ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাকিল আহমেদ

পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্য

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৪ নভেম্বর ২০১৯

 পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্য

পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবীতে বাড়ছে পলিথিন বিকল্প ব্যাগের চাহিদা। বর্তমানে প্রতি বছর পৃথিবীতে ৫০০ বিলিয়ন পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর জোরালো আন্দোলনের কারণে অচিরেই সারা পৃথিবীতে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের নতুন উদ্ভাবিত পরিবেশবান্ধব ‘সোনালি ব্যাগ’ বিশ্ববাজার দখল করার মতো বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, লবণ, চিনি, হলুদ, মরিচসহ সকল নিত্যপণ্য বিক্রয়েই ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যাগ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাংলাদেশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির মূল কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পলিথিনের ব্যবহার। সস্তা ও অন্য বিকল্প না থাকায় নানা সরকারী উদ্যোগ সত্ত্বেও পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব ব্যবহৃত পলিথিন সুয়ারেজ পাইপ, ড্রেন, নদী, নালা, খাল, বিলে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া এই পলিথিন ব্যাগ মাটির উর্বরতা শক্তি বিনষ্ট করছে এবং ভরাট করছে নদীর তলদেশ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মতে রাজধানী ঢাকাসহ সরাদেশে প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকা শহরের একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসেবে শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন ২ কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। পাট থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের পলিব্যাগ উৎপাদন করার জন্য অনেক দিন ধরে গবেষণা করে আসছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা। অবশেষে বাংলাদেশ আণবিক কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান উদ্ভাবন করেন পাট থেকে পরিবেশবান্ধব পলিথিন ব্যাগ উৎপাদনের এক নতুন প্রযুক্তি। পাটের সেলুলোজ থেকে পচনশীল পরিবেশবান্ধব পলিথিন ব্যাগ তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করে ইতোমধ্যে তিনি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর ২০ বছরের গবেষণার ফল এই সোনালি ব্যাগ। এর বাইরেও তিনি পাটের সঙ্গে পলিমারের মিশ্রণে ঢেউটিন জুটিন, টয়লেটের সস্ন্যাব, চেয়ার টেবিল, হেলমেটসহ নৈমিত্তিক ব্যবহারের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেছেন। লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে ফেলে দেয়া পাটের অংশ থেকে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে এক হাজারের মতো ব্যাগ। বর্তমানে এক কেজি পলিথিন ব্যাগের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর নতুন উদ্ভাবিত এই প্রতি কেজি পলিথিন ব্যাগের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। এরই মধ্যে দেশের রফতানিমুখী শিল্প মালিকরা এই ব্যাগ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিদেশ থেকে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এই ব্যাগ কেনার চাহিদা আসছে। বর্তমান সরকার কাঁচাপাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটজাত পণ্য রফতানি, আভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাটকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে জুট ডাইঢারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার-এ ২৩৫ প্রকার পণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র চালু করেছে। পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখী করণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারকোল, ভিসকোস, পাটপাতার পানীয়সহ নতুন নতুন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাট থেকে তৈরি এই পলিথিন ব্যাগের নাম দেয়া হয়েছে ‘সোনালি ব্যাগ’। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের পছন্দের দেয়া নাম। সারা বিশ্বে এই নামেই পরিচিত হবে পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব পলিথিনের ব্যাগ। পলিথিন ব্যাগ ছাড়াও পাট থেকে অনেক কিছু উৎপাদন করছে বাংলাদেশ। পাট থেকে বিমানের ইন্টেরিয়র তৈরি হয়। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন পাট থেকে উৎপাদিত পণ্যের সংখ্যা ছিল ৩৫টি। বর্তমানে পাট থেকে উৎপাদিত হচ্ছে ২৮৫টি রকমের পণ্য। এক সময়ের সোনালি আঁশ (গোল্ডেন ফাইবার) নামের পাট ভবিষ্যতে সোনার দন্ড (গোল্ডেন বার) হিসেবে পরিচিত হবে, সেই সময় আর বেশি দূরে নয়।
×