ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব ধরনের ক্রিকেট বর্জন, ১১ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরনের আপোস নয়

সাকিবের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের বিদ্রোহ

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ২২ অক্টোবর ২০১৯

সাকিবের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের বিদ্রোহ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার জাতীয় ক্রিকেট লীগ (এনসিএল) এবং আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ নিয়ে একটা অসন্তোষ কাজ করছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে। বছর শেষে কোটি কোটি টাকার মুনাফা দেখা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সেভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ-সুবিধা ও পারিশ্রমিক বাড়ায়নি। এবার এনসিএলে পারিশ্রমিক ও ভাতাদি বাড়ানোর কথা থাকলেও তা হয়নি, তাই ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিলেন সবাই। আবার আসন্ন বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকায় ক্রিকেটারদের বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জনের পথটাও বন্ধ হয়েছে। অবশেষে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটাররা। সোমবার দুপুর গড়াতেই বিসিবি একাডেমি ভবনের সামনে ৬০ ক্রিকেটার জড়ো হওয়ায়। বিসিবির কাছে সুযোগ-সুবিধা, ভাতা ও পারিশ্রমিক বাড়ানোসহ মোট ১১ দফা দাবি তুলে ধরেছেন ১০ ক্রিকেটার মিলে। তবে আন্দোলনকারী ক্রিকেটারদের মুখপাত্র হিসেবে টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আছেন। এই দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটাররা জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট খেলা থেকেও বিরত থাকবেন। এ কারণে চলমান এনসিএল, আগামী মাসে ভারত সফর এবং সেজন্য অনুশীলন ক্যাম্পও হবে না বলে জানিয়েছেন সাকিব-তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমরা। এবার এনসিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ও ভাতাসমূহ বাড়ানোর কথা জানিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু তা বাড়ানো হয়নি, উল্টো বিভিন্ন নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা হয়েছে ক্রিকেটারদের। বিপ টেস্টের লেভেল ‘১১’ বেঁধে দেয়ার পর থেকেই তা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন অনেকে। যেখানে বছরজুড়ে ফিটনেস বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকা-ে বিসিবির সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল, সেখানে হুট করে এমন সিদ্ধান্তে অনেক ক্রিকেটারই ক্ষেপে যান। আর যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেখানেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি ও ঘাটতি। এরপর পারিশ্রমিকও বাড়ানো হয়নি এনসিএলে। প্রতিবছর বিপিএল দিয়ে অনেক ক্রিকেটারই লাভবান হন। এবার সেই বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকায় ক্রিকেটাররা বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই সোমবার বিদ্রোহ করে বসেছেন ক্রিকেটাররা। সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, রুবেল হোসেনরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্রিকেটারদের বিদ্রোহে। মুখপাত্র হিসেবে সাকিব জানিয়েছেন, ‘আমাদের দাবি দাওয়া না মানলে কেউ কোন ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকা-ে অংশ নেব না। তবে যেহেতু অনুর্ধ-১৯ দলের সামনেই বিশ্বকাপ, তাই তাদের এই ধর্মঘটের আওতায় রাখা হয়নি। তাদের কার্যক্রম চলবে। মহিলা ক্রিকেটাররা যারা আছে তারাও আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিতে পারেন।’ এরপর সাকিবসহ ১০ ক্রিকেটার মিলে ১১ দফা দাবি পেশ করেন। প্রথম দাবি, নাঈম ইসলাম ॥ কোয়াবের (ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন) বর্তমান কোন কার্যক্রম আমাদের ক্রিকেটারদের সমর্থনে করা হয় না। আমাদের প্রথম দাবি কোয়াবের সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্ট যারা আছেন তাদের পদত্যাগ শীঘ্রই করতে হবে। ক্রিকেটাররা নির্বাচন করবে কোয়াবের কে সেক্রেটারি হবে, কে প্রেসিডেন্ট হবে। একটা নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা কমিটি বানাব। দ্বিতীয় দাবি, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ॥ প্রিমিয়ার লীগে পারিশ্রমিকের একটা মানদ বেঁধে দেয়া হচ্ছে। ক্রিকেটারদের অনেক সীমা দিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমার যেভাবে আগে প্রিমিয়ার লীগ খেলতাম, ক্রিকেটাররা আগে যেভাবে চুক্তি করত। ক্রিকেটাররা নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে সব সময় তৎপর থাকত। ক্রিকেটারদের সবক্ষেত্রে ক্ষমতা থাকত। প্রিমিয়ার লীগে দলগুলোর সঙ্গে ক্রিকেটাররা নিজেরা চুক্তি করবে। দল নির্বাচন এবং পারিশ্রমিকের বিষয়ে নিজেরা চুক্তি করবে। এটা আমাদের দ্বিতীয় দাবি, প্রিমিয়ার লীগ আগের পদ্ধতিতে চালানো হোক। তৃতীয় দাবি, মুশফিকুর রহীম ॥ আমাদের দাবি বিপিএল সংক্রান্ত। আমরা জানি এ বছরের বিপিএল একটু অন্য নিয়মে হচ্ছে, সেটা অবশ্যই আমরা সম্মান করি। কিন্তু আমাদের প্রধান দাবি আগের নিয়মে যেভাবে বিপিএল হতো আগামী বছর থেকে আগের মতো বিপিএল চাই আমরা। স্থানীয় ক্রিকেটাররা যেন বিদেশী ক্রিকেটারদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায্য মূল্য পায়। সঙ্গে বিদেশী লীগগুলোর মতো আমাদের ক্রিকেটারদেরও ড্রাফটে নিজেদের ক্যাটাগরি পছন্দ করার সুযোগ দিতে হবে। চতুর্থ দাবি, সাকিব আল হাসান ॥ ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি ১ লাখ টাকা করতে হবে। ক্রিকেটারদের বেতন ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। অনুশীলনের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। জিম, ইনডোর, মাঠ সবকিছুর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ১২ মাসের জন্য কোচ, ফিজিও, ট্রেনার নিয়োগ দিতে হবে। পরবর্তী মৌসুমের আগে আমরা চাই এই সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হোক। পঞ্চম দাবি, সাকিব আল হাসান ॥ আমরা যে বল দিয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলি সেটা মানসম্মত হয় না। ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতা ১৫০০ টাকা থেকে বাড়াতে হবে। কারণ বিসিবি যে ফিটনেস লেভেল দাবি করছে ১৫০০ টাকায় পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হয় না ক্রিকেটারদের। ভেন্যুগুলোতে ক্রিকেটারদের ভ্রমণ খরচ ২৫০০ টাকা থেকে বাড়াতে হবে। বিভাগভিত্তিক যাতায়াতের জন্য বিমান ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে হোটেলের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে কমপক্ষে জিম এবং সুইমিং পুল থাকা বাধ্যতামূলক। মাঠে আসার জন্য ক্রিকেটারদের জন্য এসি বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। ষষ্ঠ দাবি, এনামুল হক জুনিয়র ॥ জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩০ জন করতে হবে এবং বেতন বাড়াতে হবে। তিন বছর ধরে বেতন বাড়ানো হয় না। সেটা বাড়াতে হবে। সপ্তম দাবি, তামিম ইকবাল ॥ আমাদের আজকের উদ্যোগ শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের নিয়েই না। আপনারা সবাই দেখেন গ্রাউন্ডসম্যানরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে। মাস শেষে হয়তো ৫-৬ হাজার টাকা পায়। বিদেশী একটা কোচ যে টাকা বেতন পায় আমাদের হয়তো ২০ জন কোচ তা পায় না। আম্পায়ারিং নিয়ে আমরা সবাই অভিযোগ করি। আম্পায়ারদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে টাকা দিয়ে। আপনারা সবাই জানেন তাদের কি ধরনের বেতন দেয়া হয়। ফিজিও, ট্রেনার সবার ক্ষেত্রেই একই। এখন উপযুক্ত সময় বাংলাদেশীদের প্রাধান্য দেয়ার। অষ্টম দাবি, এনামুল হক বিজয় ॥ আমরা দুইটা চারদিনের আসর খেলি। বিসিএল এবং এনসিএল। কিন্তু প্রিমিয়ার লীগের ওয়ানডে ভার্সনে আমরা মাত্র একটি আসর খেলি। আমাদের আরেকটি আসর বাড়ানো উচিত। বিপিএলের মাধ্যমে আমরা একটি টি২০ লীগেই খেলি। এ ছাড়া কোন টি২০ আসর হয় না। আমার কাছে মনে হয় বিপিএলের আগ মুহূর্তে একটি টি২০ আসর হওয়া জরুরী। আমরা চাই জাতীয় ক্রিকেট লীগের একটি ওয়ানডে আসর চালু করা হোক। নবম দাবি, নুরুল হাসান সোহান ॥ ঘরোয়া আসরের ক্ষেত্রে আমাদের একটি নির্ধারিত ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। তাতে আমরা যেন প্রস্তুতি নিতে পারি সারা বছরের। দশম দাবি, জুনায়েদ সিদ্দিকী ॥ বিপিএল-প্রিমিয়ার লীগের টাকাটা আমরা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাই। যেমন শেষ প্রিমিয়ার লীগে দশটি দলই তাদের টাকা পরিশোধ করেছে। এখনও আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে ৪০ ভাগ টাকা পাই নাই। একাদশ দাবি, ফরহাদ রেজা ॥ ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের একটি নিয়ম বেঁধে দেয়া আছে যে দুটির বেশি খেলতে পারব না। এখন জাতীয় দলে খেলার বাইরে যে সময়টা আমরা পাই তখন যদি আমরা ফ্রি থাকি তাহলে যেন বাইরে খেলতে যেতে পারি, তাহলে আমাদের খেলাও হবে, অনেককিছু শেখাও হবে।
×