফের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ভারি গোলাবর্ষণ করেছে পাকিস্তান। এ ঘটনায় তাদের দুই জওয়ান এবং একজন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত আরও তিনজন। অন্যদিকে পাক সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, ভারত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালানোয় তাদের একজন সেনা এবং তিনজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বলেছেন, কোন রকম প্ররোচনা ছাড়াই পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। আমাদের সেনারাও এর শক্ত জবাব দিয়েছে। এতে শত্রুপক্ষে অনেক ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, টংধর সেক্টরের উল্টো দিকে নীলম উপত্যকায় একাধিক জঙ্গী ঘাঁটি আছে। সেগুলো থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায় জঙ্গীরা। পাক সেনারা তাদের মদদ দেয়। রবিবার ভোরেও জঙ্গীদের সেরকম গতিবিধি নজরে আসাতেই জঙ্গী ঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, টংধর সেক্টরে বিনা প্ররোচনায় গোলাবর্ষণ করেছে পাক সেনারা। তাতে দুই সেনা জওয়ান এবং এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। আহত হন আরও আটজন। এ ছাড়া একটি বাড়ি, একটি চালের গোডাউন। দুটি গাড়ি ও একটি গোশালা ধ্বংস হয়ে যায়।ওই গোশালায় ১৯টি গরু ও একাধিক ভেড়া মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিত্রকূট গ্রামে। পাক গোলায় কয়েকটি বাড়ি কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। শেল ও মর্টারে সব মিলিয়ে মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছটি বাড়ি। ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কিত এলাকাবাসী। পাকিস্তানের সেনা জনসংযোগ বিভাগের ডিজি মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইট বার্তায় বলেন, ‘ভারতীয় সেনা বিনা প্ররোচনায় অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে জুরা, শাহকোট এবং নওশেরা সেক্টরে সাধারণ নাগরিকদের নিশানা করলে পাক সেনারা এর সমুচিত জবাব দেয়।’ এতে নয়জন ভারতীয় সেনা জওয়ানের মৃত্যু ঘটে বলে তিনি দাবি করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স কোন পক্ষের দাবি নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করতে পারেনি। গুলিবিনিময়ের ঘটনায় নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বাড়ার পাশাপাশি দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার গৌরব অহলুওয়ালিয়াকে পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে সীমান্তের উত্তেজনার কথা জানানো হয়েছে তাকে। কাশ্মীর নিয়ে চলতি বছর শুরু থেকেই দুই দেশ পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলায় ভারতেয় ৪০ সেনা নিহত হয়। এরপর পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। এ সময় এক ভারতীয় বৈমানিক পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়লেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সম্বলিত সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে রাজ্যকে দুই ভাগে বিভক্ত ও কেন্দ্রীয় শাসনের অধীন করে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যজুড়ে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত সেনা ও দুই মাস ধরে জরুরী অবস্থা বজায় রাখা হয়।
×