ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ২ নভেম্বর ২০১৯

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে এক গ্যাসবেলুন বিক্রেতার গাড়িটিকে ঘিরে থাকা শিশুদের মর্মান্তিক পরিণতি সমাজকে বেদনাপ্লুত করেছে। বোমা বিস্ফোরণেই কেবল মানবদেহ এমন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মুহূর্তেই ঝরে গেছে সাত শিশুর তাজা প্রাণ। শহর ও গ্রামের পথে-ঘাটে ছোট্ট একটি ভ্যানে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বেলুনের দৃশ্য প্রায়শই চোখে পড়ে। এসব বেলুন দেখে শিশু-কিশোরদের প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়। গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি সেই ভ্যানের দিকে তারা ছুটে যায়। কিন্তু এই গ্যাস সিলিন্ডার যে কোন সময় ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ। যেমনটা ঘটেছে বুধবার ঢাকার রূপনগরে বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে। আমরা জানি সাধারণত বেলুনে হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করার কথা। এই গ্যাস ব্যবহারে বিপদও কম। কিন্তু আজকাল বেলুন বিক্রেতারা হিলিয়াম গ্যাসের পরিবর্তে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করছেন। তাছাড়া গ্যাস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সিলিন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিলিন্ডারের মান ভাল না থাকায় প্রায়শই সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যে সিলিন্ডারের ভেতরে হাইড্রোজেন গ্যাস থাকে সেখান থেকে যদি গ্যাস নির্গত হয় তাহলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু হিলিয়াম গ্যাস থাকলে বিপদ ততটা থাকে না। মনে রাখা চাই সব ধরনের উচ্চচাপের গ্যাস সিলিন্ডার - হিলিয়াম, এলপিজি, সিএনজি এবং হাইড্রোজেন - সতর্কতার সঙ্গেই ব্যবহার করা উচিত। দেশে সিলিন্ডারের মান ঠিক আছে কিনা সেটি দেখভাল করে বাংলাদেশ বিস্ফোরক পরিদফতর। তাদের কাছে সমাজের প্রত্যাশা আরও সতর্কতা ও সক্রিয়তা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে মিরপুরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের যে চিত্র উঠে এসেছে তা মর্মান্তিক। একটি ভ্যানগাড়িতে করে এক ব্যক্তি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্যাস বেলুন বিক্রি করতেন। বুধবার বিকেলে রূপনগর ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় বস্তির সামনে বেলুন বিক্রি করতে আসেন তিনি। দেখামাত্রই বস্তির শিশুরা তাকে ঘিরে ধরে। হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা ১০-১২ জন প্রায় ১৫ ফুটের মতো ছিটকে পড়ে। বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে চার শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া যায়। পেটে আঘাত পাওয়া আরেক শিশু দৌড়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই সে লুটিয়ে পড়ে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। কি মর্মান্তিক! বাসাবাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বা যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজি সিলিন্ডার তার বড় অংশেরই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এগুলো এখন একেকটা বোমায় পরিণত হয়েছে এবং রাস্তায় চলাচলকারী বহু গাড়িই এ ধরনের এক একটি ‘বোমা’ নিয়েই চলছে। যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে নজর দেয়া দরকার। গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদন, বাজারজাত, বিক্রির সুষ্ঠু নীতিমালা জরুরী। পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে যাচাই-বাছাই ছাড়া বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এসব সিলিন্ডার কোন্্টা কতটুকু নিরাপদ তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কঠোর সরকারী ব্যবস্থাপনায় নিরাপদভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও রক্ষণাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। কয়েকদিন আগে এ্যাম্বুলেন্সের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কয়েকজন হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যে কোন ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটবে। সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও কিভাবে সিলিন্ডার দিয়ে গ্যাস বেলুন বিক্রি হয় এমন প্রশ্ন উঠছে। যেখানেই গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার সেখানেই সতর্কতা ও নজরদারি অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষ এদিকে জরুরীভিত্তিতে নজর দিলে অনভিপ্রেত অপমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। একইভাবে অনুমোদনহীন গ্যাস তৈরিও বন্ধ করা চাই।
×