ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতির বিনিময়

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

সংস্কৃতির বিনিময়

শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে রকমারি মেলা, নাট্য উৎসব ও চলচ্চিত্র তারকাদের ঝলমলে সমাবেশ। এসব সাংস্কৃতিক উৎসব-আয়োজনে শুধু বাংলাদেশের শিল্পী-সাহিত্যিক-তারকারাই নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের লেখক-তারকারাও প্রায় নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন। দু’দেশের পারস্পরিক সংস্কৃতির সেতুবন্ধনের নিমিত্ত এটি একটি ভাল ও শুভ উদ্যোগ। গুলশানে সোমবার শুরু হয়েছে হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভ্যাল। এখানে একই ছাদের নিচে মিলছে ঐতিহ্যবাহী তাঁতপণ্য যেমন, জামদানি, মসলিন, বেনারসি, টাঙ্গাইলের শাড়ি, রংপুরের সতরঞ্জি, তেমনি বাঁশ-বেতের কারুপণ্যসহ নানাবিধ হস্তসামগ্রী। অন্যদিকে, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় জমে উঠেছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের উদ্যোগে দশ দিনব্যাপী বাংলা নাট্যোৎসব-২০১৯। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন নাট্যদলের ৩১টি নাটক প্রদর্শিত হবে। অন্যদিকে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে চলছে ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বাংলাদেশ ও ভারতের সুখ্যাত ও প্রখ্যাত তারকাদের আলো ঝলমলে মিলনমেলা। এতে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার তারকারাই। এটি ছিল টিএম ফিল্মস নিবেদিত ‘বাংলাদেশ-ভারত ফিল্ম এ্যাওয়ার্ডস (বিবিএফএ)’-এর প্রথম আসর। এই অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র শিল্পে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগম এবং ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিককে প্রদান করা হয় আজীবন সম্মাননা। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং অনুরূপ সেখানেওÑ এরকম একটি বিতর্ক ও টানাপোড়েন চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। দু’দেশের চলচ্চিত্রের যৌথ প্রযোজনাসহ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এর জন্য একটি সুষ্ঠু ও সমন্বিত নীতিমালা যে অতি জরুরী ও অত্যাবশ্যক সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে দু’দেশের বাণিজ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, অভিনেতা-অভিনেত্রী-কলাকুশলী এমনকি হল মালিকদেরও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। যত তাড়াতাড়ি এটা সম্পন্ন করা যায় ততই মঙ্গল দু’দেশের জন্য। মনে রাখতে হবে, সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও আকাশ-সংস্কৃতিক সুবাদে শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, বরং গোটা বিশ্বই বর্তমানে অবাধ, উন্মুক্ত এমনকি ড্রয়িং রুমে উপস্থিত। সে অবস্থায় নিছক নীতিমালার নিয়ম-নিগড়ে সব কিছু বেঁধে ফেলা যুক্তিসঙ্গত ও সমর্থনযোগ্য নয়। সব কিছুর ওপরে স্থান দিতে হবে দু’দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্ন পূরণের পথ এবং পদ্ধতিকে। মনে রাখতে হবে যে, হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বের বৃহৎ এই অখ- উপমহাদেশের সমাজ-সভ্যতা-নৃতত্ত্ব, ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-কারুশিল্প-চিত্রশিল্প, নাট্যশিল্প, চারুকলা, কারুকলা, হস্তশিল্প, খাদ্যাভ্যাস, লোকাচার, শিষ্টাচারÑ এসবই ছিল, আছে এক ও অভিন্ন এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় এক সূত্রে বাঁধা। একে কোনমতেই বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। সেটি সঙ্গত ও সমর্থনযোগ্য নয় কোন অবস্থাতেই। দু’দেশের সর্বস্তরের মানুষ একই গঙ্গা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে প্রতিনিয়ত অবগাহন করে থাকে। রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দের কাব্যভুবনে আলোড়িত ও আপ্লুত হয়। সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি খান আতাউর রহমান, জহির রায়হান, সুভাষ দত্ত, আলমগীর কবীর প্রমুখের চলচ্চিত্রের ফল্গুধারায়। সংস্কৃতির আদান-প্রদানের বিষয়টিই মূলত ‘আলো দিয়ে আলো জ্বালার’ মতো। সেক্ষেত্রে একই সূর্যের এবং চন্দ্রের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে হবে সবাইকে। দিবে আর নিবের ভিত্তিতে ভরিয়ে তুলতে হবে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গন। আর তাহলেই কেবল সোনালি সূচনা হবে দু’দেশের সংস্কৃতির পারস্পরিক সেতুবন্ধনের।
×