ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্টিফেন ডেভিস ব্যতিক্রমের সন্ধানে

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৭ নভেম্বর ২০১৯

 স্টিফেন ডেভিস ব্যতিক্রমের সন্ধানে

স্টিফেন ডেভিস। একাধারে নাট্যকার, উপন্যাসিক ও প্রযোজক। পুরস্কার বিজয়ী চিত্রনাট্যকার তিনি। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ৩০টির বেশি ছবির একক প্রযোজনা করেছেন। সম্প্রতি এসেছিলেন ঢাকায়। তাঁর এ সফর ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর কসমস ফাউন্ডেশনের চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রকল্পের ফলোআপ। স্টিফেন বিবিসির সেরা প্রাইমটাইম গোয়েন্দা সিরিজ ‘ওয়াকিং দ্য ডেড’ নিয়ে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক এ্যামি এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। যা আমি মনে করি ২০০০-২০১০ এর দশকে ব্রিটেনের আমার অবস্থানকালে, যতটুকু আমার মনে পড়ে, সম্ভবত সবচেয়ে প্রশংসিত টেলিভিশন অনুষ্ঠান। সেই তিনি বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করবেন! আর এটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য তৈরি প্রথম চলচ্চিত্র হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে, এ প্রকল্পটি গ্রহণের আগে খুব কম জানা একটি দেশ সম্পর্কে স্টিফেন যথাসম্ভব বাংলাদেশকে জানার ও অনুভব করার চেষ্টা করেছেন। তার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে বেড়াতে গিয়ে ভাল কিছু আনন্দময় সময় কাটিয়েছিলাম। এর আগে তার হোটেল কক্ষে রাগবি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ইংলিশদের সহজ জয়টি দেখে শেষ করেছিলাম। স্টিফেনের চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ১৯৯২ সালের চলচ্চিত্র ‘রুবি’, যা ছিল জ্যাক রুবি সম্পর্কে, ‘দি ডালাস’, টেক্সাসের নৈশক্লাবের মালিক যিনি ১৯৬৩ সালে ডালাস সিটি থানার নিচতলার গ্যারেজে লি হার্ভে ওসওয়াল্ডকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। ওসওয়াল্ড অবশ্যই, এর মাত্র দুটি দিন আগে, ২২ নবেম্বর বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে কুখ্যাত হত্যাকাণ্ড : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এলএ টাইমস আর্কাইভের পর্যালোচনা অনুযায়ী, স্টিফেন তার নিজের নাটক থেকে পান্ডুলিপি করা ‘লাভ ফিল্ড’ এবং জন ম্যাকেনজি পরিচালিত ছবিটিতে রুবি ওসওয়াল্ডকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে একজন বিক্ষুব্ধ দেশপ্রেমিকের কাজ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। এটি অনেক ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের বিশ্বাস করানো যাবে না যে ‘ওসওয়াল্ডকে’ মেরে ফেলার জন্য রুবিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। জন এফ কেনেডিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল বা এর পেছনে কে ছিল তা জানার জন্য অলিবার স্টোনের জেএফকে, যাতে এক প্রজন্মের ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের অনুসন্ধানের বিকল্প পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল, মুক্তির তিন মাস মাস পরে আমেরিকাতে ‘রুবি’ চলচিত্রটিকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ২৭ মার্চের এলএ টাইমসের মতে, সেই দিনগুলোতে হঠাৎ করেই একটি আলোচিত প্রসঙ্গ ছিল জেএফকে। রুবি বিষয়টি জেএফকে ছিল না এটি ছিল জ্যাক রুবি। এবং আমি স্টিফেনের কাছ থেকে বহিরাগত আগন্তুক রুবি, যার আসল নাম জ্যাক রুবিনস্টাইন যাকে কেন্দ্রে করে তার গল্পটির আকর্ষণ তৈরি করেছেন, সম্পর্কে জানার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। এর শুরু হয়েছিল যখন ‘আমি খুব আকর্ষণীয় একটা লাইব্রেরিতে ধুলা জমা ওয়ারেন কমিশনের এগারো খণ্ডের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছিলাম। ওই লাইব্রেরিতে আমিই সম্ভবত প্রথম লোক যে এ রিপোর্টটি খুলে ছিলাম। সুতরাং আমি এর সমস্ত বিচার-বিশ্লেষণ (জেএফকে হত্যার তদন্তের জন্য ওয়ারেন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল) পড়ে শেষ করেছিলাম। এবং এ প্রতিবেদনের মধ্যে আমি জ্যাক রুবির একটি সাক্ষাতকার পেয়েছিলাম।’ স্টিফেন বলে চলেন। এর মধ্যে দিয়ে রুবি চলচ্চিত্রকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার প্রচেষ্টা শুরু, যা একজন নাট্যকারের মন কীভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে কিছুটা অন্তর্দৃষ্টি দেয়। এ লিখিত অনুলিপিতে, ডালাস কারাগারের ঘর থেকে রুবির কথা বলার সময়টাকে আক্ষরিকভাবে তুলে ধরা হয়েছিল এবং আমি তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, এই কণ্ঠস্বর যা এই সমস্ত বিবরণ থেকে আসা এবং সে ভয় পেয়ে যায়। সেখানে একটি লাইন ছিল এমন, আমি হুবহু কথাগুলো স্মরণ করতে পারছি না, তবে তিনি এমন কিছু বলেছেন যা কাজে আসে, তবে এ রকম ঘটনা সব সময়ই ঘটে না। এবং তিনি এফবিআই জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কাছে আবেদন জানালেন যাতে তাকে টেক্সাস থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যায় যেখানে সে কথা বলতে পারবে। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলা হবে এমন ভয়ের মধ্যে থাকেন তিনি। সে কী কী ভেতরে চেপে রেখেছিল, আরও কী কী জানতেন তা আমাকে অবাক করে দিয়েছিল। এরপরে, এ বিষয়টি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল, যে সে এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তবে কখনই বুঝতে পারেননি বিষয়টি কি ছিল? এটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
×