ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

সুশাসন ও সমৃদ্ধির প্রতীক

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

সুশাসন ও সমৃদ্ধির প্রতীক

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার সুযোগ্য তনয়া। ‘কিসের ছাত্রলীগ’?- কঠিন উচ্চারণে আবরার হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, শুধু বাঙালী জাতি নয়; পুরো বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সুশাসন প্রতিষ্ঠার আস্থায় আবার নির্ভার হলেন। দেশের মেধা ও মর্যাদার মানদ-ে অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে আবরার হত্যার মতো নৃশংস ও বর্বরতম ঘটনায় পুরো জাতি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও এই হত্যাকা- নিয়ে নানাবিধ উদ্বেগ জাতি অবলোকন করেছে। আনুমানিক মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাযজ্ঞে জড়িত প্রায় সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সফল নেতৃত্বের এক অভাবনীয় দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর অকুতোভয় নেতৃত্বে যে ছাত্র রাজনীতি মাতৃভাষা আন্দোলন, দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন এবং স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী, এক-এগারো সরকারের বিরুদ্ধে আপোসহীন আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশাল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন অব্যাহত রেখেছে, গুটিকয়েক অনুপ্রবেশকারী-সন্ত্রাসী-ঘৃণ্য অপরাধীর জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের অপতৎপরতার বিরুদ্ধেও নেত্রী তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকা-কে পুঁজি করে প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর দেশ অস্থিতিশীল করার অশুভ কর্মকা- বিষয়েও জনগণকে সচেতন এবং যথার্থ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও অপকর্ম-অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নিজ দল, দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ আপন আত্মীয়স্বজন হলেও কাউকেও ছাড় না দেয়ার ঘোষণায় দেশের সকল সচেতন ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও আকাশচুম্বী প্রশংসায় নেত্রী নতুন করে অভিষিক্ত হয়েছেন। সম্ভাষিত নতুন পালক যেন অবিনাশী মুকুটে সুসজ্জিত করেছে শুধু বাংলাদেশকে নয়, বিশ্বনন্দিত ও বরেণ্য সফল এই রাষ্ট্রনায়ককে। জাতি শুধু বুক ভরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে না, টেকসই স্থিতিশীল উন্নয়ন, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে বিশুদ্ধ অনুপ্রেরণা ও প্রণোদনায় স্পন্দিত হয়েছে। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে, নেত্রীর প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা, মানবিকতা, সৃজনশীলতা, মননশীলতা, অসাম্প্রদায়িকতাসহ অপরিমেয় গুণের সমাহার এক জীবন্ত কিংবদন্তির স্বরূপ উন্মোচন করেছে। ধরিত্রি, সমুদ্র, মানবতা, সততা, নারী নেতৃত্ব-নারী উন্নয়ন-নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল ও সংস্থার শীর্ষ বিশ্বনেতৃত্বের স্বীকৃতি শুধু নেত্রীকে নয়; প্রবোধিত আত্মপ্রত্যয় ও আত্মমর্যাদায় বাঙালী জাতি-রাষ্ট্রের অবস্থানকে বিশ্বপরিম-লে করেছে সুমহান মর্যাদায় সমাসীন। স্বীয় ও রাষ্ট্রের ঈর্ষণীয় খ্যাতিকে সুদৃঢ় করা এবং জনগণের প্রত্যাশিত আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রাখার স্বার্থেই দুরূহ কিছু সিদ্ধান্তের দৃশ্যমান বাস্তবায়ন বস্তুতপক্ষে তাঁর ধীশক্তির বিকাশ ও বিস্তার প্রাগ্র্রসর চিন্তা-চেতনার পরিচায়ক। এর পেছনে রয়েছে ঐতিহ্য-কৃষ্টি-পরিবার এবং সর্বোপরি কার্যকর ক্রিয়াশীল সামাজিকীকরণের পরিক্রমা। বিশ্ব ইতিহাসের মহান নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনা যেন সেই অবিনশ্বর কীর্তিগাথার অবিনাশী শাণিত চেতনার আলোকবর্তিকা। সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’, ‘ভ্যাকসিন হিরো’ (বিশ্ব টিকা শিরোপা) এবং ‘তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে সাফল্য-শিরোপা’ (চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ), রবিঠাকুর স্মারক পুরস্কার অর্জন তাঁর ও দেশের সম্মানকে করেছে অধিকতর উচ্চতর মাত্রিকতায় অত্যুজ্জ্বল। সকলের জানা যে, সহ¯্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বখ্যাত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়নকে লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন। শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-প্রযুক্তি-নারী শিশুসহ সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা-পরিবার ও সমাজকল্যাণ-কর্মসংস্থান-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া উন্নয়নসহ সকল আর্থ-সামাজিক খাতে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি মহিলা উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনা হয়েছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, প্রসূতি সেবা ইত্যাদির ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ প্রদত্ত দুবার ‘সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড’ অর্জন মোটেও সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতিটি সূচক তথা স্থূল জন্মহার (প্রতি হাজারে), স্থূল মৃত্যুহার (প্রতি হাজারে), বিবাহের গড় বয়স, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল (বছরে), শিশু মৃত্যুহার (নবজাতক, এক বছরের নিচে, প্রতি হাজারে), শিশু মৃত্যুহার (৫ বছরের নিচে, প্রতি হাজারে), মাতৃমৃত্যু অনুপাত (প্রতি হাজার জীবিত জন্ম শিশু), গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার (%), উর্বরতার হার (মহিলা প্রতি) ইত্যাদির চিত্র মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত ইতিবাচক। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) ১০টি রোগ বিশেষ করে ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, পোলিও, হাম, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, নিউমোক্কল নিউমোনিয়া ও রুবেলা প্রতিরোধে যুগান্তকারী এবং দৃশ্যমান অর্জন বিশ্বে প্রশংসিত। টিকা গ্রহণকারী শিশুদের হার প্রায় ৮৫- ৯০ শতাংশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এই কর্মসূচীর সফলতার জন্য বাংলাদেশকে ২০১৪ সালে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা এখনও বজায় রয়েছে। ইপিআই কর্মসূচীর আওতায় সকল ধরনের টিকা প্রাপ্তির হার ২০১৮ পর্যন্ত ৯৭.৬। দেশের চলমান পুষ্টি কর্মসূচী এবং অপুষ্টির ঘাটতি ও নিরাময় কৌশল প্রণয়ন স্বাস্থ্য খাতকে করেছে অধিকতর সমৃদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে ‘সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টির’ পদক্ষেপ গ্রহণ যুগোপযোগী। তরুণদের কর্মক্ষমতা ও দক্ষ মানবসম্পদ রূপান্তরে উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে সরকারের সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ যুবশক্তিকে উৎপাদনশীল ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে নিঃসন্দেহে। এই ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি এবং ২০১৮ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ১৫.১২ শতাংশ অতীব উৎসাহব্যঞ্জক। কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত ১১৯টি সরকারী এবং ৮৭৩৩টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ইতোমধ্যেই প্রায় মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের মহাসড়কে বাংলাদেশের পদার্পণ বিশ্বস্বীকৃত। ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের সমমানে দেশকে উন্নীত করার কৌশলপত্র বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির বাংলাদেশকে উন্নয়ন বিশ্বের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মহান কা-ারী হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। ১৪০০ সালকে অবগাহন করার জন্য রবিঠাকুর যেমন ১৩০০ সালে লিখেছিলেন ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি - কৌতূহল ভরে’, একইভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ২১০০ সালে দেশের জন্য বাস্তবসম্মত রূপকল্প উপস্থাপন এবং তার ধারাবাহিক বাস্তবায়নের রোডম্যাপ পরিচালনা করছেন। সেটি আজ কোন স্বপ্ন নয়, সময় ও যুগের দাবির প্রেক্ষিতে সর্বজনীন দূরদর্শিতার প্রজ্বলিত পথপরিক্রমা। ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’ রবিঠাকুরের মানবতাবাদী জীবন দর্শনের এই বিষয়টি ছিল ‘সভ্যতার সঙ্কটে’র অমিয় বাণী। এই সত্যকে ধারণ করে নেত্রী যেমন জনগণের ওপর আস্থা রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, নিঃসন্দেহে দেশবাসীও একইভাবে শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেশ ও জনগণের স্বার্থে তাঁর সকল কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেন- এটিই প্রত্যাশিত। লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×